১৭০ তাড়া করতে নেমে ৪৯ বলে ৫৫ করতে পারেন না—রিজওয়ানকে ভোগলে–মাঞ্জরেকার
এশিয়া কাপ ফাইনাল। জয়ের জন্য ১৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছে পাকিস্তান। ১৫.৫তম ওভারে এসে নিজের ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। সে ছক্কায় রিজওয়ান ফিফটি পেয়েছেন, কিন্তু তাঁর দলের তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।
টি-টোয়েন্টিতে ওভারপ্রতি ৮.৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে একজন ওপেনার যখন ৫০ করতে ৪৭ বল নেন, ১৬তম ওভারে গিয়ে ছক্কা মারেন, তাঁর দলের জন্য সেটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে না।
ফিফটি করার পরের বলেই ডাউন দ্য উইকেট গিয়ে মারার চেস্টা করেন রিজওয়ান। ১ রান পান। পরের বলেই আবারও চালাতে গিয়ে আউট। তখন অবশ্য চালিয়ে খেলার ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। জয়ের জন্য শেষ ২৪ বলে ৬১ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। হাতে ৬ উইকেট এবং ড্রেসিংরুমে তখন খুশদিল ও আসিফ আলীর মতো ব্যাটসম্যানরা। অথচ তৃতীয় উইকেটে ৭১ রানের জুটি গড়তে ইফতিখার আহমেদ ও রিজওয়ান মিলে খেলেন ৫৯ বল।
একটা দৃষ্টিকোণ থেকে এই জুটিটাকে খারাপ বলা যাবে না। ৩.৩ ওভারে পাকিস্তান ২২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর পাকিস্তানকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছেন রিজওয়ান–ইফতিখার মিলে। কিন্তু দুজন এত সময় ধরে উইকেটে থিতু হয়েছেন বলেই তাঁদের দায়িত্বও বেশি ছিল। রিজওয়ান ও ইফতিখার আরেকটু চালিয়ে খেললে হয়তো শেষ ৪ ওভারে গড়ে ১৫.২৫ রান তোলার কঠিন সমীকরণের সামনে পড়তে হতো না পাকিস্তানকে। বিশেষ করে রিজওয়ান যেহেতু ইনিংসের প্রথম থেকেই উইকেটে, তাঁর ১১২.২৪ স্ট্রাইক রেটের (৪৯ বলে ৫৫) ইনিংসটি ১৭১ রান তাড়ার মেজাজের সঙ্গে যায় না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের ধারাভাষ্যকার হর্শা ভোগলে এ নিয়ে টুইট করেছেন, ‘হ্যাঁ, পাকিস্তানের মিডল অর্ডারে সমস্যা আছে। তবে সমস্যা আরও আছে—১৭০ রান তাড়া করতে নেমে আপনি ৪৯ বলে ৫৫ করতে পারেন না।’
মাত্র ৪টি চার ও ১ ছক্কায় সাজানো রিজওয়ানের ইনিংস। নবম ওভারে নিজের চতুর্থ চারটি মারার পর ১৫.৫ ওভারের আগপর্যন্ত রিজওয়ান কোনো চার–ছক্কা মারেননি! এ সময়ের মধ্যে উইকেট পড়েছে মাত্র ২টি। এমন আহামরি কোনো চাপ নয়, আর ফাইনালে রান তাড়া করে জিততে একটু সাহস তো লাগেই। রিজওয়ান সেই সাহসটুকুই দেখাতে পারেননি বলে মনে করা হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁকে স্বার্থপরও বলছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম কাল এশিয়া কাপের ফাইনালে ধারাভাষ্য দেন। পাকিস্তানের ওপেনিং জুটির একটি সমস্যা চিহ্নিত করে স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেন। বাবর ও রিজওয়ানের মধ্যে কেউ–ই আন্দ্রে রাসেলের মতো হার্ড হিটার নন। বড় লক্ষ্য তাড়া করার ম্যাচে এমন ওপেনিং জুটি সমস্যায় পড়তে পারে, এমন ভাবনার কথা আগেই বলেছিলেন ওয়াসিম আকরাম। সে কথাই টেনে টিভি চ্যানেলটিকে বলেছেন, ‘টুর্নামেন্টের শুরুতে বলেছিলাম, ওপেনাররা খারাপ করবে না, তবে এমন ম্যাচে সমস্যা হতে পারে এবং সেটাই হয়েছে।’
ওয়াসিম আকরামের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলেন, ‘ভারতের খেলার ধারাটা পছন্দ হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কারও কেউ এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করেনি। শুধু একজনকে দোষারোপ করা অন্যায্য, তবে রিজওয়ান পাকিস্তানের জন্য উদাহরণ। ১৭০ রান তাড়া করতে নেমে ১৬তম ওভারে গিয়ে রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট কোনোভাবেই ১০৪ হতে পারে না।’
ওয়াসিম সঙ্গে যোগ করেন, ‘সে (রিজওয়ান) হংকংয়ের বিপক্ষেও একই কাজ করেছে। তখন সমালোচনা করেছিলাম, যেটা গঠনমূলক ছিল। কিন্তু লোকে আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণ করেছে। আমি রিজওয়ানকে সমর্থন দিচ্ছি না, এমন কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে কেউ পরামর্শ চাইলে, সোজাসাপটা সঠিক কথাটাই বলব। চোখের সামনে যা ঘটছে, তা মিথ্যা করে বলার লোক আমি নই। আমার কাছে কালো কালোই, সাদা সাদাই।’