টেন্ডুলকারও রুটের পেছনে পড়ে যাবেন, মনে করেন কুক

সেঞ্চুরির পর রুটের উদ্‌যাপনএএফপি

অ্যালিস্টার কুক পেছনে পড়ে যাবেন, এ নিয়ে খুব একটা সন্দেহ ছিল না। কুক নিজেও জানতেন, যেকোনো দিন জো রুট তাঁকে সরিয়ে ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়ে যাবেন। সেই দিনটা যে আজই হতে পারে, এটাও বোঝা যাচ্ছিল আগের দিনই।

কুকের চেয়ে ৭০ রান পেছনে থেকে এই টেস্ট শুরু করেছিলেন রুট। গতকাল বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩২ রান করে রেখেছিলেন। তারপর মুলতানে দিনের ২২ নম্বর ওভারে আমের জামালের ফুল লেংথের বলে দারুণ এক ড্রাইভ করে রুট গড়লেন নতুন ইতিহাস। ১২৪৭২ রান নিয়ে ২০১৮ সালে অবসরে যাওয়া কুক পেছনে পড়ে গেলেন।

আরও পড়ুন

রুট থামেননি এখনো। ৬৭ রান থাকা অবস্থায় চার মেরে কুককে পেরোনো রুট দিন শেষে অপরাজিত ১৭৬ রানে। আরও একটা সেঞ্চুরি! টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ৩৫তম। আজ হয়ে যেতে পারে ছয় নম্বর ডাবল সেঞ্চুরিও।

সুনীল গাভাস্কার, ব্রায়ান লারা, ইউনিস খান, মাহেলা জয়াবর্ধনেরা এত দিন তাঁর পাশে ছিলেন সেঞ্চুরির তালিকায়। এখন পেছনে। সামনে শুধু পাঁচজন—শচীন টেন্ডুলকার (৫১), জ্যাক ক্যালিস (৪৫), রিকি পন্টিং (৪১), কুমার সাঙ্গাকারা (৩৮) ও রাহুল দ্রাবিড় (৩৬)।

সর্বশেষ ৪ বছরে ১৮টি সেঞ্চুরি রুটের! এই ফর্ম থাকলে দ্রাবিড়–সাঙ্গাকারারা তো পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন টেস্টের এই সিরিজেই পেছনে পড়ে যেতে পারেন। পন্টিং-ক্যালিসরাও কি খুব বেশি নিরাপদ? পরের ৪ বছরে যদি আরও ১৫-১৬টি সেঞ্চুরি হয় রুটের, তাহলে তো টেন্ডুলকারও নন।

২৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন জো রুট (বাঁয়ে) ও হ্যারি ব্রুক। আজ মুলতানে
রয়টার্স

এ তো গেল সেঞ্চুরির কথা। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছেন রুট, তাতে সেখানেও টেন্ডুলকারের (১৫৯২১ রান) শীর্ষস্থানটা কি হুমকির মুখে নয়? আপাতত রুট (১২৫৭৮) আর টেন্ডুলকারের মাঝে আছেন দ্রাবিড় (১৩২৮৮), ক্যালিস (১৩২৮৯) ও পন্টিং (১৩৩৭৮)।

চলতি বছর এরই মধ্যে ১১০৫ রান হয়ে গেছে রুটের। গত বছর করেছিলেন ৭৮৭। ২০২২ সালে ১০৯৮, ২০২১ সালে ১৭০৮। ৩৫ সেঞ্চুরির ১৮টি এসেছে ২০২১ সালের পর। ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় যেখানে ৫১.৩৩, গত চার বছরে তা ৫৭.৯৮। মানে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ব্যাটের ধার বাড়ছে। এই ধারাবাহিকতা আর ফর্ম থাকলে দ্রাবিড়-ক্যালিস-পন্টিংরা বছরখানেকের মধ্যেই রুটের পেছনে পড়ে যাওয়ার কথা। তারপর এখানেও সামনে থাকবেন শুধু টেন্ডুলকার।

চলতি বছর এরই মধ্যে ১১০৫ রান হয়ে গেছে রুটের। গত বছর করেছিলেন ৭৮৭। ২০২২ সালে ১০৯৮, ২০২১ সালে ১৭০৮।

রান সংখ্যায় ভারতীয় কিংবদন্তিকে টপকে যেতে ইংলিশ ব্যাটসম্যানের দরকার আরও ৩৩৪৪, সেঞ্চুরি করতে হবে আরও ১৭টি। টেন্ডুলকার তাঁর শেষ টেস্ট খেলেছেন ৪০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর। রুটের বয়স এখন ৩৩ বছর ৯ মাস। টেন্ডুলকারের মতো ৪০ বছর পর্যন্ত খেলে গেলে অনায়াসেই টেন্ডুলকারের বিশ্ব রেকর্ড দুটি রুটের নিজের করে নেওয়ার কথা। চোটের কবলে না পড়ে এমন ফর্মের তুঙ্গে থাকলে আরও আগেই (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫–২৭ চক্রেই) তা হয়ে যেতে পারে।

টেস্ট ক্রিকেটের সিংহাসন থেকে টেন্ডুলকারকে সরানো কি রুটের পক্ষে তাহলে আসলেই সম্ভব? উত্তরটা দিয়েছেন রুটের কাছে গতকাল ইংল্যান্ডের সিংহাসন হারানো কুকই। বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে বলেছেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, রুট টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমি যখন অবসর নিই, জানতাম, আমার রেকর্ড ভেঙে যাবে। আমার মনে হয়েছিল, শুধু অধিনায়কত্বের বাড়তি চাপ এবং আরও বড় কিছু করার তাড়না কমে যাওয়াই শুধু রুটকে থামতে পারে। বেন স্টোকস অধিনায়কের দায়িত্বটা নিয়ে রুটের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে।’

মুলতানে অপরাজিত ১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে শট খেলছেন রুট
রয়টার্স

এরপর আরও বিস্তারিত বলেছেন কুক, ‘আপনি বলতে পারেন যে শচীনই এখনো ফেবারিট, কিন্তু সেটা খুব সামান্য ব্যবধানে। চোটের ক্ষেত্রে রুট খুব ভাগ্যবান। বড় খেলোয়াড় যারা দীর্ঘদিন ধরে খেলেছে, সবাইকেই চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। শুধু এ রকম কিছুই এখন রুটকে থামিয়ে দিতে পারে। রুটের নিজেকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়ার তাড়না আরও কয়েক বছরের মধ্যে কমে যাবে বলে আমার মনে হয় না।’

আরও পড়ুন

এটা অবশ্য শুধু কুকের কথা নয়। কিছুদিন আগে ঠিক এ রকমই বলেছিলেন রুটের সামনে থাকা আরেক কিংবদন্তি পন্টিং, পূর্বসূরি মাইকেল ভন, শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারাসহ আরও অনেকে। রুট কি পারবেন এঁদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণ করতে?