আকিবের চোখে বাংলাদেশ যেখানে ছিল ভারতের ঠিক পরই
আকিব জাভেদ যে দৃষ্টিতে বাংলাদেশকে দেখেছেন, সেই দৃষ্টিতে কি আপনি দেখেছেন? দেখে না থাকলে পাকিস্তান দলের কোচের কথা শুনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে হতাশা আরেকটু বাড়তে পারে। আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশ দল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আকিব জাভেদ বললেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একটা জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ভারতের ঠিক পরই।
কোন দিক দিয়ে, সেটাও বলেছেন আকিব—অভিজ্ঞতা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সেই অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্সে অনূদিত হয়নি। তিন ম্যাচের একটি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে, আর দুটিতেই হেরে সেমিফাইনালের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আকিব বলেছেন ওই কথাটা, ‘আমার মনে হয় ভারতের পর তারাই ছিল সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল। কিন্তু যে রকম পারফর্ম করা উচিত ছিল, সেটা তারা পারেনি। কারণ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অনেক কঠিন একটা টুর্নামেন্ট। হারানোর জন্য এখানে দ্বিতীয় সারির কোনো দল নেই। কাউকে হারাতে হলে সেটা আপনার সমকক্ষ দলই হবে, অথবা আপনার চেয়ে ভালো। সে জন্যই এটাকে বলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তিনটি সুযোগের দুটিতেই হেরে গেলে আপনি শেষ।’
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে আকিব এসেছিলেন আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের পাকিস্তান দল ঘোষণা করতে। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্য তাঁর এই সংবাদ সম্মেলনটি হয়ে গেল ‘ফাও।’ অনেকটা ঈদ বাজারে দুটি কিনলে একটি ফ্রির মতো। দুপুরে কালকের সেমিফাইনাল নিয়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের সংবাদ সম্মেলন ছিল গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে। সন্ধ্যায় হবে দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদ সম্মেলন। মাঝে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের তিন ওয়ানডে ও পাঁচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা করতে এলেন পাকিস্তান দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ও নির্বাচক কমিটির সদস্য আকিব জাভেদ।
স্যান্টনারের সংবাদ সম্মেলনের তুলনায় আকিবেরটিতেই সাংবাদিকদের ভিড় হলো বেশি। মাত্রই ব্যর্থ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ করেছে পাকিস্তান দল। ১৬ মার্চ থেকে শুরু হবে নিউজিল্যান্ড সফর। সেই সফরের দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান কোচের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার থাকবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের, সেটাই স্বাভাবিক। আকিব আবার সংবাদ সম্মেলনে সঙ্গে নিয়ে এলেন ক্রিকেটার সালমান আলী আগাকে। রহস্য করে বললেন, তাঁকে নিয়েও নাকি একটা ঘোষণা আছে।
সেই রহস্য বেশিক্ষণ লুকিয়ে রাখেননি পাকিস্তানের সাবেক পেস বোলার আকিব। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বলে দিলেন, ওয়ানডেতে মোহাম্মদ রিজওয়ানই অধিনায়ক থাকছেন, তবে টি-টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দেবেন নতুন অধিনায়ক সালমান।
সহ-অধিনায়ক শাদাব খান। এরপর দল ঘোষণা করলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের, যেখানে অদলবদল অনেক। নতুন নেতৃত্বে নতুন এক টি-টোয়েন্টি দলই ঘোষণা করেছেন আকিব জাভেদ, যে দলে নেই রিজওয়ান, বাবর আজমদের মতো ক্রিকেটারও। তারুণ্যনির্ভর নতুন টি-টোয়েন্টি দল গড়ার পেছনে আকিবের ব্যাখ্যা, আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও সামনে এশিয়া কাপও হবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। সেদিকে চোখ রেখেই তাঁদের এমন চিন্তা। টি-টোয়েন্টিতে তাঁরা চান আক্রমণাত্মক নির্ভীক ক্রিকেট। ওয়ানডে দলে শাহীন শাহ আফ্রিদির না থাকার ব্যাখ্যায় কোচ-নির্বাচক সরাসরি বলেছেন, দলে কার কী কার্যকারিতা, সেটা দেখেই খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়েছে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের ব্যর্থতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আগেও কথা বলেছেন আকিব, আজ সেটি তাই এলো সম্পূরক প্রসঙ্গ হিসেবে। মাত্রই চার মাস আগে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব নেওয়া আকিব ব্যর্থতার দায় নিলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত আড়াই বছরে পাকিস্তানের ক্রিকেট ১৬ জন কোচ আর ২৬ জন নির্বাচক দেখেছে। এই জায়গায় যেমন তিনি ধারাবাহিকতা চান, ধারাবাহিকতা চান ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সেও। দুবাই ও পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উইকেটে ফাস্ট বোলারদের কাছে রিভার্স সুইং আশা করেছিলেন তিনি। সেভাবে একাদশও গড়া হয়েছে। কিন্তু ফাস্ট বোলারদের কাছ থেকে সেটা নাকি পাননি আকিব।
নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সালমান দায়িত্বটাকে সম্মান হিসেবেই নিচ্ছেন। বলেছেন, ‘আমি খুবই রোমাঞ্চিত। এটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ হবে। আমার জন্য এটা সম্মানের।’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির হতাশা কাটিয়ে এখন ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার অপেক্ষায় সালমান। দুবাই-লাহোরে যারা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলছে, তাদেরও জানিয়েছেন শুভকামনা।