চাচা ‘উদীয়মান’দের দলে শ্রীলঙ্কায়, ভাতিজারা জাতীয় দলে বাংলাদেশে
আজ সিলেটে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এর আগে গতকাল শ্রীলঙ্কায় ওমানের বিপক্ষে ইমার্জিং এশিয়া কাপের ম্যাচে খেলছে আফগানিস্তানের আরেকটি দল। তবে দুই সিরিজেই বাড়তি নজর থাকার কথা আফগানিস্তানের একটি পরিবারের। শ্রীলঙ্কায় আফগানিস্তানের দলটিতে খেলছেন নুর আলী জাদরান, বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে আছেন তাঁর দুই ভাতিজা—ইব্রাহিম জাদরান ও মুজিব উর রেহমান।
৩৫ বছর বয়সী নুর আফগানিস্তানের হয়ে খেলেছেন ৭১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ডে। নুরের মতো কেউ একজন কেন উদীয়মান নামের দলে খেলছেন, তা এক প্রশ্ন বটে। তবে ইমার্জিং বা ‘উদীয়মান’দের টুর্নামেন্ট হলেও এখানে খেলছে ‘এ’ দল। ফলে বয়সের বাধা সেভাবে নেই। বাংলাদেশের দলটিতেও যেমন আছেন সৌম্য সরকারের মতো খেলোয়াড়।
আফগানিস্তানের ‘এ’ দলকে বলা হয় ‘আব্দাল্যান’। ইমার্জিং কাপে খেলা দলটির নেতৃত্বে আছেন ২৪ বছর বয়সী শহীদুল্লাহ কামাল। জাতীয় দলের হয়ে তিনি খেলেছেন একটি করে টেস্ট ও ওয়ানডে। ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলে নুরকে কেন খেলানো হচ্ছে, দল ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেটি নিয়ে অবশ্য কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া নেই।
আফগানিস্তান ক্রিকেটে নুরের অবদান অবশ্য জাতীয় দলের হয়ে খেলা ৭১ ম্যাচের চেয়েও বড়। আফগান ক্রিকেটের শুরুর দিকের সেনানী তিনি। আফগানদের একটি প্রজন্ম যেমন ছিল, নুরও ছিলেন সেটিরই সদস্য—পাকিস্তানে জন্ম, সেখানকার শরণার্থীশিবিরেই ক্রিকেটটা শিখেছিলেন। এরপর সেই ক্রিকেট-জ্বর বয়ে নেন নিজ দেশে। যুধ্ববিধ্বস্ত দেশটির ক্রিকেটকে আজকের পর্যায়ে আনতে নুরদের অবদান স্বাভাবিকভাবেই বিশাল।
নুরের প্রত্যক্ষ অবদান আছে মুজিব ও ইব্রাহিমের ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও। যৌথ পরিবারে জাদরানদের বিশাল জায়গা আছে, সেখানে ঘরবাড়ি ছাড়াও আছে নুরের একাডেমি। ২০১০ সালে নুর যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের হয়ে খেলছিলেন, মুজিবের বয়স ছিল ৯। চাচাকে অমন মঞ্চে খেলতে দেখেই ক্রিকেট খেলা শুরু মুজিবের। মুজিব প্রথম ক্রিকেট বলে বোলিং করেছিলেন সে একাডেমির নেটেই।
শুরুতে রাস্তাঘাটে টেপ টেনিস বল দিয়ে খেলতেন মুজিব। ক্যারম বল করাও শেখেন সেখানেই। তবে টেনিস বলে ক্যারম বল করা এক ব্যাপার, শক্ত ক্রিকেট বলে আরেক ব্যাপার। মুজিব অবশ্য দমেননি। সেভাবে কেউ কোচ না থাকলেও ইন্টারনেট ছিল। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, সুনীল নারাইন, অজন্তা মেন্ডিসদের ভিডিও ডাউনলোড করে দেখা শুরু করেন মুজিব। ফোনে একটি অ্যাপ নামান, যাতে ভিডিওগুলো স্লো মোশনে দেখা যায়। যতক্ষণ না আঙুল ব্যথা হয়ে যেত, অনুশীলন করে যেতেন।
অবশ্য নেটে চাচা নুর, চাচাতো ভাই ইব্রাহিমকেও ব্যাটসম্যান হিসেবে সহায়তার জন্য পেতেন মুজিব। নুরের পরামর্শেই মুজিব তাঁর রানআপ বাড়ান। আরেক আত্মীয়কে গুগলি করতে দেখে চাচার পরামর্শে শুরু করেন সে ডেলিভারির অনুশীলনও। মুজিবের বোলিংয়ের এখন অন্যতম শক্তি ওই দুই ডেলিভারি—ক্যারম বল ও গুগলি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও মুজিব আলো ছড়িয়েছেন। আর স্মরণীয় সিরিজ জয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন ইব্রাহিম। ১৪ ওয়ানডের ক্যারিয়ারেই চারটি সেঞ্চুরি হয়ে গেছে ইব্রাহিমের। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষেই টেস্ট অভিষেক, আফগানদের ঐতিহাসিক জয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন। এবার একমাত্র টেস্টে ব্যর্থ হলেও ওয়ানডেতে ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন সেটি। অপেক্ষা এখন টি-টোয়েন্টির।
মুজিবের মতো ইব্রাহিমের ক্যারিয়ারেও প্রত্যক্ষ অবদান আছে চাচা নুরের। ২০২০ সালে ক্রিকইনফো সম্ভাবনাময় উদীয়মনাদের এক তালিকা করেছিল। সেখানে তাঁর ক্রিকেটীয় নায়ক প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বলেছিলেন, ‘আমার চাচা নুর আলী জাদরান। যদি তিনি না থাকতেন, তাহলে এত দূর আসতে পারতাম না।’
হয়তো ‘স্বাভাবিক’ নিয়মে নুরেরই থাকার কথা ছিল জাতীয় দলে, মুজিব-ইব্রাহিমরা থাকতে পারতেন শ্রীলঙ্কায় ইমার্জিং এশিয়া কাপে। তবে ইব্রাহিম ও মুজিব ইমার্জিং দলের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে গেছেন অনেকটাই। ভাতিজাদের এমন অর্জনে নিশ্চয়ই গর্ব করেন নুর। শ্রীলঙ্কায় ইমার্জিং কাপে খেললেও বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের সিরিজেও হয়তো নজর রাখছেন তিনি।