নাজমুলের সেরাটা এখনো দেখতে বাকি
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে গ্রানাইট স্ল্যাবে বেশ আয়োজন করে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন নাজমুল হোসেন। সঙ্গে কোচ সোহেল ইসলাম। অনুশীলনে লাল বল দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, নাজমুলের প্রস্তুতিটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের জন্য। খেলাটা যখন টেস্ট ক্রিকেট, তখন নাজমুলের সাম্প্রতিক রেকর্ড তেমন সুখকর নয়। সর্বশেষ ২০ ইনিংসে ফিফটি মাত্র একটি।
সাদা বলের ক্রিকেটে চিত্রটা ভিন্ন। যেখানে নাজমুলের প্রতিশ্রুতি এত দিনে পারফরম্যান্সের ফুল হয়ে ফুটছে। গত অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁর। বাকি ছিল ওয়ানডে সংস্করণ। গত মার্চে ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে তাতেও যেন পুনর্জন্ম হয়েছে নাজমুলের। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ড সিরিজে তো পেয়ে গেছেন প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে নিশ্চয়ই সাদা বলের এই আত্মবিশ্বাসটা কাজে দেবে।
এই আত্মবিশ্বাসটা যেন অতি আত্মবিশ্বাসে পরিণত না হয়, নাজমুলকে এ ব্যাপারে বেশ সচেতন মনে হলো। কাল অনুশীলন শেষে বললেন সেটাই, ‘ভালো খেলতে থাকলে নিজের মধ্যে কনফিডেন্স চলে আসে। তবে আমি ওভার কনফিডেন্ট না। আমি স্বাভাবিকই আছি। ভালো খেলার সময়টাকে যত বেশি লম্বা করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’
বছরটা যেহেতু ওয়ানডে বিশ্বকাপের, ৫০ ওভারের পারফরম্যান্সই এখন বেশি আলোচিত হচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়ানডেতে নিয়মিত রান পেলেও নাজমুলের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো হয়নি। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৫ ইনিংসে মাত্র ১৪ গড়ে ২১০ রান। যেখানে এ বছর খেলা ৮ ইনিংসে রান ৫০.৬২ গড়ে ৪৫৬, ক্যারিয়ারের তিনটি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি এসেছে এ বছরই।
নাজমুল অবশ্য এতেও সন্তুষ্ট নন। কারণটা শুনুন তাঁর মুখেই, ‘সত্যি বলতে আমি ওয়ানডেতে এর চেয়েও ভালো খেলতে পারি। এটা আমার বিশ্বাস। তবে আগের থেকে এখন ভালো হচ্ছে। এটা ধরে রাখতে পারলে নিজের জন্য ভালো হবে, দলের জন্যও। যে ইনিংসগুলো ৩০-৪০-এ থামছে, সেগুলোকে কীভাবে বড় করতে পারি, এটা নিয়েই কাজ করছি।’
সাম্প্রতিক সময়ে নাজমুলের রানও আসছে দ্রুতগতিতে। এ বছর স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯০। তবে নাজমুল চান স্ট্রাইক রেটের ধারাবাহিকতা, ‘উইকেট ভালো থাকলে স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর চেষ্টা করি। আমি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৩৫ করে আউট হয়েছি। কিন্তু রানটা এসেছে দ্রুত (৩২ বলে)। আমার মনে হয়েছে সেই উইকেটে ওই স্ট্রাইক রেটেই খেলা উচিত। আমার লক্ষ্য ওই স্ট্রাইক রেটেই কীভাবে বড় ইনিংস খেলা যায়। আমার মনে হয় অনুশীলনের মাধ্যমে সেটা অর্জন করা সম্ভব।’
ধারাবাহিক হয়ে ওঠা নাজমুলকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন এসেছে। যে নাজমুলকে নিয়ে এত দিন ট্রল হতো, তাঁকে নিয়েই এখন অনেক প্রশস্তি। এই পরিবর্তনটা ধরতে পেরেছেন নাজমুলও, ‘এটাই তো স্বাভাবিক, তা-ই না? খারাপ খেললে সমালোচনা হবে, ভালো খেললে সবাই ভালো বলবে। এখন আমাকে নিয়ে যে ভাবনার বদল হচ্ছে, সেটা আমি ভালো খেলার কারণেই হয়েছে।’
তবে নাজমুল প্রশংসায় স্রোতে গা ভাসাতে চান না, ‘টুকটাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি। একেবারেই যে করি না, সেটা বলব না। তবে এসবে আমি যে খুব বেশি প্রভাবিত হই, এমন না। আস্তে আস্তে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছি।’
নাজমুলের ফর্মে ফেরাটা নির্বাচকদের জন্যও সুখবর। নাজমুলের খারাপ সময়ে তাঁকে একের পর এক সুযোগ দেওয়া নিয়ে নির্বাচকদেরও কম কথা শুনতে হয়নি। এত দিনে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে ভালো খেলে নাজমুল সেই আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন।
এবার এই নাজমুলকে টেস্ট ক্রিকেটেও দেখতে চান নির্বাচক হাবিবুল বাশার, ‘ওর কিন্তু টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি আছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তাকে টেস্টের জন্যই দলে নিয়েছিলাম। আশা করি, সাদা বলে রান করার অভ্যাসটা তাকে টেস্টে ভালো করতে সাহায্য করবে।’ হাবিবুল একটা দুশ্চিন্তার কথাও বলেছেন, ‘সে অনেক দিন লাল বলে ম্যাচ খেলে না। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।’
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস হয়তো সে চ্যালেঞ্জটাকে উতরে যেতে সাহায্য করবে।