‘ইশ্! আরেকটু ভালো বোলিং করলেই…’—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর জাতীয় দলের এক পেসারের আফসোস। আরেকজন বলছিলেন, ‘ব্যাটিংটা আরেকটু ভালো হলে জাকেরদের জন্য সহজ হতো।’
তবে ক্রিকেটার যেহেতু, অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকার সুযোগ কমই। এক দিনের বিশ্রামের পর আজই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি শুরু হবে। প্রথম ম্যাচে ৩ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০–তে এগিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার আরও একটি জয় মানেই সিরিজ তাদের। অন্যদিকে বাংলাদেশের সিরিজে টিকে থাকতে হলে আজ জিততেই হবে। মুঠোফোনে জাতীয় দলের ওই পেসারের কথায় সে দৃঢ়চেতা মনোভাবটাই টের পাওয়া গেল, ‘পরের ম্যাচে ইনশা আল্লাহ ভালো করতেই হবে।’
দলটা শ্রীলঙ্কা বলেই কি না, বাংলাদেশ দলের মধ্যে একটা ‘হারা যাবে না’ মনোভাব আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া মানেই অন্য রকম এক দ্বৈরথ। ক্রিকেট মাঠে যে দ্বৈরথকে জিইয়ে রাখছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরাই। ভারত বিশ্বকাপে লঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ‘টাইমড আউট’ করার জেরে যেমন এই সিরিজে সুযোগ পেলেই দুই দলের খেলোয়াড়েরা একে অন্যকে সেই আলোচিত মুহূর্ত মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
কখনো কখনো দর্শকেরাও যোগ দিচ্ছেন তাতে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ম্যাথুসকে বাউন্ডারির সীমানায় ফিল্ডিং করতে দেখে দর্শকদের একাংশ যেমন ‘সাকিব!’ ‘সাকিব!’ চিৎকার দিতে থাকেন। একটু পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন পুল শট খেলে ক্যাচ আউট হন সেই ম্যাথুসের হাতেই। ক্যাচটি নিয়ে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে তিনি ‘টাইমড আউটে’র ভঙ্গি করে তাঁদের চুপ করতে বলেন। এর আগে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময় শরীফুল ইসলামও আভিস্কা ফার্নান্ডোকে কট বিহাইন্ডের পর উদ্যাপনে ‘টাইমড আউটে’র ভঙ্গি করেছেন।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ক্রিকেট মাঠের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আমেজটা মাঠের বাইরে তেমন নেই। দুই দলের ক্রিকেটারদের মাঠের বাইরের সম্পর্কে এর কোনো প্রভাব অন্তত প্রকাশ্যে নেই। কয়েকজন তো একজন আরেকজনের খুব ভালো বন্ধুও। একই সময়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের বিশ্বকাপে খেলা নাজমুল, মেহেদী হাসান মিরাজদের বেশ ভালো বন্ধু আভিস্কা ফার্নান্ডো, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভারা। সিলেটে দুই দল যেহেতু একই হোটেলে আছে, নিয়মিতই দেখা হচ্ছে একে অন্যের সঙ্গে। দেখা হলে কুশল বিনিময়ও হচ্ছে।
বাংলাদেশ দলের এক ক্রিকেটারও বললেন মাঠের বাইরে লঙ্কান ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাঁদের সহজ সম্পর্কের কথা, ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক বলতে যা বোঝায়, ওদের সঙ্গে আমাদের সবারই সম্পর্ক ঠিক সে রকম। নাশতার টেবিলে দেখা হয়, আসা–যাওয়ায় দেখা হয়, তখন টুকটাক হাসিঠাট্টাও হয়। মাঠের ব্যাপারটা শুধু মাঠেরই।’
মাঠের লড়াইয়ে জিততে তাই আজও কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাইবে না স্বাভাবিক। তবে এই ম্যাচের আগে কাল দিনের বেশির ভাগ সময় শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা বিশ্রামেই ছিলেন। একফাঁকে শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্টের তিন সদস্য স্টেডিয়ামে গিয়েছেন দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টির উইকেট দেখতে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের কয়েকজনও গেছেন স্টেডিয়ামে। টিম হোটেলের জিম ছোট, লঙ্কান ক্রিকেটাররাই ছিলেন সেখানে। তাই মাঠে গিয়ে জিম করেছেন বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, শেখ মেহেদী হাসান, তানজিম হাসান ও এনামুল হক। তাতে ম্যাচের আগের দিন মাঠের আবহও কিছুটা পেলেন তাঁরা।
আজ দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের প্রায় একই সমন্বয়েই খেলার কথা। সৌম্যকে হুট করে ওপেনিংয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। পাঁচ-ছয়ে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ভূমিকাতেই নাকি তাঁকে দলে চেয়েছিলেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু ম্যাচে দেখা গেল সেই সৌম্যই ওপেনিংয়ে! বেঞ্চে বসে ছিলেন ওপেনার হিসেবে দলে থাকা এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। হাথুরুসিংহের এই পরীক্ষা দ্বিতীয় ম্যাচেও চলবে কি না, ‘টাইমড আউট’ ডার্বির আরেক পর্বে সেটিও দেখার অপেক্ষা।