কোন ওষুধে কাজ হচ্ছে কোহলির বেঙ্গালুরুর
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু—নামটা শুনলে কী মাথায় আসে? বিরাট কোহলিরা রান করছেন। ব্যাট হাতে মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলছেন। কিন্তু বিপরীত চিত্র বোলারদের। তাঁরা মাথা তুলতে পারছেন না। ব্যাটিং–বোলিংয়ে কাঙ্ক্ষিত ভারসাম্যটাই নেই। এই তো!
ভিন্ন কিছু মাথায় আসা কঠিন। কারণ, ১৭ বছর ধরে যে অনেকটাই একই ছকেই দেখা গেছে বেঙ্গালুরুকে। এবার সেই ধরাবাঁধা ছকটাই ভাঙছে বেঙ্গালুরু। এরই মধ্যে অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতেছে চেন্নাই, মুম্বাই ও কলকাতার বিপক্ষে। আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় দল হিসেবে এক মৌসুমে এই তিনটি দলকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়েছে বেঙ্গালুরু।
হ্যাঁ, সব মিলিয়ে ম্যাচ হয়েছে মাত্র ৪টি। প্রথম পর্বেই ম্যাচ বাকি ১০টি। বলতে পারেন, এরই মধ্যে সিদ্ধান্তে আসা কঠিনই! তবে শুরুর ঝলকে বেঙ্গালুরু বুঝিয়ে দিয়েছে ‘প্রথাগত পারফরম্যান্স’ আর নয়। ১৮ বারের চেষ্টাতে দল হিসেবে খেলেই প্রথমবার শিরোপা জিততে চায় বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরু। এবার আলাদা কী এমন করছে বেঙ্গালুরু, সেটা দেখে নেওয়া যাক—
ভারতীয় ক্রিকেটারদের ইমপ্যাক্ট ফুল পারফরম্যান্স
দেবদূত পাড়িক্কাল ও জিতেশ শর্মার কথাই ধরুন। পাড়িক্কাল এবারের আইপিএলে ৪৯টি বল খেলেছেন। বাউন্ডারি মেরেছেন ১১টিতে। রান করেছেন ১৫৯ স্ট্রাইক রেটে। এই দলে তাঁর কাজ বড় ইনিংস খেলা নয়। ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে ৩ নম্বরে নেমে রানের গতিটা বাড়ানোই এই বাঁহাতির কাজ। সেটা তিনি করছেনও। উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জিতেশের স্ট্রাইক রেট তো ১৮৪। নিজের ভূমিকাটা ভালোভাবেই পালন করছেন এই ব্যাটসম্যান। কাল মুম্বাইয়ের বিপক্ষেও খেলেছেন ১৯ বলে ৪০ রানের ইনিংস।
এই দুজনের মধ্যে ভারতীয় ব্যাটসম্যান আছেন রজত পাতিদার। ৪ ম্যাচে যিনি ফিফটি করেছেন ২টিতে, রান করেছেন ৪০ গড় আর ১৭৫ স্ট্রাইকরেটে। তাঁদের সঙ্গে যোগ করুন ক্রুনাল পান্ডিয়ার নাম। ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৭টি। কঠিন সময়ে বোলিং করে দিচ্ছেন এই বাঁহাতি। ভুবনেশ্বর কুমার তো আছেনই! ৩ ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া এই পেসারের ইকোনমি ৮.৭৭। আইপিএল ইকোনমি ৯–এর নিচে রাখাও তো অর্জন। কোহলি তো এবারও এখন পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
রজত পাতিদার ফ্যাক্টর
২০২২ আসর থেকে বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ছিলেন ফাফ ডু প্লেসি। এবার বেঙ্গালুরু ডু প্লেসিকে ধরে না রেখে অধিনায়ক করেছে রজত পাতিদারকে। অপেক্ষাকৃত নতুন মুখের কাঁধে অধিনায়কত্ব দিয়ে এবার অনেকটাই নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল বেঙ্গালুরু। আর সেটা তারা পেরেছেও। পাতিদারও অধিনায়ক হিসেবে কঠিন পরীক্ষায় পাস করে যাচ্ছেন। বেঙ্গালুরুর এই যে দল হয়ে ওঠা, এর কৃতিত্ব তো অধিনায়ক হিসেবে তিনি পাবেনই!
কোহলি আছেন তাঁর মতোই
বেঙ্গালুরুতে এবার যে যাঁর কাজটা করছেন। জশ হ্যাজলউডের নেতৃত্বে বোলিং বিভাগ দারুণ করছে। ব্যাটিংয়ে ফিল সল্ট, পাতিদাররাও নিজেদের কাজটা করছেন। মানে বেঙ্গালুরু আর শুধু কোহলিনির্ভর নয়। এই ‘ট্রানজিশনের’ মধ্যেও কোহলি তাঁর মতোই আছেন। ৪ ম্যাচে ১৬৪ রান করেছেন। ৪৪.৬৬ গড় ও ১৪৩ স্ট্রাইক রেটে কোহলির এই রান ভালোভাবেই দলের কাজে আসছে।
অলরাউন্ড বোলিং আক্রমণ
নতুন বল নিয়ে বেঙ্গালুরুর চিন্তা নেই। একদিকে হ্যাজলউড, অন্যদিকে ভুবনেশ্বর থাকতে আর ভাবনা কিসের! চিন্তা যা ছিল ডেথ ওভার নিয়ে। সেই পরীক্ষায়ও বেশ ভালোভাবে কাল উতরে গেল বেঙ্গালুরু। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে কাল শেষ ৩ ওভারে ৪১ রান ডিফেন্ড করতে হতো বেঙ্গালুরুর। উইকেটে তখন ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া ও তিলক বর্মা। দুজনেই তখন উইকেটে থিতু।
ম্যাচের ছন্দও ছিল তাঁদের পক্ষে। পান্ডিয়া তখন ব্যাটিং করছিলেন ১১ বলে ৩৫ আর তিলক ২৮ বলে ৫৬ রানে। সেখান থেকে ম্যাচ বের করে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছেন বেঙ্গালুরুর বোলাররা। ভুবনেশ্বর, হ্যাজলউড ও ক্রুনালের করা ৩ ওভারে রান ওঠে মাত্র ২৮।
বেঙ্গালুরুতে বিশ্বমানের স্পিনার নেই। সুয়শ শর্মা, ক্রুনাল পান্ডিয়াদের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন ছিল। তাঁরা কেউই ওই অর্থে টুর্নামেন্টে রাজত্বও করছেন, তা–ও নয়! তবে তাঁরাও নিজেদের কাজটা করেছেন। এই যেমন কালকের ম্যাচে সুয়শ কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ৩২, ২০০ রানের ম্যাচে যা দারুণ। পান্ডিয়া আবার ৪৫ রান দিলেও উইকেট নিয়েছেন ৪টি। মানে সবাই নিজেদের কাজটা করাতেই এবারের আইপিএলে ভিন্ন বেঙ্গালুরুর দেখা মিলছে।