টি-টোয়েন্টির হৃদয়ের ‘টেস্ট ব্যাটিং’
গোয়ালিয়রে আসার পর শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুদিন পুরোদমে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। দুই দিনে যতবার নেটে ব্যাটিং করতে নেমেছেন, প্রত্যেকবারই মারকুটে মেজাজে ছিলেন হৃদয়। টি-টোয়েন্টির অনুশীলন যেহেতু, চার-ছক্কার অনুশীলনই সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা। লিটন, তানজিদ, নাজমুলরাও তা–ই করছিলেন। তবে হৃদয় ছিলেন আলাদা মেজাজে।
কিন্তু আজ সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যে হৃদয়ের দেখা মিলল, তাঁর সঙ্গে নেটের বিস্ফোরক মানসিকতার হৃদয়ের কোনো মিল নেই! টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগের দিন সাংবাদিকেরা তাঁর মুখ থেকে টি-টোয়েন্টিসুলভ উত্তর বের করার অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু হৃদয় সহজ সরল উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেলেন বিতর্ক। যেন টেস্ট ম্যাচে ‘ব্যাটিং’ করছিলেন, যেখানে মারার বলও ছেড়ে ছেড়ে খেলছিলেন এই তরুণ।
ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলা মানেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয় হওয়া। সেটা যদি হয় ভারতেরই মাঠে, তাহলে তো কথাই নেই। তামিম যেমন ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের জহির খানকে ছক্কা মেরে রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিলেন। যদিও সে ম্যাচটি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে। আর সেই ম্যাচে ভালো করেছিলেন সাকিব ও মুশফিক। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতকে হারানোয়ও ভূমিকা ছিল সাকিব-মুশফিকের। এবার তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য ভারতের বিপক্ষে ভালো করে ‘সুপারস্টার’ হওয়ার সুযোগ অপেক্ষা করছে।
হৃদয়কে আজ সে কথাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি অবশ্য কৌশলে, হেসে ‘সুপারস্টার’ শব্দটাকে এড়িয়ে গেলেন, ‘সুপারস্টার তৈরি হওয়ার বিষয়টা আমি বলতে পারব না। এটা সময়ই বলে দেবে। দিন শেষে আগে পারফর্ম করাটা ম্যাটার করে। পারফর্ম যদি করি, দলের রেজাল্ট যদি ভালো হয়, দেখা যাবে এখান থেকেই ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে আসবে অনেকেই; আসার সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম ছাড়া আসলে আলটিমেটলি কোনো কিছু চিন্তা করা যায় না। সবাই পারফর্ম করতে চায় এবং চেষ্টা করব ভালো কিছু করতে।’
সেই চেষ্টা থেকে মাঠের পারফরম্যান্সে একটা বড় ‘ধামাকা’ সৃষ্টি হবে তো? সাংবাদিকের এমন আরও একটি কৌশলী প্রশ্নের ফাঁদে পা দেননি হৃদয়। ‘সুপারস্টার’–এর মতো ‘ধামাকা’ শব্দটাও তিনি এড়িয়ে গেছেন, ‘এ রকম ধামাকা বা এ রকম কিছু আমাদের মাথায় নেই, সত্যি কথা। আমরা যেটা আগেও বললাম, জেতার জন্যই খেলব। আমাদের অবশ্য লক্ষ্য আছে, যেন আমরা সিরিজটা জিততে পারি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। এটাই, আমরা এ রকম (ধামাকা) চিন্তাভাবনা করছি না। ম্যাচ বাই ম্যাচ কীভাবে ভালো করা যায়, সেটাই (ভাবছি)।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হৃদয় ব্যাটিং পজিশন নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হৃদয় কখনো নেমেছেন টপ অর্ডার, কখনো মিডল অর্ডারে। স্থায়ী ব্যাটিং পজিশন না থাকায় তাঁর ব্যাটিংও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভারত সিরিজে তিনি কোন জায়গায় খেলবেন, সংবাদ সম্মেলনে সে প্রশ্নও উঠেছে।
হৃদয়ও বিতর্ক এড়াতে নিজের মনের কথাটা পরিষ্কার করে বলেননি, ‘আমি অনেক পজিশনে ব্যাটিং করেছি ঠিক আছে, কিন্তু এটা তো দলের পরিকল্পনা ছিল। টিম যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে দলকে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। যদি এ রকম পরিকল্পনা থাকে, আমি একটা জায়গায় থিতু হব বা দল যদি আমাকে চায় তাহলে হবে।
হৃদয় পরে যোগ করলেন, ‘এটা নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। প্রত্যেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে এসে তার পছন্দের জায়গা পায় না, খেলতে পারে না। এই জায়গাটা তৈরি করতে হয়, আমি এই জায়গাটা যখন ডিজার্ভ করব তখন এমনিতেই চলে আসবে। আমি যদি এ রকম (জায়গা) তৈরি করতে পারি তাহলে আমার জন্য এটা হবে, ইনশা আল্লাহ।’
নিজের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে আরও একটি প্রশ্নে হৃদয় একই উত্তর দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্ন ছিল সেটি। যেতে যেতে এমন ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ উত্তরের কারণ জানতে চাইলে হৃদয় শুধু হাসলেন। কিছু বললেন না। হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর সেই হৃদয়কেই অবশ্য দেখা গেল সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নেটে, চার-ছক্কার অনুশীলনে।