শেষ তিন বলে ফিরে এলেন মোস্তাফিজ

দলকে জেতানোর পর ঢাকা ক্যাপিটালসের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান (ডান থেকে ২য়)প্রথম আলো

‘আউট’—জায়ান্ট স্ক্রিনে এই শব্দটা ভেসে উঠতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মোস্তাফিজুর রহমান। টিভি আম্পায়ার প্রায় কোমর সমান উচ্চতার বলটিকে ‘নো’ বল ঘোষণা করলেই বিপদ হয়ে যেত। ফিরতি ক্যাচ ধরে আরিফুল হককে আউট করা মোস্তাফিজ উইকেট তো পেতেনই না, উল্টো তাঁকে করতে হতো একটি অতিরিক্ত বল, আর যেটি হতো আবার ফ্রি হিট। তাতে ২ বলে ১১ থেকে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচ জয়ের সমীকরণটা হয়ে যেত ৩ বলে ১০ রানের।

সেটি হয়নি। অবিশ্বাস্য এক রান তাড়ায় জয়ের সম্ভাবনা জাগানো সিলেট স্ট্রাইকার্স পরের বলে হারিয়েছে আরেকটি উইকেট। এবার রানআউট হয়েছেন সামিউল্লাহ শিনোয়ারি। ম্যাচ শেষ তখনই। বলতে গেলে মোস্তাফিজ প্রথম তিন বলে ওয়াইড ও চার–ছক্কাসহ ১২ রান দেওয়ার পর ফিরেছেন শেষ তিন বলে। এই তিন বলে উইকেট পড়েছে দুটি। শেষ বলে ৪ মেরে রুয়েল মিয়া শুধু হারের ব্যবধানই কমাতে পারলেন।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ১৯৬ রান তুলেছিল পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে ম্যাচটি শুরু করা ঢাকা ক্যাপিটালস। রান তাড়ায় ৭ উইকেটে ১৯০ রান তুলতে পারে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ৬ রানে জিতে নবম ম্যাচে দ্বিতীয় জয় পেল ঢাকা। তাতে পয়েন্ট তালিকায় সিলেটকে তলানিতে ঠেলে ছয়ে উঠে এল দলটি। ঢাকার চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলা সিলেটেরও পয়েন্ট ৪। দলটি ঢাকার পেছনে পড়েছে নেট রান রেটের হিসাবে।

শেষ ওভারে ২৩ রান দরকার ছিল সিলেটের। যতটা সম্ভব বাজেভাবেই শুরু করেছিলেন মোস্তাফিজ। বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দিলেন আফগান ব্যাটসম্যান শিনোয়ারি। পরের বলটা ওয়াইড করলেন মোস্তাফিজ। এরপর শিনোয়ারির আরেকটি চার। পরের বলে ১ রান। মোস্তাফিজ এরপর নিলেন সেই ফিরতি ক্যাচ।

আরিফুল ও জাকের আলীর ব্যাটে আশা দেথছিল সিলেট
প্রথম আলো

ঢাকার আরেক পেসার মুকিদুল ইসলামের করা আগের ওভারে আসে ১৭ রান। ওভারের শুরুতে ৪০ রানের সমীকরণ ছিল সিলেটের। কাজটা কঠিন। সেই কঠিনেরে সহজ করে তোলার কাজটা শুরু করেছিলেন জাকের আলী। ঢাকা ক্যাপিটালসের পেসার মুকিদুল ইসলামের করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে দুর্দান্ত শটে তিনটি চার মেরে দিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের জাকের আলী। তাতে ১২ বলে ৪০ রান থেকে ৯ বলে ২৮ রান হয়ে যায় সিলেটের জয়ের সমীকরণ। পরের বলটা লো ফুল টস দিলেন মুকিদুল। লোভ সামলাতে না পেরে মিড অফে ক্যাচ দিলেন ১৩ বলে ২৮ রান করা জাকের। সিলেট বড় ধাক্কাই খায় তাতে। এরপর শেষের সেই ওভার।

আরও পড়ুন

ম্যাচটি আসলে নির্ধারিত হয়েছে শেষের ৫ ওভারেই। লিটন দাস ও থিসারা পেরেরা শেষ ৫ ওভারে ৮১ রান তুলেছিলেন। অন্য দিকে, শেষ ৫ ওভারে ৭১ রান করতে হতো সিলেটকে। সিলেট করতে পারে ৬৫ রান।

সিলেটের ইনিংসে ৪৪ বলে সর্বোচ্চ ৬৮ রান করা রনি তালুকদার ফিরেছেন ১৬তম ওভারে। এরপর জাকের আলী (১৩ বলে ২৮) ও অধিনায়ক আরিফুল হক (১৩ বলে ২৯ রান) চেষ্টা করেও পারেননি।

৭০ রান করেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের লিটন দাস
প্রথম আলো

এর আগে ঢাকার ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭০ রান করেন লিটন। লিটনের ইনিংসটা পরিষ্কার দুই ভাগে করা যায়। প্রথম অংশে আড়ষ্টই ছিলেন লিট। প্রথম ৩৫ বলে করেছিলেন ৪০ রান। শুধু রান-বলের এই পরিসংখ্যানই নয়, ইনিংসের বেশির ভাগ জুড়ে ব্যাটিংয়ের ধরন দেখেও বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল লিটন ব্যাট করছেন।

সেই লিটন ঝড় তুললেন ইনিংসে শেষ ভাগে। পরের ১৩ বলে তুললেন ৩০ রান। সিলেটে শেষ দুই ম্যাচে ফিফটি ও সেঞ্চুরি করা ঢাকা ক্যাপিটালস ব্যাটসম্যান চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ম্যাচে পেলেন প্রথম ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারের শেষ বলে লং অফে যখন ক্যাচ দিলেন লিটনের রান ৪৮ বলে ৭০ রান।

আরও পড়ুন

লিটন ঝড় তোলার আগে ১৪.৫ ওভারে ঢাকার রান ছিল ৪ উইকেটে ১১১ রান। সেই দলটি শেষ ৩১ বলে ৮৫ রান যোগ করে ইনিংস শেষ করে ৬ উইকেটে ১৯৬ রান তুলে। লিটন ছাড়াও সিলেটের বোলারদের ওপর শেষ দিকে চড়াও হন ঢাকার অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। ১৭ বলে ৩৭ রান করেন শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার।

২৭ বলে ৮১ রানের জুটি গড়েছেন থিসারা ও লিটন
প্রথম আলো

১৪.৩ ওভারে ঢাকা ১০৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন লিটন ও থিসারা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে লিটন যখন আউট হলেন জুটিতে ২৭ বলে ৮১ রান। এ সময়েই ৪ ছক্কার ৩টি মেরেছেন লিটন। থিসারাও মারেন ৩টি ছক্কা।

লিটন ও থিসারা ছাড়া ঢাকার হয়ে বলার মতো রান করেছেন ওপেনার তানজিদ হাসান (১৬ বলে ২২) ও সাব্বির রহমান (২১ বলে ২৪)।

আরও পড়ুন

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ১৯৬/৬ (লিটন ৭০, থিসারা ৩৭, সাব্বির ২৪, তানজিদ ২২; টিপু ২/২৬, শিনোয়ারি ২/২৭)। সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৯০/৭ (রনি ৬৮, জোন্স ৩৬, আরিফুল ২৯, জাকের ২৮; থিসারা ২/৩১, মোস্তাফিজ ২/৪৬)। ফল: ঢাকা ক্যাপিটালস ৬ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: থিসারা পেরেরা।