তাজা ঘাসে মোড়ানো নতুন উইকেটে খেলা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আকাশও ছিল মেঘে ঢাকা। ক্রিকেটীয় যুক্তি বলে, এমন কন্ডিশনে টসজয়ী অধিনায়কের আগে বোলিং করতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন সেই ভাবনা থেকেই জিম্বাবুয়েকে আগে ব্যাটিং করতে বললেন।
নাজমুলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আর কোনো প্রশ্নই উঠল না। ১ উইকেট হারিয়ে ৩৬ রান তুলে ফেলা জিম্বাবুয়ে এরপর ৫ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলল ৬ উইকেট! ম্যাচের প্রথম ৪ ওভারে যেখানে সুন্দর ড্রাইভ, কাট মারা যাচ্ছিল, আউটফিল্ডও মনে হচ্ছিল গতিময়, সেই উইকেটে হঠাৎ কী এমন হলো? উত্তর খুঁজতে গেলে কিছুটা কন্ডিশন, কিছুটা ব্যাটসম্যানদের ভুল, কিছুটা দুর্ভাগ্য আর বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কথা আসবে।
পাওয়ার প্লের প্রথম চার ওভারের কথাই ধরুন। শরীফুল ইসলাম নতুন বলে সুইং করাবেন। সে চেষ্টায় কিছু রানও আসবে। তবে দু-একটি উইকেটের আশায় ওই আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের ছাড়পত্রটা শরীফুলকে দেওয়া হবে। আজ সেটি করতে দিয়ে একটু বেশিই রান দিয়েছেন, প্রথম ওভারে ৮, দ্বিতীয় ওভারে এসে ১৩ রান। কিন্তু দু-একটি এলবিডব্লুর আবেদন ছাড়া কিছুই হয়নি।
বরং অভিষিক্ত জয়লর্ড গাম্বি ২টি বাউন্ডারি মারেন, তিনে নামা ব্রায়ান বেনেট আরও ৩টি। শরীফুলের ২টি খরুচে ওভারের ফাঁকে অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান দারুণ এক ডেলিভারিতে তুলে নেন ক্রেইগ আরভিনের উইকেট। পাওয়ার প্লের শুরুর দিকে বাংলাদেশের সাফল্য ওইটুকুই।
প্রেস বক্সে তখন আলোচনা—জিম্বাবুয়ে দুই শ করে ফেলবে না তো? দ্রুতই সেই সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। গাম্বিকে ফেরালেন ১৮ মাস পর জাতীয় দলে ফেরা সাইফউদ্দিন। পায়ের ওপরে নিরীহ বলে শর্ট থার্ড ম্যানে থাকা তাসকিনকে ক্যাচ উপহার দেন গাম্বি। যে বলটাতে ছক্কা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল, সেই বলেই আউট! শেখ মেহেদীর পরের ওভারে বেনেট নিজের ভুলে হয়েছেন রানআউট।
ঠিক পরের বলেই অধিনায়ক সিকান্দার রাজা সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তোলেন। পরের ওভারে তাসকিনের বল ব্যাক ফুটে খেলতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন শন উইলিয়ামস, রায়ান বার্ল ঠিক পরের বলে অফ স্টাম্পের বলে টেনে খেলে মিড অনে ক্যাচ তোলেন। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বশেষ লুক জঙ্গিও সাইফউদ্দিনের করা পরের ওভারে ক্যাচ আউট হন।
দর্শক তখনো মাঠে ঢুকছে। গ্যালারিতে নিজের আসনে বসার আগেই ডিজিটাল স্কোরবোর্ডে অবিশ্বাস্য সংখ্যাটা দেখছিলেন অনেকেই—জিম্বাবুয়ে ৪১/৭। প্রতিপক্ষের বিপর্যয়ে খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু এত কষ্ট করে মাঠে খেলা দেখতে এসে জিম্বাবুয়ের এমন ভেঙে পড়ায় দর্শক বরং হতাশ। সুমন তপাদার নামের এক দর্শক তো আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘এত অল্প রান হলে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে খেলেও জিতে যাবে। টি-টোয়েন্টির মজাটাই পাব না।’
মাঠে আসা দর্শকদের অবশ্য একেবারেই হতাশ হতে হয়নি। ক্লাইভ মানদান্দে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা অষ্টম উইকেট জুটিতে ৬৫ বলে ৭৫ রান যোগ করেন। দুজনের জুটিতে আসা চার-ছক্কাগুলো এমনভাবে উদ্যাপন করেছেন সাগরিকার দর্শকেরা, যেন দুজনই বাংলাদেশের খেলোয়াড়। জিম্বাবুয়ের রান এক শ হওয়ার পর পুরো মাঠ দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছে! দুজনের সৌজন্য জিম্বাবুয়ের রানটা এক শ ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত হয়েছে ১২৪।
তাসকিনের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে মানদান্দের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে ৪৩ রান। মাসাকাদজা শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ৩৪ বলে ৩৮ রান করেছেন। ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও সাইফউদ্দিন, ২ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী। তিনজনই ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন পাঁচের কম।