বিসিবি সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ফারুক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির পদ থেকে যেকোনো সময় সরে দাঁড়াতে পারেন নাজমুল হাসান। তাঁর পদত্যাগের পর সম্ভাব্য বোর্ড সভাপতি হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ।
সূত্র জানিয়েছে, বিসিবি পুনর্গঠনের জন্য ক্রীড়া উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে কয়েকজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ফারুক আহমেদ ছাড়াও আছেন জাতীয় দলের আরও দুই সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম ও খালেদ মাসুদ এবং ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীন। আলোচনায় আছে বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হকের নামও।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে আজ এই প্রতিবেদককে ফারুক নিশ্চিত করেছেন তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগের কথা, ‘ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমাকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমি তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি।’ উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগের কথা নিশ্চিত করেছেন আরও দুই ক্রিকেট ব্যক্তিত্বও।
সূত্র জানিয়েছে, বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে এরই মধ্যে ক্রীড়া উপদেষ্টা সরাসরি কথা বলেছেন ফারুক আহমেদের সঙ্গে। বোর্ড সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে ফারুক কোনো মন্তব্য না করলেও জানা গেছে, প্রধান নির্বাচক হিসেবে সাফল্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করে নাজমুল হাসানের বোর্ডের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ক্রীড়াঙ্গনের বর্তমান দায়িত্বশীলদের কাছে তাঁর ভাবমূর্তিকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে।
তবে নাজমুল হাসান যদি পদত্যাগ করেনও, বিসিবির গঠনতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে সেখানে কীভাবে নতুন সভাপতি আসবেন? আইসিসির নিষেধাজ্ঞার ভয় আছে বলে সরকার সরাসরি কাউকে সে পদে বসাতে পারবে না। ফারুক কে তাই আগে বিসিবির পরিচালক হতে হবে। তারপরই সভাপতি পদের শূন্যতা পূরণ করতে পরিচালকেরা ভোট দিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে নতুন সভাপতি নির্বাচন করবেন।
বোর্ড পরিচালকেরা সাধারণ পরিষদের ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের প্রক্রিয়াও জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তিন নম্বর ক্যাটাগরিতে বিসিবির কাউন্সিলর ফারুক আহমেদকে বোর্ডে আনার ক্ষেত্রে তাই সহজ পথে হাঁটা হতে পারে। তাঁকে বোর্ড পরিচালক করা হতে পারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে, যেখানে কোনো নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সরকার পারে তাদের দুজন মনোনীত পরিচালক বোর্ডে রাখতে। এ মুহূর্তে এনএসসি মনোনীত কাউন্সিলর হিসেবে যেমন বিসিবি পরিচালক পদে আছেন জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম।
সূত্র জানিয়েছে, অভিজ্ঞ এই দুই ক্রিকেট সংগঠকের পরিবর্তে এনএসসি তাদের কাউন্সিলর হিসেবে ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে মনোনয়ন দিতে পারে। এরপর বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসানের পদত্যাগ করলে পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন নতুন বোর্ড সভাপতি। সরকার হয়তো এ ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না, তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কাউকে ক্রিকেটের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে ভাবা হলে সে বার্তা নিশ্চয়ই গ্রহণ করবেন পরিচালকেরাও।
সভাপতি শেষ পর্যন্ত যিনিই হোন না কেন, ক্রিকেট চালানোর পাশাপাশি বিসিবিতে নতুন নির্বাচন দেওয়ার জন্যও কাজ করতে হবে পুনর্গঠিত কমিটিকে। কারণ, আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই যে তারা পরিচালনা পর্ষদ নতুন করে ঢেলে সাজাবে। বরং গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এবং আইসিসির নিয়মের বাইরে কিছু করলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর নেমে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞার খড়্গ।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অবশ্য আগেই বলেছেন, আইসিসির নিয়ম মেনেই যা করার করা হবে। আজও এক সংবাদ সম্মেলনে একই মনোভাব জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, সংস্কার করব পদ্ধতির, ব্যক্তির নয়। সিস্টেমটা যারা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে, তাদের পরিবর্তন আসবে, এটাও সুনিশ্চিত।’