ট্রফিটা অস্ট্রেলিয়ার হাতেই বেশি মানাচ্ছে
চূড়ান্ত আধিপত্য বলতে যা বোঝায়, এই বিশ্বকাপে ভারতের পারফরম্যান্স ছিল সে রকমই। শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের প্রতিটি পরীক্ষায় ভারত ছিল শীর্ষে। কিন্তু ফাইনালের রাতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কাছে দাঁড়াতেই পারেনি স্বাগতিকেরা। জয়ের ধরনের কারণেই হয়তো বিশ্বকাপ ট্রফি অস্ট্রেলিয়ার হাতেই বেশি মানাচ্ছে।
৯.৩ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৬। রোহিত শর্মাকে দেখে মনে হচ্ছিল পুরো বিশ্বকাপের মতো কালও একচেটিয়া খেলে যাবে ভারত। কিন্তু ট্রাভিস হেডের একটা দুর্দান্ত ক্যাচ মুহূর্তেই পাল্টে দেয় ম্যাচের গতিপথ, কাঁপন ধরিয়ে দেয় ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। সেই থেকে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক ভয়ডরহীন ভারতকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। ইনিংসের বাকি সময়ে প্রতি–আক্রমণেই গেল না ভারত। এর দায় যতটা না উইকেটের, তার চেয়ে বেশি বোধ হয় সাহস করে খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে না পারা।
পুরো বিশ্বকাপেই ভারতকে প্ল্যান ‘বি’তে যেতে হয়নি। সেটিই হয়তো কাল হয়ে দাঁড়াল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার চিত্রটি একেবারেই বিপরীত। যুদ্ধ করতে করতে তাদের এত দূর আসা। প্ল্যান ‘বি’, ‘সি’ সবই যেন তাদের মুখস্থ। কাদায় পড়ে যাওয়া ভারতকে কোনো সুযোগই দিল না উঠে দাঁড়ানোর। ফিল্ডিং যে খেলার কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, অস্ট্রেলিয়া সেটি আবারও বুঝিয়ে দিল। ভারতের স্কোর অনায়াসে ২৭০ ছুঁতে পারত, যদি অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং হতো গড়পড়তা মানের।
অধিনায়ক কামিন্স নিজে তো দুর্দান্ত বল করলেনই, পাশাপাশি বোলারদের যেভাবে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ব্যবহার করলেন, তা ছিল দেখার মতো। বোলারদের ছোট ছোট স্পেলে বল করিয়ে নিশ্চিত করেছেন যেন ভারতীয়রা একই ধরনের বোলিংয়ে অভ্যস্ত হতে না পারে।
ভারতের মতো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ছিল এলোমেলো। ভাগ্য ভালো, হেড ও লাবুশেন একটা সময় মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সেই ধাক্কাটা সামলেছেন। লাবুশেন পরীক্ষিত টেস্ট ক্রিকেটার। টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাটা তিনি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন।
হেড যেভাবে ইনিংস শুরু করেন, এ রকম খেললে মনে হয় না বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ের বেশি যাওয়ার সুযোগ পেতেন। দু-একবার শট খেলে আউট হলেই কোচ হয়তো কান ধরে দল থেকে বের করে দিতেন, সমাপ্তি ঘটত তাঁর ক্যারিয়ারের। কী দারুণভাবে চাপের মুখেও নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে খেললেন! ১০-১২ হাজার বা এর চেয়েও বেশি রান করা অনেকেই হয়তো বিশ্বকাপ খেলেছেন। কিন্তু ফাইনালের রাতে স্মরণীয় শতকের জন্য সারা বিশ্ব মনে রাখবে হেডকেই। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও ম্যাচসেরা, কী অসাধারণ খেলোয়াড়!
নাজমূল আবেদীন: ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ