হারিস রউফের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা: সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে পিসিবি
যুক্তরাষ্ট্রে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দুই দিন হলো আলোচনায় পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার হারিস রউফ। সেই ঘটনা হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে চলে যাওয়ায় আলোচনা আরও বেশি হচ্ছে। পরে রউফ জানান, পরিবারকে নিয়ে ওই ব্যক্তি কটু কথা বলাতেই তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
অপ্রীতিকর সেই ঘটনায় রউফের পাশে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি রউফকে কটূক্তি করা ব্যক্তিকে ‘আলটিমেটাম’ দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গতকাল নাকভি লিখেছেন, ‘হারিস রউফের সঙ্গে হওয়া ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে এ ধরনের আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এবং তা বরদাশত করা হবে না। যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই হারিস রউফের কাছে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে আমরা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে রউফের বাগ্বিতণ্ডার ভিডিও দুই দিন হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্ত্রী মুনজা মাসুদ মালিককে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন রউফ। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রউফ ও তাঁর স্ত্রীকে কটূক্তি করেন এক ব্যক্তি। সেটি শুনতে পেয়ে মেজাজ হারিয়ে তাঁর দিকে তেড়ে যান রউফ। তখন ওই ব্যক্তির ওপর চড়াও হওয়া থেকে রউফকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলেন তাঁর স্ত্রী। সেই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা বাকিরাও রউফকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে দেখা যায়।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া পাকিস্তানের সব ম্যাচই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। গত রোববার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি ছিল পরশু ফ্লোরিডার লডারহিলে। বাগ্বিতণ্ডার ঘটনাটি ফ্লোরিডাতে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল এক্সে এক পোস্টে সেই ঘটনার ব্যাপারে রউফ লিখেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপারটি আনতে চাইনি। কিন্তু যেহেতু ভিডিও চলে এসেছে, পরিস্থিতির দিকে আলোকপাত করা দরকার বলে মনে করছি।’
এরপর ৩০ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার লিখেছেন, ‘পাবলিক ফিগার (তারকা) হিসেবে জনগণের সব রকম মতামতের ব্যাপারে আমরা উন্মুক্ত। আমাদের সমর্থন বা সমালোচনা করার অধিকার তাদের আছে। তবে যেটিই হোক, আমার মা–বাবা বা পরিবারের ব্যাপারে কেউ কিছু বললে আমি সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে দ্বিধা করব না। মানুষ ও তার পরিবারের প্রতি সম্মান দেখানো গুরুত্বপূর্ণ, তার পেশা যেটিই হোক না কেন।’
রউফের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বোলিং সঙ্গী শাহিন আফ্রিদিও। এক্সে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘হারিস রউফের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তা একেবারেই লজ্জাজনক। কাউকে অবজ্ঞা করার অধিকার কারও নেই। যাঁরা এই ভিডিও শেয়ার করেছেন, তাঁদের দেখেও আমি বিস্মিত। মানবতার চেয়ে কয়েকটি লাইকপ্রাপ্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন কেন?’
রউফ শুরুতে ভেবেছিলেন, কটূক্তি করা ওই ব্যক্তি ভারতীয়। তবে তিনি নিজেকে পাকিস্তানি দাবি করেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে রউফের আরেক সতীর্থ মোহাম্মদ রিজওয়ান এক্সে লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি হারিস রউফকে অসম্মান করেছে, সে পাকিস্তানি নাকি ভারতীয় ছিল, সেই আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ওই ব্যক্তির মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারের অভাব ছিল। বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের সামনে কোনো মানুষকে অসম্মান করার অধিকার কারও নেই। এ ধরনের ভয়ংকর আচরণ বন্ধ করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছে হেরে এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে গতবারের রানার্সআপ পাকিস্তানকে। স্বাভাবিকভাবেই দলটি বেশ সমালোচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য পাকিস্তানের হতাশাময় টুর্নামেন্টেও রউফ বেশ উজ্জ্বল ছিলেন। ৪ ম্যাচে ৬.৭৩ ইকোনমি রেটে বোলিং করে তিনি নেন ৭ উইকেট। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুপার ওভারে হারের দিন মূল ম্যাচের শেষ ওভারে ১৪ রান দিয়েছিলেন।