কোণঠাসা দুই সিংহের লড়াইয়ে রাজা শ্রীলঙ্কা, দর্শক ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ১৫৬
শ্রীলঙ্কা: ২৫.৪ ওভারে ১৬০/২
ফল: শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জয়ী
এ ম্যাচের আগে দুই দলই ছিল কোণঠাসা অবস্থায়। বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কোণঠাসা দুই সিংহের সেই লড়াইয়ে অবশ্য খুঁজে পাওয়া গেল একটি সিংহকেই। সেটি শ্রীলঙ্কা। পিচের দাবি অনুযায়ী বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং, দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের পর রান তাড়ায় মাথা ঠান্ডা রেখে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছে লঙ্কানরা। ইংল্যান্ডের দেওয়া ১৫৭ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে গেছে ২৪.২ ওভার বাকি থাকতেই, যেটি বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে লঙ্কানদের টানা পঞ্চম জয়।
এবার প্রথম ৩টি ম্যাচ হারার পর টানা দুই জয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিল শ্রীলঙ্কা, অন্যদিকে প্রথম ৫ ম্যাচের ৪টিতেই হেরে টুর্নামেন্টে শুধু খাতাকলমেই টিকে থাকল এখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এ জয়ের পর পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এসেছে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের নিচে শুধু নেদারল্যান্ডস।
১৫৬ রানের সম্বল নিয়ে ম্যাচের মাঝপথে খুব একটা উজ্জীবিত থাকার কথা ছিল না ইংল্যান্ডের। যদিও দ্বিতীয় ওভারে কুশল পেরেরাকে ফিরিয়েছিলেন ডেভিড উইলি। ঠিক পরের বলেই কুশল মেন্ডিস স্লিপে ক্যাচ তুললেও সময়মতো হাত তুলতে পারেননি জো রুট। ষষ্ঠ ওভারে উইলিকে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে সোজা ওপরে ক্যাচ তুলে অবশ্য থামেন মেন্ডিস। ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল তখন শ্রীলঙ্কা, দ্রুত আরও ২-১টি উইকেট ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রাখতে পারত। কিন্তু পাতুম নিশাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা ইংলিশদের শুধু হতাশই করে গেছেন ১৩৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে।
দুজনই উইকেটের চারপাশে খেলেছেন, সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি মেরেছেন। ৫৪ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন নিশাঙ্কা, সামারাবিক্রমার লাগে ৪৪ বল। ৮৩ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাঙ্কা, ৫৪ বলে ৬৫ রান সামারাবিক্রমার। ২৬তম ওভারের চতুর্থ বলে আদিল রশিদকে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করেন নিশাঙ্কা, ইংল্যান্ডের ওপর শ্রীলঙ্কার দাপট তাতে ফুটে ওঠে আরেকবার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের টসে জিতে ব্যাটিং না নেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয়েছে অনেক। এবার জস বাটলার ব্যাটিং-ই নেন। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে আরেকবার নিজেদের মেলে ধরতে প্রবলভাবে ব্যর্থ হয়েছে একসময় রাজত্ব করা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। বেন স্টোকস লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন, তবে ওই চেষ্টা পর্যন্তই। সফল আর হয়নি সেটি।
ইংলিশদের পথ হারানোর শুরুটা হতে পারত ইনিংসের প্রথম বলেই। দিলশান মাদুশঙ্কার বলে রিভিউ নিলে এলবিডব্লু হতে পারতেন জনি বেয়ারস্টো। সেটি বাদ দিলে ডেভিড ম্যালানের সঙ্গে বেয়ারস্টো প্রথম ৬ ওভারে ৯টি বাউন্ডারি মেরে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। ২০২০ সালের মার্চের পর প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ভাঙেন সে জুটি, অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন ডেভিড ম্যালান।
সে উইকেটে বাড়ে চাপ, প্রথম পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জো রুটের রানআউট সেটি বাড়িয়ে দেয় আরও। পাওয়ার প্লের মধ্যেও বাউন্ডারি পাচ্ছিল না ইংল্যান্ড, সে চাপেই আসে পরের উইকেট। কাসুন রাজিতাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন বেয়ারস্টো। শুরুটা ইতিবাচক হলেও জস বাটলারের দুঃসময় ফুরায়নি এ দিনও। কুমারার পঞ্চম/ষষ্ঠ স্টাম্প লাইনে ব্যাক অব লেংথের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটকিপার ও অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। দলে ফেরা লিয়াম লিভিংস্টোন কুমারার লেংথ বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লু, বাটলার আউট হওয়ার ১২ বল পর।
৮৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংল্যান্ড তখন ধুঁকছে, এর মধ্যে পরপর ২ ওভারে বাঁচেন স্টোকস। তাঁর সঙ্গে মঈনের জুটি অবশ্য একটু আশা জুগিয়েছিল তাদের, আক্রমণ করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু ফিরতি স্পেলে ফেরা ম্যাথুসকে আলগা শট খেলে মঈন আউট হলে বড় ক্ষতি করার আগেই ভাঙে সে জুটি।
পরের ওভারে ক্রিস ওকসের উইকেট ইংল্যান্ডকে নিয়ে যায় খাদের কিনারে। রাজিতার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলেছিলেন ওকস, বাঁ দিকে ঝুঁকে সেটি নেন সামারাবিক্রমা। মাঠের আম্পায়াররা নিশ্চিত ছিলেন না, রিপ্লে তেমন পরিষ্কার না হলেও বলের নিচে সামারাবিক্রমার আঙুল ছিল মনে করে আউটই দেন টেলিভিশন আম্পায়ার আহসান রাজা। ইংল্যান্ড হয়তো তখন ছিল স্টোকসের কাছ থেকে আরেকটি কোনো অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের অপেক্ষায়। কিন্তু কুমারার শর্ট বলে আগেভাগেই পুল করে বাউন্ডারি পার করাতে পারেননি স্টোকস, তাঁর ৭৩ বলে ৪৩ রানের ইনিংসও পারেনি ইংল্যান্ডকে খাদ থেকে টেনে তুলতে।
ইংল্যান্ডের অবস্থা কেমন এলোমেলো, সেটি ফুটে ওঠে অবশ্য আদিল রশিদের রানআউটে। তিকশানার বল মিস করেছিলেন উইলি, যেটি যায় মেন্ডিসের হাতে। রশিদ তখন নন–স্ট্রাইক প্রান্তে ক্রিজের বাইরে, মেন্ডিস যে থ্রো করতে পারেন, সেটি যেন মাথাতেই আসেনি তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ উইকেট জুটিতে তবু কিছু রান করেছিল ইংল্যান্ড, আজ হয়নি সেটিও।
এবার আসলে কিছুই হচ্ছে না ইংলিশদের।