গেইলের দেখানো পথে গেইলকে ছাড়িয়ে পুরান

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরানএএফপি

ঋষভ পন্তের সঙ্গে নিকোলাস পুরানের মধ্যে অনেক মিল। দুজনই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান, দুজনই বাঁহাতি—এগুলো আছেই। ক্রিকেটের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা চটজলদি এই দুটি বিষয়ের কথাই হয়তো বলবেন। তবে তাঁদের মধে৵ আরেকটি বড় মিল—পন্তের মতোই একবার ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান পুরান।

২০১৫ সালে ১৯ বছর বয়সে অনুশীলন থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় পুরানের ডান গোড়ালি ভেঙে যায়, গুরুতর চোট পেয়েছিলেন বাঁ পায়ের পেশিতেও। পুরানের শোচনীয় অবস্থা দেখে চিকিৎসকেরা তাঁকে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। খবরটা তাঁর জন্য ছিল স্বপ্ন চুরমার হওয়ার মতো; কিন্তু পুরান সহজে হাল ছাড়েননি। দুটি বড় অস্ত্রোপচার করিয়ে ছয় মাস পর নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন, এরপর মাসের পর মাস পুনর্বাসন করে আবার ফিরেছেন খেলায়।

পন্তের মতোই একবার ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান পুরান
এক্স

সেই পুরানই আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৩ বলে ৯৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজার রানের (২০১২) মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা দীর্ঘদিন ছিল ক্রিস গেইলের (১৮৯৯)। পুরান সেটি ছাড়িয়ে গেছেন আরও আগেই। এবার নিজেকে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়।

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডেও গেইলকে (১২৪) ছাড়িয়ে গেছেন ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার (১২৮)। পুরানের আজকের ইনিংসটিই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তাঁর ইনিংসের সৌজন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাটিং করে করেছে ৫ উইকেটে ২১৮ রান, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলটির সর্বোচ্চ স্কোর। আফগানরা ১১৪ রানে অলআউট হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ১০৪ রানে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবীয়দের রানের ব্যবধানে দ্বিতীয় সেরা জয় এটি।

স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে নিকোলাস পুরান
ইনস্টাগ্রাম

এ ম্যাচের আগে ব্যাটিংয়ে বাজে ফর্ম নিয়ে অনেক সমালোচনাই শুনতে হয়েছে পুরানকে। আগের ৩টি ম্যাচে তাঁর রান ২৭, ২২ ও ১৭। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ রানের ইনিংসটি ছিল ঘরের মাঠে ত্রিনিদাদে। সে ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘বেশির ভাগ সময়ই পুরানকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনে হয়, কিছুটা অহংকারীও। তখন তিনি নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে আসেন।’

তবে সেন্ট লুসিয়ায় দেখা গেছে অন্যরকম এক পুরানকে। শুরুতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন, মাঝের ওভারে নিজে রয়েসয়ে খেলে অন্যদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার সুযোগ দিয়েছেন। ডেথ ওভারে আবার হাত খুলে খেলেছেন নিজেই। রশিদ খানের এক ওভারে নিয়েছেন ২৪ রান, ওমরজাইয়ের ওভারে ৩৬। ওমরজাইয়ের অবিশ্বাস্য থ্রোতে রান আউট না হলে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম শতকটাও এসে যেতে পারত পুরানের ব্যাট থেকেই।

আরও পড়ুন

ম্যাচ শেষে এ নিয়ে আক্ষেপে পুড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান, ‘আপনি ৯৭ রান করে ফেলার পর রান আউট হতে চাইবেন না। তবে দলগতভাবেও আমরা একটা ভালো রানে পৌছাতে চেয়েছিলাম।’ সঙ্গে নিজের ব্যাটিং নিয়ে যোগ করেন, ‘আমি শুরুতে কন্ডিশন বুঝে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছি। মাঝের ওভারে যখন আফগান স্পিনাররা বোলিং করছিলেন, তখন আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে।’

দেরিতে হলেও সমর্থকদের চাহিদা মেটাতে পেরে সন্তুষ্ট পুরান, ‘ক্যারিবীয় সমর্থকরা সব সময় চার-ছক্কা দেখতে চান; কিন্তু আপনি সব সময় সেভাবে খেলতে পারবেন না। বিশেষ করে যখন উইকেট মন্থর ও স্পিন–সহায়ক হবে। তবে যখন আজকের মতো ভালো উইকেট পাবেন, তখন সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইবেন।’

ছক্কার রেকর্ডে গেইলকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে পুরান বলেছেন, ‘আমার জন্য গর্বের ব্যাপার, টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং কেমন হওয়া উচিত তার আদর্শ উদাহরণ তিনি। আমি ভাগ্যবান যে তাঁর দেখানো পথে এগোতে পারছি। এ জায়গায় আসতে আমার অনেক পরিশ্রম, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি ভাগ্যবান।’