‘সাকিব ভাইয়ের জায়গায় সাকিব ভাই, আমি আমার জায়গায়’

মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের হারের সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজশামসুল হক

কাভার ড্রাইভ, স্কয়ার ড্রাইভ...শট দুটি শুরু থেকেই ভালো খেলছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্রিকইনফোর ওয়াগন হুইল কাভার ড্রাইভকে মিরাজের সবচেয়ে ‘প্রোডাক্টিভ শট’ বলছিল। কাগিসো রাবাদা, উইয়ান মুল্ডারদের ভালো লেংথের বলগুলোকে কাভারে কিংবা পয়েন্টে ঠেলে ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন মিরাজ। দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে মিরাজ পেয়েছিলেন রাবাদার ভালো লেংথের একটি বল। ব্যাকফুট থেকে সেটিকে পয়েন্টে খেলতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরে যথেষ্ট জায়গা না পাওয়ায় বলটাকে স্লিপের ওপর দিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। মুল্ডার ক্যাচ লুফে নেওয়ায় তা হয়নি।

আরও পড়ুন

৯৭ রানে থামে মিরাজের আরও একটি লড়াকু ইনিংস। ১৯০ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো এই ইনিংসের পরও মিরপুর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১০৬ রানের লক্ষ্য দিতে পারে বাংলাদেশ, যা আজ চতুর্থ দিনে ২২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

আপনারা সবাই একটা কথা বলেন, সাকিব ভাইয়ের জায়গায় আমি...। সাকিব ভাই তো বাংলাদেশের হয়ে অনেক বড় অর্জন করেছেন। তিনি একজন লিজেন্ড খেলোয়াড়।
মেহেদী হাসান মিরাজ, বাংলাদেশের হারের পর সংবাদ সম্মেলনে

দল হারলেও মিরাজের ইনিংসটি আরও একবার ‘সাকিব-মিরাজ’ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মিরপুর টেস্ট দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চাওয়া সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবে শোনা যাচ্ছিল মিরাজের নাম। শেষ পর্যন্ত মিরপুর টেস্ট আর খেলা হয়নি সাকিবের। আর এই টেস্টেই ব্যাট হাতে আরও একটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর মিরাজকেই আজ সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি সাকিবের বিকল্প প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হয়। কিন্তু সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ও পরিপূর্ণ অলরাউন্ডারের সঙ্গে নিজের তুলনায় যেতেই চাইলেন না মিরাজ, ‘আপনারা সবাই একটা কথা বলেন, সাকিব ভাইয়ের জায়গায় আমি...। সাকিব ভাই তো বাংলাদেশের হয়ে অনেক বড় অর্জন করেছেন। তিনি একজন লিজেন্ড খেলোয়াড়।’

আরও পড়ুন

পরে দুজনের ক্যারিয়ারের উদাহরণ টেনে যোগ করলেন, ‘আমি রান করা শুরু করেছি মাত্র এক-দুই বছর, ধারাবাহিকভাবে যদি রান করা দেখেন। সাকিব ভাই শুরু থেকেই রান করেছেন। সাকিব ভাইয়ের জায়গায় সাকিব ভাই, আমি আমার জায়গায়। একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আরেকজনের তুলনা না করাই ভালো বলে আমার মনে হয়। আমরা জানি, সাকিব ভাইয়ের অর্জন কতটা। আর আমি ৭-৮ নম্বরে ব্যাট করি। সাকিব ভাই সব সময় টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেছেন। আমারও যখন সময় আসবে, তখন আমি চেষ্টা করব, দলের প্রয়োজনে ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব।’

স্লিপের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হন মিরাজ। আউট হওয়ার আগের মুহূর্ত
শামসুল হক

চাপের মুখে ভালো করায় মিরাজের অন্য রকম অনুপ্রেরণাও আছে, ‘আমি সব সময় কঠিন অবস্থা উপভোগ করার চেষ্টা করি। বেশি কিছু চিন্তা করি না। শুধু ভাবি যে আমি যদি এখান থেকে ভালো খেলি, তাহলে হিরো হওয়ার সুযোগ থাকবে।’ আজ সেই সুযোগ ছিল। তবে দলের লিডকে কীভাবে দেড় শতে নেওয়া যায়, সে চেষ্টাও ছিল মিরাজের, ‘সেঞ্চুরি মিস হলে ব্যাটসম্যানের অবশ্যই খারাপ লাগে। অবশ্যই খারাপ লেগেছে। তবে সেঞ্চুরির চেয়ে আমি যে পরিকল্পনায় খেলছিলাম, সেটা যদি কার্যকর করতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো লাগত। আমি সেঞ্চুরি নিয়ে অতটা চিন্তা করিনি। চিন্তা করেছিলাম, দলকে কত দূর নিতে পারি।’

আরও পড়ুন

মিরাজের লড়াইয়ের পরও মিরপুর টেস্টে হারের কারণ খুঁজতে ক্রিকেটবিজ্ঞানী হতে হয় না। বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট হওয়াই হারের অন্যতম কারণ। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ শেষে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মিরাজকে।

আমরা যদি আরও ভালো বোলিং করতাম, বিশেষ করে আমি; নাঈম যদি আরও ভালো বোলিং করত, তাহলে প্রশ্ন উঠত না।
মেহেদী হাসান মিরাজ

তিনিও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা, আমরা স্বীকার করছি।’ অন্য প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘আমরা ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারিনি। দ্বিতীয় ইনিংসের রানটা প্রথম ইনিংসে হলে ম্যাচটা ভিন্ন হতে পারত। দুই সেশনের আগেই অলআউট হয়ে গিয়েছি। এ জন্য পিছিয়ে পড়েছি। আর টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ইনিংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশায় পুড়েছেন মিরাজ
শামসুল হক

প্রথম ইনিংসে নিজের বোলিংয়ের সমালোচনাও করেছেন মিরাজ, ‘আমরা যদি আরও ভালো বোলিং করতাম, বিশেষ করে আমি; নাঈম যদি আরও ভালো বোলিং করত, তাহলে প্রশ্ন উঠত না। আমিও ভালো করিনি। আমি যদি ভালো করতাম, যে জিনিসটা দল প্রত্যাশা করে, ৬-৭ উইকেট নেব, ম্যাচ জেতাব। কিন্তু আমি প্রথম ইনিংসে শুরুর দিকে উইকেট নিতে পারিনি। তখন আমরা পিছিয়ে পড়েছি।’