আইপিএলে আবারও হেড-দুবেদের বেধড়ক পিটুনি দেখার প্রস্তুতি নিন

গত মৌসুমে হেড ও অভিষেক মিলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই হায়দরাবাদকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেনএএফপি

আইপিএলে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ম নিয়ে বিতর্ক আছে। সর্বশেষ আইপিএলে রেকর্ডভাঙা সব স্কোরের জন্য বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় এই নিয়মকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। এর মধ্যে আছেন ভারতের টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক রোহিত শর্মাও।

তবে আপাতত এই নিয়ম থেকে মুক্তি মিলছে না আইপিএলে খেলা বোলারদের। অনেক ক্রিকেটার ও ফ্র্যাঞ্চাইজির আপত্তি সত্ত্বেও ২০২৭ মৌসুম পর্যন্ত এই নিয়ম রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ ট্রাভিস হেড-শিবম দুবেরা এর সুযোগ নিয়ে সামনের আসরগুলোতেও বোলারদের বেধড়ক পেটানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ম চালুর পর গত মৌসুমে বোলারদের প্রতিনিয়ত ঝড় সামলাতে হয়েছে। ২০২৪ সালের আইপিএলে ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৯.৫৬; টুর্নামেন্টের এক মৌসুমে যা সর্বোচ্চ। সেই আইপিএল দেখেছে মোট ১২৬০টি ছক্কা, আগের রেকর্ডের চেয়ে যা ১৩৬টি বেশি।

২০২৩ সালে ৭৪টি ম্যাচে হয়েছিল ১১২৪টি ছক্কা। আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ চারটি স্কোরই এসেছে ২০২৪ সালে। এর মধ্যে একটি চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের। বাকি তিনটিই ফাইনালে কলকাতার কাছে হারা সানরাইজার্স হায়দরাবাদের।

হায়দরাবাদের দুই ওপেনার হেড ও অভিষেক শর্মা রীতিমতো বোলারদের ওপর ‘অত্যাচার’ করেছেন। দুজনে মিলে ছক্কা মেরেছেন ৭৪টি। হেড প্রায় প্রতি ম্যাচেই খেলেছেন ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে। অর্থাৎ, ব্যাট হাতে কাজটা করতেন তিনি। এরপর তাঁর জায়গায় নামানো হতো বোলারকে। কোনো দিন হেড ব্যর্থ হলে বা হায়দরাবাদের ব্যাটিং-বিপর্যয় হলে নামানো হতো অতিরিক্ত এক ব্যাটসম্যানকেও। অর্থাৎ উইকেট হারানো নিয়ে চাপে পড়তে হয়নি তাদের।

আরও পড়ুন

শুধু হায়দরাবাদ নয়, চেন্নাই, কলকাতাসহ বেশির ভাগ দলই একই কৌশলে খেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং টুর্নামেন্ট চলার সময়েই বলেছিলেন, ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের কারণেই এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখা যাচ্ছে, ‘আমার মনে হয়, দলগুলো যেভাবে ব্যাটিং করছে, এর পেছনে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের বড় প্রভাব আছে। ট্রাভিস হেড যেভাবে ব্যাটিং করেছে, পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর আত্মবিশ্বাস না থাকলে এভাবে ব্যাটিং করা যায় না।’

ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়মের পক্ষে ছিলেন না
এএফপি

দর্শকেরা বিনোদন পেলেও এই নিয়ম মানতে পারেননি অনেক সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার। এই নিয়ম অলরাউন্ডারদের বেড়ে ওঠাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে মনে করেন তাঁরা। এটা যে অলরাউন্ডারদের আইপিএলে ম্যাচ পাওয়ার পথে বড় বাধা, তার প্রমাণ তো হায়দরাবাদই দিয়েছে। ভারত জাতীয় দলের অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দর গত মৌসুমে হায়দরাবাদের হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ পান মাত্র দুটি।

রোহিতও এ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। ‘ক্লাব প্রেইরি ফায়ার’ পডকাস্টে রোহিতের কাছে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সেই প্রশ্নের উত্তরে রোহিত বলেছেন, ‘ইমপ্যাক্ট সাব নিয়মের আমি ভক্ত নই। এটা অলরাউন্ডারদের পেছনে টেনে ধরবে। দিন শেষে ক্রিকেট ১১ জনের খেলা, ১২ জনের নয়। আশপাশের মানুষের জন্য বিনোদনমূলক করার জন্য আপনি খেলা থেকে অনেক কিছু নিয়ে নিচ্ছেন। শিবম দুবে, ওয়াশিংটন সুন্দররা বল করছে না, যেটা আমাদের জন্য ভালো নয়। সত্যি বলতে আমি এর ভক্ত নই। তবে এটা বিনোদনমূলক।’

আইপিএলে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় মাঠে নামানোর সিগন্যাল দিচ্ছেন আম্পায়ার
বিসিসিআই

রোহিতের এমন মন্তব্যের পর গিলক্রিস্টও নিয়মটি প্রসঙ্গে নিজের মত দেন, ‘এটা বিনোদন যোগ করেছে। এটা মূলত দর্শকদের জন্যই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সফল। কারণ, এটা ক্রিকেটের মূল বিষয়ের সঙ্গে আপস করেনি। এটা ১১ বনাম ১১ জনের খেলা, একই মাঠ, ফিল্ডিংয়ে সীমাবদ্ধতাও সমান। অর্থাৎ কোনো চমকের প্রয়োজন হয়নি। সম্ভবত এটা (ইমপ্যাক্ট নিয়ম) ভবিষ্যতের জন্য নয়।’

তবে এসব কথা যে আইপিএল কর্তৃপক্ষের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি, সেটা তো নিয়ম চালু রাখাতেই স্পষ্ট।

আরও পড়ুন