তামিমকে ফোন করা সেই ব্যক্তি বিসিবি সভাপতি
কাল দল ঘোষণার আগে থেকেই গুঞ্জন—দুই–তিন দিন আগে তামিম ইকবালের সঙ্গে বিসিবির কোনো এক শীর্ষ কর্তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তিনি খেলবেন না, খেললেও তিনি যেন নিচের দিকে ব্যাট করেন, ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন অদ্ভুত প্রস্তাব পেয়েই নাকি উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন তামিম।
আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি নিয়ে আর কোনো অস্পষ্টতা রাখেননি তামিম নিজেই। সরাসরি বলেছেন, ‘আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন। উনি বেশ ইনভলভড আমাদের ক্রিকেটে। আমাকে হঠাৎ করে ফোন করে বললেন, “তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।” আমি বললাম, ভাই, এটা এখনো ১২-১৩ দিনের কথা। আমি তো এর মধ্যে ভালো কন্ডিশনে থাকব। কী কারণে খেলব না? তখন বললেন, “আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করাব।”’
তামিমের এমন বক্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? তামিম ওই ব্যক্তির নাম না বললেও পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, তিনি ‘বোর্ডের টপ লেভেল’–এর কেউ এবং ‘উনি বেশ ইনভলভড আমাদের ক্রিকেটে।’
তামিমের ইঙ্গিত থেকে তিরটা যায় মূলত তিনজনের দিকে—বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস এবং টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ।
বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে এই তিনজনই জাতীয় দলের সঙ্গে সরাসরি এবং বেশি সম্পৃক্ত। তবে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে জালাল ইউনুস বা খালেদ মাহমুদ নন, তামিমকে ওই প্রস্তাব দেওয়া ব্যক্তি স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। এ ব্যাপারে জানতে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি বিসিবি সভাপতিকে। প্রথম আলোর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারও জবাব দেননি তিনি।
তামিমের পরের কথা থেকে পরিষ্কার যে তাঁকে ফোনটা করা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর। ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমি কোন মাইন্ডসেট থেকে আসতেছিলাম। হঠাৎ করে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। আমি হ্যাপি ছিলাম। হঠাৎ করে এসব কথা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব না।’ চোট থেকে মাঠে ফেরার পর তামিম নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট করতে পারেননি ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায়। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৮ বলে খেলেছেন ৪৪ রানের ইনিংস, যেটায় ছিল তাঁর ফিরে আসার বার্তা।
এ ধরনের প্রস্তাব তামিম মেনে নেবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। ১৭ বছর ধরে তিনি ওপেনিংয়েই খেলছেন, তিন বা চারেও ব্যাট করেননি কোনো দিন। তামিম বলেন, ‘এমন যদি হতো, আমি তিনে ব্যাটিং করি, চারে ব্যাটিং করি, তাহলে যদি ওপর–নিচ করা হয়, সেটা মানিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু আমার তিনে, চারে, পাঁচে ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই।’
বিসিবি সভাপতির প্রস্তাব পছন্দ হয়নি বলে কথা বলার একপর্যায়ে তামিম উত্তেজিতও হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর এমনও মনে হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। দিস ইজ হোয়াট আই ফেল্ট।’
উত্তিজেত তামিম তখন তাঁকে বলেছেন, ‘আপনারা একটা কাজ করেন, যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না।’
ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, ফোনে তাঁদের আরও কথা হয়েছে, যেগুলো তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলতে চান না। তবে জানা গেছে, তাঁকে নিয়ে করা বিসিবি সভাপতির অতীতের বিভিন্ন আক্রমণাত্মক মন্তব্যের প্রসঙ্গও টেনেছিলেন তামিম। সব মিলিয়ে আলোচনাটা হয়ে উঠেছিল চরম উত্তপ্ত।
২৪ সেপ্টেম্বর তামিমের সঙ্গে ওই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরদিন রাতেই বিসিবি সভাপতি নিজ বাসায় কথা বলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে। সেখানে কোচ ও অধিনায়ক নাজমুল হাসানকে জানান, ‘আনফিট’ তামিমকে বিশ্বকাপের দলে চান না তাঁরা। তামিমের কড়া প্রতিক্রিয়ার পর কোচ–অধিনায়কের এই চাওয়ার সঙ্গে মিলে গিয়ে থাকতে পারে বিসিবি সভাপতির চাওয়াও। আর এই সমীকরণেই বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ে যান তামিম।
কোচ–অধিনায়ক যে রাতে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তামিমকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে যায় সে রাতেই। সেটি আঁচ করেই হয়তো পরদিন সকালে তামিমও নির্বাচকদের জানিয়ে দেন, তাঁকে বাদ দিয়েই যেন করা হয় বিশ্বকাপের দল।
নির্বাচকেরাও শেষ পর্যন্ত দলে রাখেননি তামিমকে। তবে কাল দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তামিমের সঙ্গে এক বোর্ড কর্মকর্তার মুঠোফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং তাঁকে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেন, এ রকম কোনো কিছু তাঁর জানা নেই। এটা যদি হয়েও থাকে, খেলার এত আগে একজন খেলোয়াড়কে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।