লর্ডসেই নিজের শেষ ধরে নিয়েছিলেন ওয়ার্নার
লর্ডসে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ হতে পারে বলে মনে করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। আর ওয়ানডে খেলবেন না, সিডনিতে এমন ঘোষণার দিনে আজ নিজের অবসর-পরিকল্পনার আরও বিস্তারিত জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ওয়ার্নারের অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে একটা ঝড়ই বয়ে গেছে কয় দিন আগে। সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু টেস্ট দিয়ে এ সংস্করণকে বিদায় বলছেন তিনি। এর আগে গত বছর অ্যাশেজের শেষ টেস্টের আগেও একবার তাঁর অবসরের গুঞ্জন উঠেছিল; যদিও সে সময় সেটি উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
ইংল্যান্ড সফরের শুরুতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আগে ওয়ার্নার জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের শুরুতে সিডনি টেস্ট দিয়েই বিদায় জানানোর ইচ্ছার কথা। তবে তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণের ক্ষেত্রে যে ফর্মের প্রভাব থাকবে, ওয়ার্নার জানতেন সেটি। জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১ রান করেই আউট হয়ে যান ওয়ার্নার। এজবাস্টনে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের ২ ইনিংস মিলিয়ে করেন ৪৫ রান।
দুই বছর ধরেই ফর্মটা সুবিধার ছিল না ওয়ার্নারের। নিজের শেষ সিরিজের প্রথম টেস্টেই অবশ্য পেয়েছেন বড় শতকের দেখা। এবার ওয়ার্নার বললেন, অ্যাশেজেই নিজের শেষ ধরে নিয়েছিলেন তিনি, ‘ইংল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগে পরিষ্কারভাবেই বলেছিলাম, আমাকে এবং আমার ফর্ম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল, আমি সেটা শুরুতেই শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমার জন্য আদর্শ হচ্ছে সিডনিতে শেষ করা। তবে আমি আসলে লর্ডসেই নিজের শেষ হতে যাচ্ছে—এমন ধরে নিয়েছিলাম; বিশেষ করে টপ অর্ডারে উজির (উসমান খাজা) সঙ্গে যদি এত ভালো না করতাম।’
কেন লর্ডসকে সম্ভাব্য বিদায় হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গে ওয়ার্নার বলেন, ‘পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ... যদি আপনি ২-০-তে পিছিয়ে থাকেন, আর এরপর তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে হারেন, তাহলে আমার মনে হয় না অবসর সঠিক সিদ্ধান্ত হতো। সহজেই ছেড়ে গেলাম—এমন হতো। আমার কাছে ব্যাপারটি এমন, যদি আমি ব্যর্থ হচ্ছি আর দলও জিতল না, তাহলে সিদ্ধান্ত সহজতর হতো। আমি দল বা নির্বাচককে এমন কোনো পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না, যখন তাদের ভাবতে হয় যে “এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।”’
এরপর ওয়ার্নার যোগ করেন, ‘এটি আসলে আমার নিজেকে বলার ব্যাপার ছিল, “এটা নিয়ে সন্তুষ্ট, এটা নিয়ে খুশি, আমার দারুণ একটা ক্যারিয়ার কেটেছে।” আমি যদি এখনো নিজের সেরাটি খেলতে পারি, উজির সঙ্গে ভালো ব্যাটিং করতে পারি, নিজেদের ভালো অবস্থানে নিতে পারি, তাহলে সিরিজের বাকি অংশেও করতে পারব।’
ওয়ার্নার লর্ডসে কঠিন কন্ডিশনে খেলেন ৬৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। অ্যাশেজের প্রথম ২ টেস্টে খাজার সঙ্গে ৩টি অর্ধশতক জুটিও গড়েন। ব্যক্তিগত দিক দিয়ে তেমন বড় সাফল্য না পেলেও দলীয় সাফল্য অনুপ্রাণিত করেছে ওয়ার্নারকে, ‘এরপর আমরা একসঙ্গে ভালো কয়েকটি ইনিংস খেললাম। ইংল্যান্ডে শতক পাইনি, যেটি সব সময়ই চেয়েছি। তবে দল হিসেবে এবং একত্রে আমরা নিজেদের কাজটি করেছি। ফলে এ রকম শেষ পাওয়াটা দুর্দান্ত। তবে এটি আমার ব্যাপার নয়, দলের ব্যাপার। সিরিজ জিতেছি, এসসিজিতে ৩-০–তে জিততে পারলে এবং (পাকিস্তানকে) ধবলধোলাই করতে পারলে দলের জন্য দারুণ হবে।’
নিজের শেষ টেস্টকে ঘিরে আবেগের কথাও জানিয়েছেন তিন সংস্করণ মিলিয়ে সময়ের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান, ‘আসলে আরও বেশি আবেগ এসে পড়েছে। যখন লর্ডসে সম্ভাব্য শেষ ধরে নিয়েছিলাম, আমার আসলে তেমন আবেগ ছিল না। আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। হয়তো রান করছিলাম না, কিন্তু টেস্ট খেলার লক্ষ্য ছিল। আমি ক্রিকেট খেলাটাই ভালোবাসি, কোন সংস্করণে খেলছি, সেটি ব্যাপার নয়। তবে পার্থের পর থেকে আবেগী হয়ে গেছে ব্যাপারটা, যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেছি, আর জানি (নিজের শেষ মৌসুম) খেলছি।’