দীর্ঘ পথ পেরিয়ে অবশেষে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে হারানোর মধ্য দিয়ে ‘চোকার’ ও ‘সেমিফাইনালের দলের’ মতো নেতিবাচক ট্যাগের বোঝা থেকেও নিজেদের মুক্তি দিতে পেরেছে প্রোটিয়ারা। কিন্তু ফাইনালে পৌঁছানোটাই শেষ কথা নয়, এবার তারা জিততে চায় প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপাও।
আজ রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ফাইনাল নিয়ে আশাবাদী দলটির সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সও। দল ফাইনালে ওঠার আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান। ফাইনালে ভারতকে ফেবারিট মানলেও এইডেন মার্করামের দলের নতুন ইতিহাস গড়ার সামর্থ্যে আস্থা আছে তাঁর। এ জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি।
ফাইনালে বার্বাডোজের উইকেটে শুরুতে পেসাররা সুবিধা পাবেন বলে মনে করেন ডি ভিলিয়ার্স। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, ‘এই টুর্নামেন্টের বেশির ভাগ উইকেট ফ্ল্যাট, মন্থর এবং পেসারদের জন্য খুব বেশি কিছু নেই। তবে আমি জানতাম, ত্রিনিদাদের উইকেটে নতুন বলে পেসারদের জন্য কিছু সুবিধা থাকবে। এই কথা বার্বাডোজকে নিয়েও বলা যায়। এখানেও ত্রিনিদাদের মতো বল দুদিকে খুব বেশি সুইং করবে না। তবে কিছুটা বাড়তি বাউন্স পাওয়া যাবে। আর এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার সুযোগ আছে। তাদের শুরুতেই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার ও ঋষভ পন্তকে আউট করতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ রানের মধ্যেই ভারতের ৩–৪ উইকেট তুলে নিতে হবে। তবে ভারত যদি ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে ভালো করে, দক্ষিণ আফ্রিকা চাপে পড়ে যাবে।’
এর আগে আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজের দেশকে প্রথমবার ফাইনালে উঠতে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন জানিয়ে ডি ভিলিয়ার্স আরও বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিদা দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চিত করার পর বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করছিল, কেমন লাগছে? আমি চুপচাপ বসে ছিলাম, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এতই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম যে আমার চোখে কয়েক ফোঁটা পানিও চলে এসেছিল। খেলোয়াড়দের জন্য অনেক অনেক খুশি লাগছিল।’
অতীতে বড় টুর্নামেন্টে বারবার ভুলের ফাঁদে আটকেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মার্করাম–ডি ককরা দারুণ কিছু করতে পারবেন বলেই মনে করেন ডি ভিলিয়ার্স, ‘আমি বলব, দক্ষিণ আফ্রিকা মূলত টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স ছিল। কেউ খুব বেশি কিছু তাদের কাছ থেকে আশা করেনি। হ্যাঁ, তারা খুবই ভালো দল। কিন্তু এখানে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বমানের দলও ছিল। অবশ্যই ভারতের কথাও বলতে হবে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার টুর্নামেন্টের আয়োজক। তবে তরুণ এই দলটি ভেবেছে, এটা আমাদের সময়। আমার বিশ্বাস তারা অতীতের দলগুলোর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে। আর তারা এখন ফাইনালে।’
পুরো দেশ দলের পাশে আছে বলেও মন্তব্য করেছেন ডি ভিলিয়ার্স, ‘প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল। আফ্রিকানদের জন্য এটা নতুন কিছু। আমরা সবাই খুবই রোমাঞ্চিত। দেশের ভেতর উত্তেজনা এখন চরমে। বন্ধুরা এটা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলছে। আমার সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রীতিমতো পাগলামি চলছে। গত ৩৩ বছরে এমন কিছু কখনো ঘটেনি। পুরো দেশ এখন দলের সঙ্গে আছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে মনপ্রাণ উজাড় করে সমর্থন দিলেও ভারতকে এ ম্যাচে ফেবারিট বলেই মনে করেন ডি ভিলিয়ার্স, ‘বেশির ভাগ মানুষ বাস্তববাদীও বটে। তারা জানে, ভারত সম্ভবত ফেবারিট। ভারত এ কাজ অতীতেও করেছে। আমিও মনে করি, ভারত কিছুটা ফেবারিট। তবে আজকের ফাইনালে আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আছি।’