লারা ‘সুস্পষ্ট মিথ্যা’ বলেছেন, ক্ষমা চাইতে বললেন ভিভ রিচার্ডস ও হুপার
তিনজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক। ব্রায়ান লারা আর ভিভ রিচার্ডস তো ক্রিকেটেরই কিংবদন্তি। এবার লারার লেখা বইয়ের কড়া সমালোচনা করেছেন ভিভ, সঙ্গে কার্ল হুপারও। রোববার ভিভ ও হুপার এক যৌথ বিবৃতিতে দাবি করেছেন, লারা তাঁর বই ‘লারা: দ্য ইংল্যান্ড ক্রনিকলস’–এ অসত্য উপস্থাপন করেছেন।
বইয়ে লারা ‘দাবি’ করেছেন, ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডস হুপারকে ‘সপ্তাহে একবার করে কাঁদাতেন’। কিন্তু ভিভ ও হুপার বক্তব্যটিকে ‘সুস্পষ্ট মিথ্যা’ অভিহিত করে এর জন্য লারাকে ‘ক্ষমা চাইতে’ বলেছেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্যার ভিভ রিচার্ডস ও কার্ল হুপার খুব মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। কারণ, ব্রায়ান লারার সম্প্রতি প্রকাশিত বইয়ে তাঁদের ব্যাপারে সর্বৈব অসত্য উপস্থাপনা করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা শুধু তাঁদের সম্পর্ককেই বিকৃত করে না, এর পাশাপাশি ক্ষতিকর ও অন্যায়ভাবে তাঁদের চরিত্রকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের রেকর্ডধারী (৪০০*) লারা তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ড্রেসিংরুমে ভিভের কথা খেলোয়াড়দের ‘আতঙ্কিত’ করত। তবে লারা এটাও বলেছেন, ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ভিভ একদম হৃদয় থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের উন্নতি চাইতেন। বইয়ে লারা লিখেছেন, ‘ভিভ প্রতি তিন সপ্তাহে আমাকে একবার করে কাঁদাতেন, কিন্তু কার্লকে কাঁদাতেন সপ্তাহে একবার করে। ভিভের গলার সুর আতঙ্কিত করত এবং (মানসিকভাবে) শক্তিশালী না হলে তাতে প্রভাবিত হয়ে কেউ কেউ নিজের গায়ের ওপরও টেনে নিত। আমি কখনো এতে প্রভাবিত হইনি। বরং একদিক বিচারে আমি এটা ভালোভাবে গ্রহণ করেছি। কারণ, তিনি আমার এতটা দায়িত্ব নিয়েছিলেন যে জানতাম এর অপব্যবহারও হবে। আর ব্যক্তিত্বের দিক থেকেও আমি শক্তিশালী ছিলাম। আর কার্ল? আমি সত্যটা জানি আর সেটা হলো কার্ল লাজুকতা থেকেই ভিভ রিচার্ডসকে এড়িয়ে চলত।’
কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১০২ টেস্ট ও ২২৭ ওয়ানডে খেলা হুপার বলেছেন, ভিভ তাঁকে কখনো ‘যন্ত্রণা’ দেননি এবং সব সময় তাঁর খেয়াল রাখতেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্যার ভিভিয়ান হুপারের প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন এবং তাঁকে সপ্তাহে একবার করে কাঁদাতেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট মিথ্যা। এমন বর্ণনায় স্যার ভিভিয়ানকে মানসিক নির্যাতনের হোতা বলে মনে হয়—যে দাবিটি শুধু ভিত্তিহীনই নয়, দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।’
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘হুপারের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন স্যার ভিভিয়ান। তিনি হুপারকে কখনো মানসিক যন্ত্রণা দেননি। বরং সব সময় প্রেরণাদায়ক পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় ছিলেন এবং অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মানের ওপর তাঁদের ৪০ বছরের সম্পর্ক স্থাপিত। তাঁদের সম্পর্কের ব্যাপারে লারার বইয়ে অসত্য উপস্থাপনা সত্যের প্রতি গভীর অপকার এবং এতে দুই পক্ষ এবং তাঁদের পরিবার অনুচিত যন্ত্রণা ভোগ করেছে।’
সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিচার্ডস এবং নিজের প্রতিভার সুবিচার করতে না পারা হুপার মনে করেন, লারা ‘এমন প্রতারণা থেকে লাভের চেষ্টা করেছেন’। বৈশ্বিক ক্রিকেটে লারার যে অবস্থান, তার সঙ্গে ব্যাপারটি ‘ধারণাতীত’ বলেও মনে করেন তাঁরা। যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা চাই লারা খুব দ্রুত এসব মিথ্যা দাবি প্রত্যাহার করে নেবেন এবং যে ক্ষতি হয়েছে, সে জন্য ক্ষমা চাইবেন।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে লারা ও রিচার্ডস সতীর্থ হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। সেটি ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ড সফরে। লর্ডসে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে ২০ রানের জুটি গড়েছিলেন দুই কিংবদন্তি। লারা তাঁর বইয়ে ভিভের সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলতে না পারার জন্য আক্ষেপ করেছেন। নিজের আত্মজীবনীতে লারা লিখেছেন, ‘সব তরুণেরই স্বপ্ন, আমার মতো মাঠে দাঁড়িয়ে সর্বকালের সেরা হাঁটাটি দেখা।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে লারা ও হুপার দীর্ঘদিন সতীর্থ ছিলেন। ১৯৯০ সালে লারার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন হুপার। ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে হুপারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন লারা।
আত্মজীবনীতে হুপারের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন লারা। হুপারকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে উঠে আসা অন্যতম সেরা প্রতিভা বলেই মনে করেন তিনি, ‘কী দারুণ প্রতিভা! তাঁর আয়েশি ব্যাটিং দেখে আমরা তো বটেই, সিনিয়র খেলোয়াড়েরাও বিস্মিত হতেন। ব্যাপারটা এমন যে কার্ল ব্যাটিংয়ে নামলে তাঁরা উপভোগ করতেন—হেইন্স, রিচার্ডস, গ্রিনিজ থেকে সবাই শুধু তাঁর ব্যাটিং দেখতে যে যাঁর কাজ ফেলে রাখতেন।’