দুই সপ্তাহ আগেও যে দলটি তাদের অধিনায়কের মতে, ‘মানসিকভাবে তলানিতে ছিল’—সেই দলটাই কফিন থেকে উঠে বিশ্বকাপ জিতে নিলে কেমন লাগবে? কল্পনার রথ সর্বোচ্চ ছুটিয়েও হয়তো এমন কিছু ভাবা কঠিন। পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয় সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার গল্প। ৩৩ বছর আগের সেই দিনও ছিল রোজার মধ্যে। ১৮তম রোজা—বিকেলের দিকে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ইফতার ভুলে পিলপিল করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। রাস্তায় রাস্তায় তুমুল উল্লাস–উদ্যাপন। যেন নতুন জীবন পেয়েছে পাকিস্তান, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ! রমিজ রাজা ঠিক এ কথাই বলেছিলেন পাকিস্তানের ’৯২ বিশ্বকাপ জয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে জিও নিউজের আয়োজনে। সেটা ২০১৭ সাল। ’৯২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ইমরান, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম–উল–হক, মঈন খান, মুশতাক আহমেদদের নিয়ে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন রমিজ—সাবেক এ ওপেনার নিজেও সেই দলটির একজন। সেই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সে দলটির সাত নায়ক মিলে আড্ডার মেজাজে অনেক গল্পসল্পই করেছেন সেসব দিনের। আজ পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ের ৩৩ বছর পূর্তিতে গল্পগুলো শোনা যাক—
অধিনায়ক ইমরান যথারীতি অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। ’৯২ বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর নেতৃত্বগুণকে আরও একবার স্বীকৃতি দিতে করতালিতে সিক্ত করলেন বাকি ছয়জন। অধিনায়কের প্রতি সম্মানবোধ সবার এতই বেশি যে তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেটা দেখা গেল—ইমরান আসন গ্রহণের পর বাকিরা বসলেন। শুধু ইমরানই পায়ের ওপর পা তুলে বসলেন, বাকিরা তাঁর সামনে চেয়ারে আরাম করে গা এলিয়ে দিলেও আদবটা থাকল চোখেমুখে।
রমিজের শুরুটাও হলো এমনই এক প্রসঙ্গে—ইমরানকে বললেন, মনে হচ্ছে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছি এবং আগের মতোই আপনাকে আমরা ভয় পাই। তবে রাজনীতিতে যেহেতু জড়িয়েছেন, এখন নিশ্চয়ই ভিন্নমত মেনে নিতে পারেন? পাশাপাশি হাসতে হাসতে রমিজ আরেকটি প্রশ্নও তুললেন, এমন একটা ‘ফাটেচার’ (উর্দু শব্দ—বাংলায় জীর্ণশীর্ণ) দল নিয়েও ইমরান কীভাবে কাপ জয়ের স্বপ্ন দেখলেন?
’৯২ বিশ্বকাপ জিতে রাজনৈতিক দল তেহরিক–ই–ইনসাফ গঠন করা ইমরান তখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হননি। গলায় গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য ঝরিয়ে ইমরান উত্তর দেন, ‘দুটো কারণে। প্রথম কারণ হলো তখন তোমরা সবাই খুব তরুণ ছিলে, আর আমি চল্লিশের কাছাকাছি। মুশতাক দু–তিন বছর এসেছে, ওয়াসিম সেরা সময়ে ছিল। তো, সবাই কম বয়সী হওয়ায় সম্ভবত আমাকে নিয়ে ভীতি ছিল। কিন্তু আমি কাউকে কখনো কামড় দিইনি।’ রমিজ ফোড়ন কাটেন, ‘এখন তো এটাই বলবেন!’
হাসির রোল থামার পর ইমরান দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেন, ‘বিশ্বকাপে তিনবার অধিনায়কত্ব করেছি। ’৮৩ বিশ্বকাপের দল ভালো না খারাপ ছিল...জানি না। চোট ছিল আমার। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছি। কিন্তু ’৮৭ বিশ্বকাপের দলটি, আমাদের কন্ডিশনে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেরা দল। আমরা ফেবারিট ছিলাম। ’৯২ বিশ্বকাপে আমরা দুজন ম্যাচ উইনার পাইনি। সাঈদ আনোয়ার ম্যাচ জেতানো ব্যাটসম্যান, ওয়াকার ইউনিস ম্যাচ জেতানো বোলার। দলে বড়জোর তিনজন ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড় থাকে। সেখানে দুজনই ছিটকে পড়লে সুযোগ তো কমবেই।’
রমিজ এরপর বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রসঙ্গ তোলেন। ছয়টি প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে ওয়াসিম আকরাম এ সময় দুষ্টুমি করে বলেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে শুধু এটুকু মনে আছে, আমরা যতগুলো খেলেছি, সব কটিতেই হেরেছি। ক্যানবেরায় হেরেছিলাম, চল্লিশোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের বিপক্ষে।’ রমিজ বলে যান, ২৫ দিন আগে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছিলাম, তখন দলও চূড়ান্ত হয়নি। ঠিক কী কারণে?
অধিনায়কের উত্তর, ‘অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশন পাকিস্তানের কন্ডিশন থেকে আলাদা। আমাদের দলে নতুন খেলোয়াড় এত বেশি ছিল, অনেকেই এর আগে সেখানে যায়নি। ইনজামাম যায়নি। মুশতাক একবার গিয়েছে, (ওয়াসিম পাশ থেকে ধরিয়ে দেন, জাহিদ ফজলও...)। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আগেভাগে যাওয়া হয়েছিল।’
রমিজ এরপর অন্য প্রসঙ্গে যান। ’৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে ছিলেন দুজন লেগ স্পিনার—মুশতাক আহমেদ ও ইকবাল সিকান্দার। রমিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে দুজন লেগ স্পিনার নিয়ে বিশ্বকাপ জেতা, এটা অভূতপূর্বই। ইমরান বলেন, ‘’৮৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত লেগ স্পিনার খেলানো হয়নি। খেলালেও আঙুলের স্পিনার। আমার চিন্তা ছিল লেগ স্পিনার উইকেট নেওয়া বোলার। আক্রমণাত্মক এই মানসিকতা নিয়ে ’৯২–তে প্রথম সফল হওয়া দলও পাকিস্তান।’
মুশতাক এ প্রসঙ্গে জানান, ক্যাম্পে ওয়াসিম ভেবেছিলেন মুশতাকের বিশ্বকাপে যাওয়া হবে না। কিন্তু পরের দিন ইমরান তাঁর কাঁধে হাত রেখে জানান, তিনি বিশ্বকাপে যাচ্ছেন এবং বোলিংয়ে মনোযোগ দিতে বলেন। ওয়াসিম এ সময় আলোচনায় যোগ দেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন, সিডনি প্রথম কয়েক দিন পাকিস্তান অনুশীলনের মাঠ পায়নি। অপেরা হাউসের পাশে একটি পার্কিং লটের ওপর সবুজ ঘাস আচ্ছাদিত জায়গায় তাঁরা কদিন অনুশীলন করেছেন। ওয়াসিমের তখন বার্গার খাওয়া নিষেধ ছিল আর সেই নিষেধাজ্ঞাটা এসেছিল ইমরানের কাছ থেকে। ওয়াসিম জানান, একদিন অনুশীলনের পর তিনি রেস্টুরেন্টে যান ইমরানের সঙ্গেই। ইমরান কোনো কাজে চেয়ার ছেড়ে ওঠার পর সুযোগ বুঝে তিনি বার্গারের অর্ডার দিয়েছিলেন। কী কপাল! বার্গারটা পরিবেশন করামাত্রই ইমরান হাজির! ওয়াসিম আরও জানান, গরমের ভেতর শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রাখতে ইমরানকে দেখেই তাঁদের ডাব (পানি) খাওয়ার অভ্যাস হয়েছিল।
ওয়াসিমের কথা শেষ হতে ইনজামামকে আলোচনায় টানেন রমিজ। ’৯২ বিশ্বকাপে তরুণ ইনজামামকে নিয়ে ইমরান ড্রেসিংরুমের আলোচনায় প্রায়ই বলতেন, এই ছেলে বিশ্বকাপ জেতাবে। ইনজামাম একটি ঘটনা জানান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক বাউন্ডারিসহ মাত্র ৫ রানে আউট হওয়ার পর শাওয়ার নেওয়ার সময় দলের এক সিনিয়র খেলোয়াড় তাঁকে এমন সব কথা বলেছিলেন যে তিনি কেঁদেই ফেলেন। কিন্তু পরের দিন ইমরান তাঁর ওই বাউন্ডারি শটটির এত প্রশংসা করেন যে ইনজামাম আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। সে যাহোক, ইমরান সে বিশ্বকাপে তাঁর খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কীভাবে সঞ্চারিত করেছিলেন, তার আরও একটি উদাহরণ দেন ওয়াসিম। ওয়াইড ও নো বল নিয়ে বিশ্বকাপের শুরুতে ওয়াসিম বেশ সমস্যায় ভুগছিলেন। সকালে নাশতা করতে গিয়ে খবরের কাগজে ওয়াসিম দেখেন তাঁর অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি চাই ওয়াসিম জোরে বল করুক। ওয়াইড–নো নিয়ে ভাবার দরকার নেই।’
ইমরান পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনাটার বিষয়ে প্রথম কখন মুখ খুলেছিলেন? ওয়াসিম ধরিয়ে দেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ রানে অলআউট হওয়ার পরও ‘তিনি বলেছিলেন আমরা বিশ্বকাপ জিতব’। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হার এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫৩ রানে জিতেছে পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বৃষ্টির কারণে ফল হয়নি। ওয়াসিমের কথার পর ইমরান এ বিষয়ে নিজের দর্শনটা ব্যাখ্যা করেন, যেটা আসলে অধিনায়ক হিসেবে তিনি সব সময়ই মাঠে ফলিয়েছেন, ‘হেরে গেছি, এটা ভাবলে হারের পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারবেন না। হারের মুখে জেতার ইচ্ছাটা প্রবল থাকলেই শুধু ঘুরে দাঁড়ানোর পথটা বের করা যায়।’
পরিবেশ হালকা করতে রমিজ ইনজামামের রান আউটের প্রসঙ্গ টানেন। জন্টি রোডসের সেই বিখ্যাত ফিল্ডিং। এ নিয়ে হাসিঠাট্টা চলার মধ্যেই উঠে এল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ইমরানের গায়ে বাঘের ছবিওয়ালা সেই টি–শার্টের প্রসঙ্গ। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে ম্যাচটি জিততেই হতো পাকিস্তানকে। টসের সময় ওই টি–শার্টটি পরেছিলেন ইমরান। বলেছিলেন, ‘আমি চাই, আমার দল আজ কোণঠাসা বাঘের মতো খেলুক।’ রমিজ এ প্রসঙ্গে ইমরানের কাছে জানতে চাইলে অধিনায়ক বলেন, ‘১৯৮৭ বিশ্বকাপে লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ম্যাচটি খেলেছিলাম, টি–শার্টটি সে সময়ের। সেই দিনও টি–শার্টটি পরেছিলাম।’
ওয়াসিম স্মরণ করেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তিনে নেমেছিলেন ইমরান। অথচ তিনে ব্যাট করার কথা ছিল ইনজামামের। ইমরানের ব্যাখ্যা, ‘সে তখন দলে নতুন। তাকে চাপমুক্ত রাখতে ও নতুন বলটা কাজে লাগাতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’ সে ম্যাচেই ৩৭ বলে ৬০ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ক্রিকেট বিশ্বে প্রথম নিজের জাত চেনান ইনজামাম। সেই ইনিংস নিয়ে ইনজামাম স্মরণ করেন, ‘ইমরান ভাই বলেছেন, নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে। আর জাভেদ ভাই বলেছেন বড় শট খেলো না...আউট হয়ে ফেরার পর ইমরান ভাই বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, খুব ভালো ইনিংস খেলেছ।’
আমার পরিকল্পনা ছিল ইয়র্কার মারব। ইমরান ভাই বলেছিলেন, ইয়র্কারের মুখোমুখি হতে হবে সেটা সে আঁচ করেছে। লেংথ থেকে ইনসুইং করো। লুইস বড় পা নিয়ে ইয়র্কার ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লেংথ থেকে বলটা ভালো ঢুকেছিল। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, আমার সেরা স্পেল কোনটি। ওই মুহূর্তে ওই বোলিংটাই।ওয়াসিম আকরাম
আড্ডার মেজাজে এমন সব গল্পের পর রমিজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ওয়াসিম আকরামের সেই অবিস্মরণীয় দুটি ডেলিভারির প্রসঙ্গ টানেন। দুটি ডেলিভারির পেছনের গল্প জানতে চান। একটু জানিয়ে রাখা ভালো, ফাইনালে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৪৯ রান তুলেছিল পাকিস্তান। রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড ৩৪.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪১ থেকে ওই ওভার শেষে ১৪১/৬ স্কোর নিয়ে চাপে পড়ে। কারণ? ওই ওভারের শেষ দুই বলে অবিশ্বাস্য দুটি ডেলিভারিতে অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে তুলে নেন ওয়াসিম। ল্যাম্বকে ভেতর থেকে বের হওয়া বলে বোল্ড করেন, এরপর লুইসকে নিখুঁত ইনসুইংয়ে বোল্ড। ওয়াসিম সেই স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘নিল ফেয়ারব্রাদারের সঙ্গে অ্যালান ল্যাম্বের ভালো একটি জুটি হয়েছিল। ফেয়ারব্রাদারের সঙ্গে কাউন্টিতে খেলেছি। পরে জেনেছি, ফেয়ারব্রাদার ল্যাম্বকে বলেছিলেন, সে (ওয়াসিম) রাউন্ড দ্য উইকেট এলে বল বের করবে। তখন রিভার্স সুইংও হচ্ছিল। ল্যাম্ব ভেবেছিল, রাউন্ড দ্য উইকেট এসে বল বের করবে কীভাবে? ফেয়ারব্রাদার বলেছিলেন, তুমি শুধু বলটা আস্তে করে ঠেকাবে। আমি রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে জোরের সঙ্গে মিডল স্টাম্প থেকে বল বের করার চেষ্টা করেছি।’
রমিজ এরপর পরের ডেলিভারিটি সম্পর্কে জানতে চান। স্মরণ করিয়ে দেন, ওভারের সেই শেষ ডেলিভারিটির আগে দলের সবাই মিলে ছোটখাটো একটি মিটিং করে ফেলেছিলেন যে কী ডেলিভারি করা যায় লুইসকে। ওয়াসিম বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল ইয়র্কার মারব। ইমরান ভাই বলেছিলেন, ইয়র্কারের মুখোমুখি হতে হবে সেটা সে আঁচ করেছে। লেংথ থেকে ইনসুইং করো। লুইস বড় পা নিয়ে ইয়র্কার ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লেংথ থেকে বলটা ভালো ঢুকেছিল। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, আমার সেরা স্পেল কোনটি। ওই মুহূর্তে ওই বোলিংটাই।’ ইমরান যোগ করেন, ‘ইনজামামের ইনিংসটির মতোই তোমার ওই স্পেলের বোলিং—ওটা জেতানো ইনিংস, এটা ম্যাচ জেতানো বোলিং।’
ফাইনালে তিনে নেমে নিজের ৭২ রানের ইনিংস নিয়ে ইমরান বলেন, ‘সুইং খেলতে পারি, চারে জাভেদও আছে—এসব ভেবেই তিনে নেমেছিলাম।’ ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেন করা ইয়ান বোথাম নাকি এখনো তাঁর আউটটি মেনে নিতে পারেননি বলে জানান রমিজ। ক্যাচটি নেওয়া উইকেটকিপার মঈন খান দাবি করেন, বল তো তাঁর গ্লাভসে লেগেছিল। ওয়াসিমও দাবি করেন, শব্দ শুনেছি। রমিজ এরপর স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান দলের একটি সংগীত ছিল, যেটা প্রেরণার জন্য বানানো হয়েছিল। ইমরান বলেন, কাওয়ালি থেকে সেটা বানানো হয়েছে। আমরা তো বাসের মধ্যেও গানটি গেয়েছি, মনে আছে?
আয়োজনের শেষ দিকে এসে রমিজ ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি স্মরণ করেন। ইমরানের বলে ক্যাচটি নিয়েছিলেন রমিজ নিজেই। ২২ রানে জেতার পর রমিজের দুই হাত তুলে দৌড়টা স্মরণীয় হয়ে আছে পাকিস্তান ক্রিকেটে। রমিজ মজা করে বলেন, বোলারদের অনেক ক্যাচই তো আমরা ছেড়েছি কিন্তু ওই ক্যাচটি...। ইমরান এরপর আর কথা শেষ করতে দেননি, ‘ক্যাচ তো অনেকভাবেই পড়তে পারে। কিন্তু যারা পুরো চেষ্টা করে না এবং সমস্যার মুখোমুখি হয় না, তাদের প্রতি আমার বিরক্তি আছে।’
রমিজ ইমরানের কাছে জানতে চান, আপনার ক্যারিয়ারে ১৯৯২ বিশ্বকাপের জায়গা কোথায়?
ইমরান বলেন, ‘সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছিলাম। ক্রিকেটের প্রতি টানটাও চলে গিয়েছিল। ম্যাচ খেলার কোনো ক্রিকেটীয় যুক্তি ছিল না। কিন্তু এরপরও সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছি বিশ্বকাপ জিতে। কারণ, এটা জানতাম, বিশ্বকাপ জিততে না পারলে ক্যানসার হাসপাতাল বানাতে পারব না। আরেকটি বিষয়, পাকিস্তানিদের আনন্দ, যে যেখানেই থাকুক, পাকিস্তানিদের মুখে যে আনন্দ দেখেছি, সেটা সবচেয়ে সন্তুষ্টির।’
উপস্থিত সবাই মাথা নাড়িয়ে একবাক্যে তা স্বীকার করে নেন।