‘মারুফা, মারুফা’—নিউল্যান্ডসের গ্যালারিতে তখন একটিই স্লোগান।
স্লোগান না তুলে উপায় ছিল না বাংলাদেশের সমর্থকদের। কী বোলিংটাই না করছিলেন ১৮ বছর বয়সী এক পেসার। গতি তো ছিলই, ছিল গতি বিভ্রমও। আর এই দুয়ের সংমিশ্রনেই শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারকে তাসের ঘর বানিয়ে দিলেন মারুফা আক্তার।
নিজের প্রথম ওভারেই শ্রীলঙ্কার সেরা ব্যাটার চামারি আতাপাত্তুকে মিড অনে ক্যাচ বানিয়েছিলেন বাংলাদেশ নারী দলের পেসার। সেই মারুফা পরের ওভারের প্রথম দুই বলে পেয়ে গেলেন আরও ২ উইকেট। গতির তারতম্যে বিভ্রান্ত ভিষ্মি গুনারত্নে ফিরতি ক্যাচ দিলেন মারুফার হাতে। পরের বলে বোল্ড আনুশকা সঞ্জীবনী। ৩ উইকেট পেয়ে যাওয়া মারুফা তখন ৮ বল করে একটি রানও দেননি!
হ্যাট্রটিক অবশ্য করতে পারেননি আজই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলা মারুফা। আর ম্যাচটাও হাসিমুখে শেষ করতে পারেননি বাংলাদেশের জার্সিতে তৃতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা বোলার। দল যে শেষ পর্যন্ত হেরেছে।
মারুফার দারুণ বোলিংয়ে ৫.২ ওভারেই ২৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর মারুফা আর উইকেট পাননি (৪–১–২৩–৩)। উইকেট পাননি বাংলাদেশের অন্য কোনো বোলারই। ফল, দারুণ শুরুর পরও ৭ উইকেটে হার। যা কিনা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের টানা ১৩তম হার। আর টানা দুই জয়ে এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করল শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার ওপেনার হর্ষিতা সামারাবিক্রমা ও নিলাক্ষী ডি সিলভাই বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেছেন ১০৪ রান। মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লঙ্কানদের এটিই প্রথম শতরানের জুটি। হর্ষিতা যখন স্বর্ণা আক্তারকে চার মেরে ম্যাচের সমাপ্তি টানলেন লঙ্কানদের হাতে তখনো ১০ বল ছিল।
জুটিটা অবশ্য থামতে পারত ১৭ রানেই। নাহিদা আক্তারের বলে গালিতে নিলাক্ষীর তোলা ক্যাচ ছেড়েছেন মুরশিদা খাতুন। হর্ষিতাও ব্যক্তিগক ৪৫ রানের মাথায় বাংলাদেশের উইকেটেকিপারের ব্যর্থতায় স্টাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচেছেন।
৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬৯ রান করতে হর্ষিতা খেলেছেন ৫০ বল। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটিই লঙ্কান মেয়েদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। নিলাক্ষী করেছেন ৪১ রান। তাঁর ৩৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ২টি চারে।
৮ উইকেটে ১২৬ রান করে বাংলাদেশ। নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ১২৪/৮, ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ভারতের বিপক্ষে।
২০১৪ সাল থেকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচটি ছিল ২০ ওভারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৮তম। সেই ম্যাচেই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ ইনিংসটা পায় টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ১২৬ রান করে নিগার সুলতানার দল। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল ১২৪/৮, ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ভারতের বিপক্ষে।
তবে ইনিংসটা আরও বড় হতেই পারত। হয়নি শেষ ১০ ওভারের ব্যর্থতায়। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৮ রান তোলা বাংলাদেশ ১০ ওভারে করেছিল ৩ উইকেটে ৭২। এরপর বাজে ব্যাটিং ও বাজে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের মূল্য দিয়ে শেষ ১০ ওভারে ৫৪ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ, এ সময়ে হারায় ৫ উইকেট।
ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেছেন ৩২ বল খেলা সোবহানা মোস্তারি। অধিনায়ক নিগার সুলতানা ৩৪ বলে করেছেন ২৮ রান। সোবহানা ৫টি চার মারলেও আতাপাত্তুর দয়ায় একবার বেঁচে যাওয়া নিগার মেরেছেন মাত্র ১টি চার।
ইনিংসের ১০ম ওভারের চতুর্থ বলের আগে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন নিগার। ক্রিজ ছেড়ে আগেভাগেই বেরিয়ে যাওয়ায় বোলার আতাপাত্তু রানআউট করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। কিন্তু কী মনে করে আতাপাত্তু আবার প্রত্যাহার করে নেন আউটের আবেদন। আম্পায়ার ডেড বলের সংকেত দিয়েই কাজ সারেন।
বাংলাদেশের ইনিংসে এ ছাড়া ১৩ বলে ২০ রান করেছেন ওপেনার শামিমা সুলতানা। তা ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন শুধু লতা মণ্ডল (১১)।