কানাডার ক্লাব পর্যায়ের দলের বিপক্ষে জিততে সময় বেশি নেওয়ায় বিরক্ত ইনজামাম
বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের ব্যাটিংয়ে আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার পরামর্শ অনেকেই দিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন শহীদ আফ্রিদি, ইউনিস খান আর রমিজ রাজার মতো সাবেক ক্রিকেটাররা। এবার পাকিস্তান দলকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে বললেন ইনজামাম–উল–হকও।
কানাডার বিপক্ষে ১০৬ রান তাড়ায় পাকিস্তানের ১৭.৩ ওভার পর্যন্ত সময় নেওয়া ভালো লাগেনি ইনজামামের। এই সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক বলেছেন, কানাডার ক্লাব পর্যায়ের বোলিংয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের এত বেশি ওভার সময় নেওয়া উচিত হয়নি। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য বাবর–রিজওয়ানকে কাঠগড়ায়ও দাঁড় করিয়েছেন তিনি।
এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অভিযান শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হার দিয়ে। এরপর ভারতের কাছেও হারেন বাবর আজমরা। তবে মঙ্গলবার তৃতীয় ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ৭ উইকেটের ব্যবধানে জয়ের খাতা খুলেছে তারা। তবে স্বল্প রান তাড়ায় কানাডার বিপক্ষে জিততে ১৮তম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে অসন্তুষ্ট ইনজামাম। ম্যাচের পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনায় শুরুতেই বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি, ‘পাকিস্তান সমর্থকদের জন্য খুশির ব্যাপার হচ্ছে, যাক, অবশেষে জয়ের খাতা তো খোলা গেল। কিন্তু পাকিস্তান যেভাবে জিতেছে, তাতে আমি খুশি নই। আমার মনে হয়েছে, পাকিস্তানের ১৪ ওভারের মধ্যে জেতার দরকার ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে রান রেটে এগিয়ে যেতে এটার দরকার ছিল।’
‘এ’ গ্রুপে প্রথম দুই ম্যাচে জেতা যুক্তরাষ্ট্রের রান রেট এখন +০.৬২৬। আর কানাডার বিপক্ষে জেতার পর পাকিস্তানের রান রেট ০.১৯১। যুক্তরাষ্ট্র যদি গ্রুপে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ হেরে যায় আর পাকিস্তান তাদের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তখন দুই দলের মধ্যে রান রেটে এগিয়ে থাকা দল সুপার এইটে উঠবে। আর এই সমীকরণ সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলেই কানাডার বিপক্ষে পাকিস্তানের দ্রুত ম্যাচ জেতা দরকার ছিল বলে মনে করেন ইনজামাম।
বাবরদের জন্য কাজটা কঠিন ছিল, সেটাও মনে হয়নি ইনজামামের। এ ক্ষেত্রে ইনজামাম যুক্তি দিয়েছেন এভাবে, ‘আপনি যখন ১০৬ রানে অলআউট করতে পারলেন, তখন ১৪ ওভারের মধ্যে জিততে কত করে লাগত? ওভারপ্রতি ৭, সাড়ে ৭ রানের মতো। আমার মনে হয় না এটা খুব কঠিন ছিল। আমি খুব বড়মুখ করে বলতে চাইছি না, কিন্তু কানাডার এই দলটা একটা ক্লাব পর্যায়ের দল। ওদের বোলাররা ওই মানেরই। আমাদের এর সুবিধা নেওয়া উচিত ছিল। উইকেটের যে কন্ডিশনই হোক, বিশ্বকাপে এটা আপনাদের তৃতীয় ম্যাচ। অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে। বড় দলের ধরনই হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারা। ওরা ১০৬ করার পরও যদি ১৭ ওভার লাগে, তাহলে তো ওরা ১২০-২৫ করলে আমরা আবারও আটকে যেতাম।’
রান তাড়ায় বাবর ও রিজওয়ানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ৬২ বল খেলে তোলে ৬৩ রান। বাবর ৩৩ বলে ৩৩ রান করে আউট হলেও রিজওয়ান অপরাজিত ছিলেন ৫৩ বলে ৫৩ রান করে। যা আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বচেয়ে মন্থর ফিফটি। এই দুজনের ব্যাটিংকে তাই কাঠগড়ায় তুলেছেন ইনজামাম, ‘বাবর আর রিজওয়ান আমাদের প্রধান দুই ব্যাটসম্যান। দুজনই বিশ্বমানের খেলোয়াড়। দুজন পুরোটা সময় মাঠে থাকল। এরপরও যদি এই কানাডার বোলিংয়ের বিপক্ষে ওভারপ্রতি ৬-৭ রান করে তোলা না যায়, আমার মনে হয় না (এমন ব্যাটিংয়ে) কোনো লাভ হয়। পারফরম্যান্স হচ্ছে যেটা আপনার দলের দরকার, সেটা করা।’
এবারের বিশ্বকাপে শাদাব খান ও ইমাদ ওয়াসিমকে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানের মতো খেলাচ্ছে পাকিস্তান। ৭-৮ নম্বর পর্যন্ত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেললে আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগও নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ইনজামাম। এ বিষয়ে অধিনায়ককে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবরের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, তোমাদের আরেকটু আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। অ্যাপ্রোচে আরও আক্রমণাত্মক হতে হবে। তোমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছ, ভারতের কাছে হেরেছ। জানো পাকিস্তানজুড়ে সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু এসব পেছনে ফেলে তোমাদের এগোতে হবে। ইনশা আল্লাহ, আমরা সামনেও জিতব, রান রেট আরও ভালো হবে। আমরা যদি সুপার এইটে যাই, সেখানে নির্ভয়ে ক্রিকেট খেলতে হবে।’
পাকিস্তানের পরের ম্যাচ ১৬ জুন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে এর আগেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের ফলে পাকিস্তানের পরবর্তী গন্তব্য নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।