‘পরীক্ষা’য় পাস করতে করতে খাজা স্মিথ–লাবুশেনের চেয়ে এগিয়ে
ইনিংসের ৬৯তম ওভার। ৯৮ রানে ক্রিজে থাকা উসমান খাজা ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকসের বলে লেট কাট খেললেন। শট খেলে খাজা দৌড় দিলেন ঠিকই, তবে সেটা অবশ্য রানের জন্য নয়। চিরাচরিত উদ্যাপনের জন্য। খাজা দৌড়ে গিয়ে এরপর যেভাবে ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি উদ্যাপন করলেন, তাতে হয়তো এটাকে বুনো উল্লাসই বলতে হবে। আর এই উল্লাসই বলে দিচ্ছিল এই সেঞ্চুরি আর পাঁচটা সেঞ্চুরির মতো নয়।
সেঞ্চুরি তো সেঞ্চুরিই, প্রতিটি ব্যাটসম্যানের জন্য তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে, সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হোক কিংবা পাড়ার ক্রিকেটে হোক। এরপরও কিছু ঘটনা, কিছু গল্প বিশেষ এই সেঞ্চুরিগুলোকে আরও বিশেষ করে তোলে। খাজার ক্ষেত্রেও কি তেমনটাই ঘটেছে?
খাজার ক্যারিয়ারের পুনর্জন্ম ২০২১–২২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজে। প্রায় আড়াই বছর পর দলে ফিরে সিডনিতে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন। তাঁর টানা দুই সেঞ্চুরির পর বিশ্লেষকদের ভাব ছিল এমন—দারুণভাবে ফিরে এসেছে বটে, তবে সেঞ্চুরি তো করেছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। আসল পরীক্ষা তো হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মাটিতে। বিশ্লেষকদেরই-বা কী দোষ, স্পিনের বিপক্ষে খাজা যে এর আগে তেমন একটা সাবলীল ছিলেন না।
খাজা এবার ফিরেছিলেন টিকে থাকতেই। অস্ট্রেলিয়া দলে উঁকি দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য নয়। পাকিস্তানে গিয়ে এই ওপেনার তিন টেস্টে ৫ ইনিংসে পেলেন দুই সেঞ্চুরি, একটি ৯৭ রানের ইনিংসও ছিল। এই বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনিতে ১৯৫ রানের ইনিংসও খেলেন খাজা। কিন্তু ভারত সফরের আগে আবারও সেই প্রশ্ন? ভারতের মাটিতে স্পিনটা সামলাতে পারবেন তো খাজা? যার উত্তর খাজা দিয়েছিলেন বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হয়ে। বিরাট কোহলির নামটা ছিল তালিকায় তাঁর পরে।
কী ভাবছেন, এবারের অ্যাশেজের আগে বহুবার নিজেকে প্রমাণ করা খাজাকে নিয়ে প্রশ্নটা কি ওঠেনি? উঠেছে, যার কারণ ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর অতীত। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের আগপর্যন্ত ইংল্যান্ডের মাটিতে খাজার গড় ১৭.৭৮। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দুই ইনিংসে ব্যর্থতা এই আলোচনাকে আরও উসকে দিচ্ছিল। এবার হয়তো খাজার এমন উল্লাসের কারণটা খুঁজে পাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিজের উদ্যাপন নিয়ে খাজা যা বলেছেন, তাতে মনে হয়, সবটা করেছেন অবচেতন মনেই। তবে অবচেতন মনেও যা করা হয়, তার ওপরেও তো নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রভাবই থাকে, খাজার কণ্ঠেও সেই ইঙ্গিত।
মেয়ে আয়েশাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে খাজা বলেছেন, ‘সত্যি বলতে এমন উদ্যাপনের কারণ আমি জানি না। হতে পারে ইংল্যান্ডের তিনটি অ্যাশেজে সফরের দুটি থেকেই বাদ পড়েছিলাম এ কারণে। আর মিডিয়ায় আমি চোখ রাখি না। মাঠে নামার সময়, নেটে ব্যাটিং করতে যাওয়ার সময় দর্শকেরা বলছিল, আমি ইংল্যান্ডে রান করতে পারি না, তাই হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে আবেগটা একটু বেশি ছিল।’
বারবার ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণ করা খাজার দাবি, তাঁর নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই, ‘এটা আমি বারবার বলছি, ভারতেও এমনটা হয়েছে। এমন না যে আমার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তবে গত ১০ বছরের সাফল্য যে অপ্রত্যাশিত ছিল না, সেটা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রান করে দেখিয়ে দেওয়াটা দারুণ কিছুই।’
খাজা সম্পর্কে দুটো পরিসংখ্যান এখন মনোযোগের দাবি রাখে। এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার দলের সেরা ব্যাটসম্যান কে? দুবার ভাবার প্রয়োজন নেই, স্টিভ স্মিথ। অন্তত এই সংস্করণে তাঁর রেকর্ড সেই কথাই বলে। স্মিথের পর মারনাস লাবুশেনের নাম বলবেন কেউ কেউ, আর যা-ই হোক, টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যানকে তো আর হিসাবের বাইরে রাখা যায় না। তবে একটা জায়গায় কিন্তু তাঁদের পেছনে ফেলেছেন খাজা।
২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের মোট রানের ১৯ শতাংশ এসেছে খাজার ব্যাট থেকে, যা স্মিথ, লাবুশেনের চেয়ে বেশি, সঙ্গে এ সময়ে কমপক্ষে ১৫ ইনিংস খেলা কোনো দলের ব্যাটসম্যানেরই দলের মোট রানে এত বেশি অবদান নেই। এ সময়ে দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৭ ইনিংসে স্মিথের রান যেখানে ৬৯৩, সেখানে ১৯ ইনিংসে খাজার রান ১১০৫। গড়টা ৭০-এর বেশি—৭৩.৬৬। একই সময়ে লাবুশেনের রান ১৯ ইনিংসে ৬৩০।
এত কিছুর পরও কি খাজাকে নতুন কোনো পরীক্ষা দিতে হবে?