টেস্টের আগে বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে বিকল্পদের নিয়েও
সূর্য উঠেছে ঠিকই, তবে তার দেখা নেই। মেঘে ঢাকা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আকাশ। বইছে মৃদুমন্দ হাওয়া। ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা। ঝিমুনি আনার মতো এমন আবহাওয়ায়ই মাঝমাঠে স্লিপ কর্ডন সাজিয়ে অনুশীলন করছিলেন লিটন দাস। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের দল থেকে বাদ পড়া লিটনের হাতে উইকেটকিপিং গ্লাভস। প্রথম স্লিপে মুমিনুল হক ও দ্বিতীয় স্লিপে শাহাদাত হোসেন। একটু দূরে গালিতে দাঁড়িয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ। পালা করে তাঁদের দিকে লাল বল ছুড়ছেন নিক পোথাস ও ডেভিড হেম্প।
এর একটু আগে ২ নম্বর মাঠে বোলিং করছিলেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা দুই তরুণ পেসার নাহিদ রানা ও মুশফিক হাসান। তাঁদের বোলিংয়ের গতির সামনে সতর্ক বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। জাকির হাসান তো রানার বল খেলতে গিয়ে বাঁ হাতে চোটও পেলেন। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পরে যদিও বলেছেন জাকিরের চোট গুরুতর কিছু নয়, তবু কৌতূহল ছড়াল—জাকির না খেললে কে খেলবেন? সাদমান হোসেনের নামটাই আগে এল সম্ভাব্য হিসেবে। অনেকে তাওহিদ হৃদয়ের কথাও বললেন। মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে তাঁকে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ শুরু হতে যাওয়া সিলেট টেস্টের আগের ছবিগুলো জোড়া লাগালেই বুঝতে পারবেন, গত কয়েক বছরে একটু স্থিতিশীলতা খুঁজে পাওয়া টেস্টের বাংলাদেশ দল নতুন এক পরীক্ষার সামনে এসে দাঁড়িয়ে, যার নাম বেঞ্চের পরীক্ষা। গত বছর পেসারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি শরীফুল ইসলামের সিলেট টেস্ট খেলা নিয়ে সংশয় আছে। অতিরিক্ত ক্রিকেটে তিনি ক্লান্ত। টেস্টের প্রথম পছন্দ পেসারদের মধ্যে ইবাদত হোসেনকে চোটের কারণে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদও এই টেস্ট সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। বাকি রইলেন শুধু খালেদ আহমেদই, যিনি টেস্ট দলে নিয়মিত হলেও সর্বশেষ খেলেছেন গত বছর এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
যে পেস আক্রমণের অফুরান সম্ভাবনা নিয়ে এত আলোচনা, চোট-আঘাত ও অতিরিক্ত ক্রিকেটের ক্লান্তিতে তাতেই এখন যেন ভাঙনের সুর! এ অবস্থায় বিকল্প পেসারদের সুযোগ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সিলেট টেস্টের আগে গত দুই মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লিগে ভালো করা নাহিদ ও মুশফিকের নাম জোরালো হচ্ছে এ কারণেই। এ বছর বাংলাদেশ দল টেস্ট খেলবে ১২টি। ইবাদত ফেরার আগে খালেদ-শরীফুলের সঙ্গে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলাতে হবে এই দুজনকেই। যার শুরুটা হয়তো হচ্ছে সিলেট টেস্ট থেকেই।
বিকল্প ভাবতে হচ্ছে ব্যাটিংয়েও। তামিম ইকবালের এ বছর আর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা হচ্ছে না। মুশফিক চোটের কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজ খেলছেন না। সাকিব আল হাসান তো কয়েক বছর ধরেই টেস্টে অনিয়মিত। বিপিএলের পর বিরতি দিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে খেলায় ফিরলেও সাকিবকে রাখা হয়নি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেট টেস্টের দলে। তবে ৩০ মার্চ শুরু হতে যাওয়া চট্টগ্রাম টেস্ট সাকিব খেলতে পারেন, এমন গুঞ্জন আছে। চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে খেলায় ফিরলেও এটা নিশ্চিত যে তাঁকে এ বছরের সব কটি টেস্টে পাওয়া যাবে না। অভিজ্ঞদের অবর্তমানে গত নভেম্বরে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হওয়া শাহাদাত হোসেনকে এ বছর মিডল অর্ডারে নিয়মিত হতে দেখা যাবে। সুযোগ পাবেন ১৩টি টেস্ট খেলা সাদমান ইসলামও।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সংবাদ সম্মেলনে কাল মুশফিকের না থাকার প্রসঙ্গে এল বিকল্প ব্যাটসম্যান প্রসঙ্গও। একজন এ ক্ষেত্রে কোচের যা বলার হাথুরুসিংহে সেটাই বলেছেন, ‘মুশির অভিজ্ঞতা আমরা মিস করব। এ ধরনের অভিজ্ঞতার বিকল্প খুঁজে বের করা খুবই কঠিন। একই সঙ্গে আমাদের তরুণ খেলোয়াড়দের সমর্থন দিতে হবে। হৃদয় দলে যোগ দিয়েছে। দুজন তরুণ ব্যাটসম্যান আছে দলে—দীপু ও সাদমান। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য রোমাঞ্চকয় সময়। আমি তাদের বলব, এই সুযোগগুলো যেন ওরা দুহাতে লুফে নেয়।’
কোচের বার্তাটা নিশ্চয়ই শুধু ব্যাটসম্যানদের জন্য নয়, বোলারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।