‘হাইব্রিড’ এশিয়া কাপের টাকাপয়সা নিয়ে দুই স্বাগতিক পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কার বিরোধ

২০২৩ সালে হাইব্রিড মডেলে যৌথভাবে এশিয়া কাপ আয়োজন করেছিল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাএক্স

ভারত সরকার রোহিত-কোহলিদের পাকিস্তানে পাঠাতে রাজি না হওয়ায় গত বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে এশিয়া কাপ আয়োজন করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। প্রথমবার দুই দেশ মিলে এশিয়া কাপ আয়োজনের ভাবনাটি ‘হাইব্রিড মডেল’ নামে পরিচিতি পায়। যদিও আয়োজন-স্বত্ব পিসিবির হাতেই ছিল। শেষ পর্যন্ত সফলভাবেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

তবে এশিয়ার কাপের ১৬তম আসর শেষ হওয়ার পাঁচ মাস হতে চললেও আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ঝামেলা রয়েই গেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’ জানিয়েছে, হাইব্রিড মডেলে আয়োজিত এশিয়া কাপের অর্থ পরিশোধ এখনো বাকি থাকা নিয়ে পিসিবি ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) মধ্যে মতবিরোধ একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

গত বুধবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এসএলসি সভাপতি শামি সিলভা দাবি করেন, এশিয়া কাপে হোটেল বিল এখনো পরিশোধ করেনি পিসিবি। জবাবে এসিসি সভাপতি জয় শাহ বিষয়টি নিয়ে শামি সিলভাকে সরাসরি পিসিবির সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বুধবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে
এক্স

যদিও সূত্রের বরাত দিয়ে ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’ জানিয়েছে, পিসিবি নিজেরাই এশিয়া কাপের অনেক বিল এখনো পায়নি। এ কারণে এসএলসিকে তাদের পাওনা পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। যেমন—টুর্নামেন্ট চলাকালে এক দেশ থেকে আরেক দেশে দ্রুততম সময়ে যাতায়াতে দলগুলো যে চার্টার্ড উড়োজাহাজ ব্যবহার করেছে, সেটার বিল নাকি এখনো পায়নি পিসিবি। গত নভেম্বরে এসিসির কাছে চার্টার্ড ফ্লাইটের অর্থও দাবি করেছিল পিসিবি। তবে তাদের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এশিয়ান ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

পিসিবির একটি সূত্র সে সময় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছিল, টুর্নামেন্টের আয়োজন-স্বত্ব বাবদ ২৫ লাখ মার্কিন ডলারের সঙ্গে টিকিট ও স্পনসরশিপ অর্থের বাইরে পিসিবি এসিসির কাছে বাড়তি অর্থ চেয়েছে

আরও পড়ুন

বাড়তি এ অর্থ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দলগুলোর চার্টার্ড ফ্লাইট, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও অতিরিক্ত হোটেল ভাড়ার মতো বাড়তি খরচের কারণে চাওয়া হয়েছে, যেগুলো এশিয়া কাপের প্রাথমিক বাজেটের মধ্যে ছিল না।

গত বছর এশিয়া কাপে দলগুলো চার্টার্ড বিমানে ভ্রমণ করেছে
পিসিবি

এককভাবে এশিয়ান কাপ আয়োজন করতে না পারায় বাড়তি ব্যয়ের বোঝা যে পাকিস্তানকেই টানতে হবে, সেটা ভালোভাবেই জানত পিসিবি। এ নিয়ে এসিসির সঙ্গে তাদের বাদানুবাদও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পিসিবি বাড়তি খরচ বহন করতে রাজিও হয়েছে। কিন্তু এসিসি চার্টার্ড ফ্লাইট বুকিংয়ের দায়িত্ব ক্ল্যাসিক ট্রাভেল নামে শ্রীলঙ্কার এক কোম্পানিকে দিলে নতুন বিতর্ক শুরু হয়।

আরও পড়ুন

চারটি চার্টার্ড ফ্লাইটের জন্য পিসিবি আগেই ২ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ ডলার দিয়ে রেখেছিল। পাশাপাশি তারা এসএলসিকে ভেন্যু ভাড়ার জন্য ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৫ ডলার দিতে সম্মত হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করেছে পিসিবি। শর্ত অনুযায়ী, বাকি ২৫ শতাংশ এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার পরপরই দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস হতে চললেও বাকি পাওনা বুঝে পায়নি এসএলসি। এসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় শামি সিলভা সেই অর্থ না পাওয়ারই দাবি তুলেছিলেন।

কিন্তু হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপ আয়োজন-স্বত্ব বাবদ এসিসি পিসিবিকে ২৫ লাখ ডলার দিলেও সব মিলিয়ে তাদের খরচ হয়েছে ৪০ লাখ ডলারের মতো। যেহেতু এসিসি বাড়তি প্রায় ১৫ লাখ টাকা পিসিবিকে দিতে রাজি হয়নি, তাই পিসিবিও এলএলসির বাকি পাওনা ঝুলিয়ে রেখেছে।

লাহোরের পরিবর্তে মুলতানে ২০২৩ এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচ আয়োজন করেছিল পিসিবি
এএফপি

যদিও খরচ বাড়ানোর পেছনে পিসিবির দায় দেখানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পিসিবি আয়োজিত ম্যাচগুলো শুধু লাহোরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসিসির অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিসিবি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ মুলতানে আয়োজন করে। পিসিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা তাঁর পরিবারকে কলম্বোয় নিতে চার্টার্ড ফ্লাইট ব্যবহার করেছেন, এমন অভিযোগও আছে। এ ধরনের বিষয় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের চলমান আর্থিক বিরোধকে আরও জটিল করে তুলেছে।