বিপিএলে কোন দলের কী শক্তি, কী দুর্বলতা—দ্বিতীয় পর্ব

বিপিএলের লোগোপ্রথম আলো

আজ শুরু বিপিএল। দলগুলো কেমন হলো, কোন দলের কী শক্তি, দুর্বলতা, সেসব জানার সময় তো এখনই। তবে এখনো দলগুলোতে কারা কারা খেলবেন তা চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষ করে বিদেশি খেলোয়াড়দের তালিকায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এখন যাঁরা তালিকায় আছেন, অনেকেই নাও আসতে পারেন শেষ পর্যন্ত। যাঁরা এসেছেন তাঁদের সবাই সব ম্যাচ খেলবেন না। টুর্নামেন্ট চলাকালেই দলগুলোতে যোগ হতে পারেন অনেক বিদেশি খেলোয়াড়। তাতে শক্তির ভারসাম্য এদিক-ওদিক হয়ে যেতে পারে অনেকটাই। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের তালিকাতেও আসতে পারে কিছু বদল। তবে আপাতত যে তালিকা আছে তে ধরেই করা হয়েছে এই হিসাব। আজ দ্বিতীয় পর্বে দেখুন রংপুর, বরিশাল, সিলেট ও খুলনার শক্তি-দুর্বলতা।

রংপুর রাইডার্স

শক্তি

রংপুরে আছে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের দারুণ মিশ্রণ। স্থানীয়দের মধ্যে মেহেদী হাসান, রাকিবুল হাসানদের মতো যেমন স্পিনার আছেন, তেমনি নাহিদ রানা, রেজাউর রহমানের মতো পেসার আছেন। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে থাকছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ওপেনিংয়ে থাকছেন ছন্দে থাকা সৌম্য সরকার, মিডল অর্ডার ও উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান। চোটে ভোগা সৌম্যকে অবশ্য শুরুর দিকে পাচ্ছে না রংপুর। বিদেশি ক্রিকেটার যাদের দলে নেওয়া হয়েছে তারাও দারুণ পারফর্মার। পাকিস্তানের ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ নিয়মিত বিপিএল খেলেন। নতুন সংযোজন নতুন আফগান সেনসেশন সেদিকউল্লাহ আতাল। আছেন অ্যালেক্স হেলস ও কার্টিস ক্যাম্ফার ও স্টিভেন টেলরও। সম্প্রতি গ্লোবাল সুপার লিগে জিতে আসায় আত্মবিশ্বাসীও দলটি।

দুর্বলতা

পেস বোলিংয়ে অভিজ্ঞ বড় নাম নেই এই দলে। সে ক্ষেত্রে নাহিদ-সাইফউদ্দিনের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।  

চমকে দিতে পারেন: আজিজুল হাকিম

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আজিজুল হাকিম খেলবেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে
বিসিবি

তাঁর নেতৃত্বেই যুব এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখে বাংলাদেশ। এনসিএলে প্রথমবার স্বীকৃতি টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেই ৯ ম্যাচে ১৩৬.৯৯ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৩৭ রান।

স্কোয়াড

অধিনায়ক: নুরুল হাসান
দেশি: নুরুল হাসান, মেহেদী হাসান, সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, রাকিবুল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, রেজাউর রহমান, নাহিদ রানা, ইরফান শুক্কুর, তৌফিক খান, আজিজুল হাকিম।
বিদেশি: অ্যালেক্স হেলস, ইফতিখার আহমেদ, সেদিকউল্লাহ আতাল, খুশদিল শাহ, কার্টিস ক্যাম্ফার, স্টিভেন টেলর, আকিফ জাভেদ।
আরও পড়ুন
ফরচুন বরিশাল

শক্তি

কী নেই ফরচুন বরিশালে? টপ অর্ডারে তামিম ইকবাল-নাজমুল হোসেন-ডেভিড ম্যালান-কাইল মায়ার্স-পাতুম নিশাঙ্কা; মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ নবী ও আরিফুল ইসলাম; লোয়ার অর্ডারে ঝড় তুলতে পারেন রিশাদ হোসেনও। বরিশালের নতুন বল হাতে নেবেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। যদিও তাঁকে ৫ ম্যাচ পাবে বরিশাল। তাঁর সঙ্গে নতুন বলে বোলিং করতে প্রস্তুত মায়ার্স। আছেন ফাহিম আশরাফ ও রিপন মণ্ডল ও চোট থেকে ফেরা ইবাদত হোসেন। পেস আক্রমণের চেয়ে স্পিন আক্রমণ আরও শক্তিশালী বরিশালের। এই দলে আছেন তাইজুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম ও মোহাম্মদ নবী।

দুর্বলতা

আফ্রিদি দল ছাড়লে পেস আক্রমণে গভীরতা কমবে বরিশালের। তামিম, মুশফিক, নাজমুল, ম্যালান—এদের প্রত্যেকের খেলার ধরনটা অনেকটা একইরকম। শুরুতে কিছুটা সময় নিতে এরা পছন্দ করেন। বিপিএল খুব বেশি রানের খেলা না হলেও কখনো এটাই বিপদের কারণ হতে পারে।

চমকে দিতে পারেন: আরিফুল ইসলাম

জাতীয় লিগ টি–টোয়েন্টিতে দারুণ খেলেছেন আরিফুল ইসলাম
ফাইল ছবি

২০ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের এনসিএলে স্ট্রাইক রেট ১৪২, ১৪টি ছক্কায় রান করেছেন ২১৩। কার্যকর অফ স্পিনেও।

স্কোয়াড

অধিনায়ক: তামিম ইকবাল
দেশি: তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, রিপন মন্ডল, ইবাদত হোসেন, নাঈম হাসান, তানভীর ইসলাম, রিশাদ হোসেন, তাইজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, প্রিতম কুমার, ইকবাল হাসান ইমন।
বিদেশি: শাহিন শাহ আফ্রিদি, ডেভিড ম্যালান, কাইল মায়ার্স, মোহাম্মদ নবী, জেমস ফুলার, পাতুম নিশাঙ্কা, ফাহিম আশরাফ, আলী মোহাম্মদ, জাহানদাদ খান, মোহাম্মদ ইমরান।
আরও পড়ুন
সিলেট স্টাইকার্স

শক্তি

ছন্দে থাকা জাকের আলীকে পাচ্ছে সিলেট। ব্যাটিংয়ে যেমন ছন্দে জাকের, বোলিংয়ে তানজিম হাসান। তিনিও খেলবেন সিলেটের হয়ে। বিপিএলের নিয়মিত পারফর্মার স্পিনার নাহিদুল ইসলামও আছেন এই দলে। তবে এমন কার্যকরী ক্রিকেটারদের সংখ্যা দলে খুব বেশি নয়। বিদেশিদের তালিকাকে ইংল্যান্ডের রিস টপলি ছাড়া আকর্ষণীয় নাম নেই। ভালো কিছু করতে হলে খেলতে হবে দল হিসেবেও।

দুর্বলতা

সিলেট পাবে না মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। জাকের ছাড়া ওই অর্থে ছন্দে থাকা কোনো ব্যাটসম্যান এই দলে নেই। জাকের ছাড়া ব্যাটিংয়ে পল স্টার্লিং, রনি তালুকদার, রাকিম কর্নওয়ালদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। পারবেন তো?

চমকে দিতে পারেন: জাওয়াদ আবরার

জাতীয় লিগ টি–টোয়েন্টিতে ভালো করেছেন জাওয়াদ আবরার
বিসিবি

এনসিএলে ঢাকা বিভাগের হয়ে ৩৯ বলে ৬২ রানের ইনিংসটির জন্যই বাজি ধরা যায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ওপেনারের ওপর।

স্কোয়াড

অধিনায়ক: আরিফুল হক
দেশি: মাশরাফি বিন মুর্তজা, জাকির হাসান, তানজিম হাসান, আরিফুল হক, জাকের আলী, রনি তালুকদার, আল আমিন হোসেন, রুয়েল মিয়া, নিহাদউজ্জামান, নাহিদুল ইসলাম, মেহেদী হাসান সোহাগ, টিপু সুলতান, জাওয়াদ আবরার।
বিদেশি: পল স্টার্লিং, জর্জ মানসি, রাকিম কর্নওয়াল, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, রিস টপলি, অ্যারন জোন্স, জন রাস জাগেসার।
আরও পড়ুন
খুলনা টাইগার্স

শক্তি

তুলনামূলক তরুণ ক্রিকেটারদের দল এটি। ক্রমশ দেশের ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা মেহেদী মিরাজের সঙ্গে এই দলে আছেন আফিফ হোসেন, মাহমুদুল হাসান, মাহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া দলে আছেন নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ নাঈমের মতো ক্রিকেটার। তবে তাদের শক্তি জায়গা বোধ হয় তিন অলরাউন্ডার—আবু হায়দার, জিয়াউর রহমান ও মাহফুজুর রহমান। জাতীয় লিগ টি–টোয়েন্টির সেরা ক্রিকেটার হয়ে দারুণ ছন্দে আছেন আবু হায়দার, স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মাহফুজও অনেক দিন ধরে পারফর্ম করছেন। আর জিয়াউর রহমানের সামর্থ্য নিয়ে তো প্রশ্ন তোলার সুযোগই নেই! বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকছেন আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান, মোহাম্মদ নেওয়াজও। নেওয়াজের সঙ্গে মিরাজ, নাসুম, মাহফুজের স্পিন বোলিং সমন্বয়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করতেই পারে খুলনা।

দুর্বলতা

বড় কোনো পেস তারকা খুলনাতে নেই। ভরসা রাখতে হবে রুবেল হোসেন, ওশান টমাসদের ওপরে। মিরাজ, আফিফ, নাঈমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কতটা বিধ্বংসী হতে পারবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

চমকে দিতে পারেন: মাহফুজুর রহমান

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যাট করছেন মাহফুজুর রহমান
বিসিবি

বাঁহাতি স্পিনের সঙ্গে ব্যাটিংটাও দারুণ কার্যকর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অলরাউন্ডারের। এনসিএলে সিলেটের হয়ে ৩৯ বলে ৮২ রানের ইনিংসটা মনে আছে তো?

স্কোয়াড

অধিনায়ক: মেহেদী হাসান মিরাজ
দেশি: মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ নাঈম, ইমরুল কায়েস, মাহিদুল ইসলাম, আবু হায়দার, জিয়াউর রহমান, মাহফুজুর রহমান, মাহমুদুল হাসান, রুবেল হোসেন।
বিদেশি: ওশান টমাস, মোহাম্মদ হাসনাইন, লুইস গ্রেগরি, মোহাম্মদ নেওয়াজ, ইব্রাহিম জাদরান, দারবিশ রাসুলি, সালমান ইরশাদ।
আরও পড়ুন