হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে নয়, দাবি ফারুকের
আজ সকালেও মাঠে ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মুশফিকুর রহিম, ইবাদত হোসেনদের অনুশীলনে সঙ্গ দিয়েছেন। তবে ততক্ষণে হাথুরুসিংহের জেনে যাওয়ার কথা, বাংলাদেশ দলের কোচ আর তিনি থাকছেন না।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা এল বিকেলে, দুপুরেই সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সংবাদ সম্মেলনে। বোর্ড পরিচালক নাজমূল আবেদীনকে সঙ্গে নিয়ে ফারুক জানিয়ে দিলেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় অধ্যায়েরও সমাপ্তি এরই মধ্যে ঘটে গেছে। অসদাচরণের অভিযোগে তাঁকে নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, এই সময়ের জন্য তিনি সাসপেন্ড থাকবেন। এরপর চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে তাঁকে।
কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে অবশ্য ফারুক আহমেদের একটা পূর্ব ইতিহাস আছে। ফারুক যখন প্রধান নির্বাচক ছিলেন, তখনো জাতীয় দলের কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহেকে পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগের আগে হাথুরুসিংহের সঙ্গে অনেক বিষয়ে তাঁর মতবিরোধও হয়েছে। পদত্যাগের পর এবং হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে আসার পরও ফারুক সব সময়ই তাঁর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। সেসবই অবশ্য ছিল ক্রিকেটীয় কারণে।
ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না, কথাটা ওভাবে আমি বলিনি। আমি বলেছি, কোচ হিসেবে হাথুরুর খুব বেশি কিছু দেওয়ার নেই। এটা ছিল একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমার মূল্যায়ন।ফারুক আহমেদ, বিসিবি সভাপতি
গত ২১ আগস্ট বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই ফারুক আহমেদ বলেন, হাথুরুসিংহের প্রতি তাঁর অবস্থান আগের মতোই। এরপরই একাধিকবার তিনি কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কাজেই এটা মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে চুক্তির আগেই তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে বোর্ড সভাপতির ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ থেকে থাকতে পারে।
যদিও আজ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে ফারুক দাবি করেছেন, এ সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ কাজ করেনি। তিনি উল্টো বলেন, ‘ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ একটা দলের বড় ক্ষতি করে। আপনি যদি পেশাদার হিসেবে কাজ করেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দটা চলে যাবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এখানে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি।’
এক প্রশ্নে হাথুরুসিংহের সঙ্গে তাঁর পূর্বের তিক্ততার প্রসঙ্গ এলে ফারুকের দাবি, সে রকম কিছু তাঁর মনে নেই। হাথুরুসিংহেকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না, কখনো বলেননি এমন কথাও, ‘ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না, কথাটা ওভাবে আমি বলিনি। আমি বলেছি, কোচ হিসেবে হাথুরুর খুব বেশি কিছু দেওয়ার নেই। এটা ছিল একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমার মূল্যায়ন। এটা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নয়। কোচ হিসেবে তাঁর যে সামর্থ্য, সেটাতে আমি খুব বেশি সন্তুষ্ট ছিলাম না।’
যেহেতু হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই সম্পর্কচ্ছেদ, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই বিসিবিকে সেটি করতে হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশের আনুষ্ঠানিকতা সে কারণেই।
হাথুরুসিংহের বিদায় ঘোষণার দিনে নতুন কোচের নামও জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ড সভাপতি। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তান সিরিজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ও কোচ ফিল সিমন্সকে। আগামীকালই তাঁর ঢাকায় চলে আসার কথা। এর আগে রাসেল ডমিঙ্গোকে কোচ নিয়োগের সময়ও সিমন্স সম্ভাব্যদের তালিকায় ছিলেন, বিসিবিতে সাক্ষাৎকারও দিয়ে গিয়েছিলেন।
যেহেতু হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই সম্পর্কচ্ছেদ, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই বিসিবিকে সেটি করতে হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশের আনুষ্ঠানিকতা সে কারণেই। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের অবশ্য আজও তাঁর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে দর্শানো নোটিশ হাতে পেয়েছেন হাথুরুসিংহে। আইসিসির সভায় যোগ দিতে ফারুক আহমেদ ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আজ রাতেই দুবাই যাবেন, ফিরবেন ২৬ অক্টোবর।