কাইফ-রায়নারা যেভাবে ক্রিকেটে এসেছেন
কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের ঠিক ওপরের তলাতেই ধারাভাষ্যকারেরা বসেন। বিরামহীন বৃষ্টিতে গতকালকের আলস্যভরা দিন ওপরতলা থেকে হিন্দি ধারাভাষ্যকার আর পি সিংকে প্রেসবক্সে নামিয়ে আনল। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের হয়ে ৮২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সাবেক এই বাঁহাতি পেসারকে ঘিরে একটা ছোট্ট জটলা।
আর পি সিংকে ছোটবেলায় দেখে আসা হিন্দুস্তান টাইমস–এর সিনিয়র সাংবাদিক শরদ দীপ গল্প জুড়ে দিলেন। আর পি সিংয়ের ক্রিকেটে হাতেখড়ি, কবে-কোথায় তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, এসব আলাপ চলছিল।
বাংলাদেশের কয়েকজন সাংবাদিকও সেই আড্ডায় শ্রোতার ভূমিকায়। শরদ দীপ কথায় কথায় আর পি সিংহের উদাহরণ টানতে গিয়ে কানপুর ক্রিকেটে হোস্টেলের ভূমিকা কথা বলছিলেন। আর পি সিংও ছোট্ট করে বড় একটা কথা বলে ফেললেন, ‘হোস্টেল সিস্টেম না থাকলে ইউপি ক্রিকেট টিকতই না।’
ইউপি ক্রিকেট মানে উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট। অর্থনৈতিকভাবে ভারতের পিছিয়ে থাকা প্রদেশগুলোর একটিতে খরুচে খেলা ক্রিকেট ছিল বিলাসিতার মতো। কিন্তু উত্তর প্রদেশ সরকারের উদ্যোগে এখান থেকেও বেরিয়ে এসেছে অনেক ক্রিকেটার।
উত্তর প্রদেশ সরকারের ক্রীড়া বিভাগ প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে বের করে তাঁদের ফ্রিতে পড়াশোনা, কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলারই প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করে পেশাদার ক্রীড়াবিদ হিসেবে গড়ে তোলে উত্তর প্রদেশের ‘স্পোর্টস হোস্টেল’। উত্তর প্রদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাদের প্রত্যেকেই এসেছেন এই স্পোর্টস হোস্টেল থেকে। আর পি সিংয়ের মতো সুরেশ রায়না, মোহাম্মদ কাইফ, পীযূষ চাওলা, ভুবনেশ্বর কুমার থেকে যশ দয়াল—তাঁরা প্রত্যেকেই স্পোর্টস হোস্টেলের ছাত্র।
গ্রিন পার্কের মিডিয়া সেন্টার থেকে বেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে মাঠের স্টেডিয়াম লাগোয়া বিশাল জায়গাজুড়ে দুটি ভবন। ক্রিকেট, হকি থেকে শুরু করে সব ধরনের খেলার বিশেষ ব্যবস্থা আছে সেখানে। এখন উত্তর প্রদেশের স্পোর্টস হোস্টেল পরিচালনা করছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার অমিত পাল। কাইফ ও অমিত একই ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি উৎসাহী হয়ে হোস্টেল লাইফের অনেক গল্প শোনালেন।
এরপর স্পোর্টস হোস্টেলের কাঠামোটা ব্যাখ্যা করলেন, ‘উত্তর প্রদেশে মোট ৭৫টি জেলা আছে, বেশির ভাগ জেলাতেই এমন ছাত্রাবাস আছে। ক্রিকেট আছে পাঁচ জায়গায়—কানপুর, আগ্রা, ফতেহপুর, দেওয়ারিয়া ও মাইনপুর। এখানে স্পোর্টস কলেজ আছে। যেখানে আমি, কাইফসহ অনেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার পড়েছি। পরের প্রজন্মে আর পি সিং, সুরেশ রায়নারা পড়েছে। এখান থেকে শুধু ক্রিকেট নয়, আমরা হকিরও অনেক বড় বড় খেলোয়াড় পেয়েছি।’
প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে উত্তর প্রদেশের সরকার এই প্রোগ্রাম আয়োজন করে আসছে। অনেক খেলোয়াড় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছেন। অমিত পাল তাই উত্তর প্রদেশ সরকারের কথা আলাদা করে বললেন, ‘ইউপি সরকার এখানে অনেক টাকা খরচ করে, গরিব ছেলেমেয়ে যারা আছে, তারা এতে উপকৃত হচ্ছে। বাচ্চারা এখানে সব ধরনের খেলাধুলাই করে। সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা পায়।’
বাড়তি কিছু তথ্যও দিলেন তিনি, ‘এখন আমরা মোট ৩৫টি খেলা দেখছি। প্রতিটি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে অনুশীলন শুরু করে, স্কুলে যায়, পড়াশোনা করে, বিশ্রাম করে আবার এসে অনুশীলন করে। আমাদের এখানে অনেক ভালো ভালো কোচ আছেন, যাঁরা বাচ্চাদের গাইড করেন।’
প্রতিভা তুলে আনার এই প্রক্রিয়া নিয়ে গর্বটাও ফুটে বেরোল অমিত পালের কণ্ঠে। তা বেরোনোরই কথা। কারণ, পুরো ভারতে একমাত্র উত্তর প্রদেশেই এই কাঠামো আছে। শুধু ক্রিকেট নিয়ে অমিত পাল বললেন, ‘এখন পর্যন্ত নিজেদের সফলই বলব। কারণ, ইউপির প্রায় সব ক্রিকেটারই এসব হোস্টেল থেকে এসেছে।’