মিরাজ না তাসকিন—বাংলাদেশের ক্রিকেটে বছরটা আসলে কার

অম্ল–মধুর এক বছরই কেটেছে বাংলাদেশের। ছবিটি পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর

ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে শুরু বছরটা বাংলাদেশ শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করে।

বছর শেষে খেরোখাতার হিসাব দেখাচ্ছে ৪৩ ম্যাচ খেলে ১৮ জয় বাংলাদেশের, হার ২৫টিতে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত হিসেবেও অনেক রান আর উইকেট জমা পড়েছে। ব্যাট-বলে দারুণ এক বছর কাটিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টেস্টে দুই বিভাগেই সবার ওপরে তাঁর নাম। টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড গড়েছেন রিশাদ

ক্যারিয়ারের এক-চতুর্থাংশ উইকেটই তাসকিন আহমেদ পেয়েছেন এ বছর। হৃদয়-জাকেরের ব্যাট সারা বছরই আলো ছড়িয়েছে। ২০২৪-এ বাংলাদেশের সেরা কে ছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা একটু কঠিনই। তবে পরিসংখ্যানে ভর করে সেই উত্তর তো বের করাই যায়।

আরও পড়ুন

টেস্টে রানে শীর্ষে মিরাজ, উইকেটেও

বছরের শুরুতে টেস্টে অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশেও ছিলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। বছরের শেষ প্রান্তে এসে সেই মিরাজ এখন টেস্টে র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা অলরাউন্ডার। কীভাবে, সেটির সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাকিস্তানকে পাকিস্তানে ধবলধোলাই করা সিরিজটাই। দুই ম্যাচে দুবার ব্যাট করে দুবারই ৭০ ছাড়ানো ইনিংস খেলা মিরাজ বল হাতেও ১০ উইকেট নিয়ে হয়েছেন সিরিজের সেরা খেলোয়াড়। অক্টোবরে মিরপুরে ৩ রানের জন্যই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি হারানো মিরাজ টেস্টে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে শীর্ষ আছেন। ব্যাট হাতে ৬১৪ রান করা মিরাজ বোলিংয়ে নিয়েছেন ৩১ উইকেট।

বোলিংয়ে হাসান মাহমুদের সঙ্গে জমজমাট লড়াই হয়েছে মিরাজের। ৩০ উইকেটে এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের পেসারদের রেকর্ড গড়েও হাসান দ্বিতীয় হয়েই বছর শেষ করলেন। ব্যাটিংয়ে মিরাজের পরেই আছেন মুমিনুল হক। বছরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তিন সেঞ্চুরির একটি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই।

আরও পড়ুন

ওয়ানডেতে ব্যাটে মাহমুদউল্লাহ, বলে তাসকিন

এ বছর মাত্র ৯টি ওয়ানডেই খেলেছে বাংলাদেশ। সেই নয় ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০২৪-এ মাহমুদউল্লাহর ৩৩৭ রানের ২৯৪-ই এসেছে শেষ চার ম্যাচে। শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ৯৮ রান করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার খেলেছেন অপরাজিত ৫০, ৬২ ও অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস। তবে দুর্ভাগ্য, এই চারটি ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ।


বোলিংয়ে ৭ ম্যাচ খেলে  সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। মাত্র ৪ ম্যাচ খেলেই ১০ উইকেট নিয়ে দুইয়ে মোস্তাফিজ।

আরও পড়ুন

টি-টোয়েন্টি: রিশাদের রেকর্ডের বছরে ব্যাটে সেরা হৃদয়

চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বছরের শেষ সিরিজটায় ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি হয়নি। এর আগেই ২০ ম্যাচে ৪৯৩ রান করা হৃদয়ই এ বছর ব্যাট হাতে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান। ২১টি ছক্কা মেরে জাকের আলীর সঙ্গে ছক্কার রেকর্ডটা ভাগাভাগি করছেন হৃদয়।

এ বছর বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি খেলেছে ২৪টি। সেই ২৪টি ম্যাচ খেলা একমাত্র খেলোয়াড় রিশাদ হোসেনই বাংলাদেশে হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫টি উইকেট নিয়েছেন। তাতে রেকর্ডও হয়ে গেছে। এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে আরও কোনো বোলার এই সংস্করণে ৩০টির বেশি উইকেট নিতে পারেননি। ৩০ উইকেট নেওয়ার উদাহরণটাও এ বছরই করেছেন তাসকিন। রিশাদ-তাসকিনরা পেছনে ফেলেন ২০২১ সালের মোস্তাফিজুর রহমানকে (২৮)।

তিন সংস্করণ মিলিয়ে সবার ওপরে মিরাজ ও তাসকিন

এ বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে হাজার রানের বেশি করেছেন শুধু মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩০ ইনিংসে সাতবার ফিফটি ছাড়ালেও একবারও তিন অঙ্ক না ছুঁতে পারাটাই তাঁর একমাত্র আক্ষেপ হতে পারে এ বছর।

বোলিংয়ে বিপ্লবই ঘটিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৪০ উইকেট নেওয়া তাসকিন এ বছরই নিয়েছেন ৬৩ উইকেট। এ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে এর চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পেরেছেন মাত্র একজনই—সাকিব আল হাসান। ২০১০ সালে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৭৭ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।