আইপিএল-পিএসএলেও ভারত-পাকিস্তান ‘সংঘাত’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের পরস্পর বিরোধী অবস্থান এরই মধ্যে আইসিসিকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ভারত সরকার রোহিত-কোহলি-বুমরাদের পাকিস্তানে পাঠাবে না। পাকিস্তান সরকারও যেকোনো মূল্যে নিজেদের দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্রীড়া কূটনীতির চাল চালিয়েছে কাবাডি ও দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট অঙ্গনেও। ভারত কাবাডি দলের পাকিস্তান সফর আটকে দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দৃষ্টিহীনদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক পাকিস্তান হওয়ায় সেই টুর্নামেন্ট থেকেও নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে ভারত।
কেউ যদি মনে করে থাকেন ভারত-পাকিস্তানের রেষারেষি আপাতত এখানেই থেমে যাচ্ছে, তাহলে ভুল করবেন। বার্তা সংস্থা পিটিআই বলছে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ও পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) নিয়েও বিবাদে জড়াতে পারে।
২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আইপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে রেখেছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। এ নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানের দিক থেকে ভারতকে খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতি না মেশানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে পিএসএল শুরুর পর অবশ্য আইপিএল থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পিসিবি। নিজেদের লিগকেই জনপ্রিয় করে তুলতে কাজ করেছে তারা। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং সেখানে লেজার লাইটের ব্যবহার, ড্রোনের পাশাপাশি ‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’ (এআর) ও ‘ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি’ (ভিআর) প্রযুক্তির ব্যবহার, সম্প্রচারে উচ্চ মান, বিদেশি তারকাদের নিয়ে আসা—সবকিছুতেই আইপিএলকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছে পিএসএল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো একটি-আরেকটিকে নকল করারও অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু এসব নিয়ে বিসিসিআই ও পিসিবি কখনোই ঝামেলায় জড়ায়নি। কারণ, দুটি টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে ভিন্ন সময়ে। পিএসএল সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চে হয়, আইপিএল সচরাচর মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে।
কিন্তু আগামী বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফেব্রুয়ারি-মার্চে হওয়ায় ওই সময়ে পিএসএলের দশম আসর আয়োজন করতে পারবে না পিসিবি। এর পরিবর্তে তারা এপ্রিল-মে মাসে পিএসএল আয়োজন করতে চায়। ঠিক একই সময়ে আইপিএলের ১৮তম আসরও চলবে।
দুই লিগের সূচি সাংঘর্ষিক হতে চলায় বিদেশি খেলোয়াড়দের পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত পিএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা। তাঁদের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছে, পিসিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো টুর্নামেন্টের পরিচালক সালমান নাসিরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা নিজেদের উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে শিগগিরই সভা ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পিসিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা ভালো করেই জানেন, পিসিবি বিসিসিআইকে অনুরোধ করলেও তারা আইপিএলের সূচি পেছাবে না। তাই একই সময়ে দুটি টুর্নামেন্ট হতে চলেছে নিশ্চিত হয়েই তাঁরা পিসিবির কাছ থেকে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান, কোন কোন খেলোয়াড় পিএসএলে খেলতে ইচ্ছুক।
এ ব্যাপারে সূত্রটি পিটিআইকে বলেছে, ‘আইপিএলও যদি একই সময়ে হয়, তাহলে মালিকেরা চান পিসিবি তাঁদের জানিয়ে দিক টুর্নামেন্টে করা খেলবেন। সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানও কী ধরনের সূচি চায়, সেই সম্পর্কেও তাঁরা স্বচ্ছ ধারণা নিতে চান। স্বচ্ছতার অভাবে মালিকেরা উদ্বিগ্ন। কারণ, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এবং আরও কয়েকটি বোর্ড পিএসএল ড্রাফটের আগে তাদের খেলোয়াড়দের ওপর বিধিনিষেধ দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছে।’
আগামী ২৪ ও ২৫ নভেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় হবে আইপিএলের মেগা নিলাম। পিএসএলের ড্রাফট হওয়ার কথা ১৩ ডিসেম্বর। স্বাভাবিকভাবে বিদেশি ক্রিকেটাররা আইপিএলের দিকে ঝুঁকবেন। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও তারকা খেলোয়াড়দের চড়া দামে কিনে নেবে। সেটা হলে যাঁরা আইপিএল নিলামে দল পাবেন না, শুধু তাঁরা হয়তো পিএসএলের প্রতি আগ্রহ দেখাবেন।
সূত্রটি পিটিআইকে আরও বলেছে, ‘পিএসএলের জন্য পিসিবি একটি স্বাধীন সচিবালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা প্রায় ১০ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক সালমান নাসিরকে সেই প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করতে বলেছেন।’
আগামী বছর পিএসএলের দশম আসর শেষে পিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তাদের চুক্তি ও আর্থিক বন্ড (ঋণপত্র) পুনর্বিবেচনা করবে। বর্তমানে পিএসএলে ৬টি দল খেলছে। ২০২৬ সাল থেকে দল বেড়ে ৮টি হতে পারে।