ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিয়ে একটা অভিযোগ চিরন্তন। এত বেশি ট্রাভেলিং! কোথাও একটু থিতু হওয়ার জো নেই। আজ এই দ্বীপে খেলা তো খেলা শেষ করেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে আরেক দ্বীপে উড়ে যাও।
এবারের সফরটা সে তুলনায় বাংলাদেশ দলের জন্য অনেকটাই আরামদায়ক হচ্ছে। দুটি টেস্ট হয়েছে অ্যান্টিগা ও জ্যামাইকায়। ওয়ানডে তিনটি সেন্ট কিটসে। এরপর সেন্ট ভিনসেন্টে তিন টি–টোয়েন্টির সিরিজ। অর্থাৎ বেশি দৌড়ঝাঁপ নেই। চার দ্বীপ ঘুরেই সিরিজ শেষ।
জ্যামাইকা থেকে গতকাল সেন্ট কিটসের ফ্লাইট ছিল বাংলাদেশ দলের। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন ঢাকা থেকে যাওয়া ওয়ানডে দলের চার ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ, পারভেজ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও তানজিদ তামিম। গ্লোবাল সুপার লিগে খেলার সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছেন সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন, রিশাদ হোসেন ও তানজিদ সাকিব। গতকাল তাঁদেরও সেন্ট কিটসে চলে যাওয়ার কথা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে হারলেও জ্যামাইকার দ্বিতীয় টেস্টে ১০১ রানের জয়ের পর বাংলাদেশ দল দারুণ উজ্জীবিত। আর ওয়ানডেতে তো এমনিতেই বাংলাদেশের সাহস বেশি। তবে খেলোয়াড়ের মধ্যে ঠান্ডা–জ্বর ও অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়াটা একটা সমস্যা। সে তালিকায় থাকা মুমিনুল হক, সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান অবশ্য ওয়ানডে দলে নেই। তবে জ্বরে ভুগেছেন পেসার শরীফুল। সাবধানতা হিসেবে জ্যামাইকায় তাঁকে দুই দিনের মতো আইসোলেশনেও কাটাতে হয়েছে। আরেক পেসার তাসকিনকেও কাঁধের পুরোনো চোট সামলে দ্বিতীয় টেস্টটা খেলতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে।
১৫ সদস্যের ওয়ানডে দলে পেসার পাঁচজন। তবু ওয়ানডে সিরিজে যখন যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে খেলিয়ে দেওয়ার সুযোগ তেমন থাকবে না। কারও পুরোনো চোট, কারও অসুস্থতা; সঙ্গে আছে টানা খেলে নতুন চোটে পড়ার শঙ্কা। ৮ ডিসেম্বর শুরু ওয়ানডে সিরিজের ছকে তাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামের পরামর্শ আর টেস্ট সিরিজে কার কত পরিশ্রম গেল, সে হিসাব। সব মিলিয়ে পেসারদের কার কী অবস্থা, তা জেনেবুঝেই ওয়ানডের ছক কষতে হচ্ছে।
পেস বোলিংয়ের সমন্বয় ঠিক করা ছাড়া অবশ্য ওয়ানডের আগে বাংলাদেশের সামনে তেমন জটিল অঙ্ক থাকার কথা নয়। কিংস্টন–কীর্তির কারণে আর যা আছে, সবই তো ইতিবাচক! দ্বিতীয় টেস্টের পর দলের ভেতর খোঁজখবর নিয়ে যেটা বোঝা গেল, তাতে এই দলের চিন্তাভাবনায় এখন জয় ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব নেই। মাঠের খেলা তো সবাই দেখেছেনই, টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়নি; এমন কিছু বিষয়ও কিংস্টনে বাংলাদেশকে অন্য চেহারা দিয়েছে; দলের মধ্যে যেটা ধরে রাখার প্রতিজ্ঞা বাকি সফরে।
সে বিষয়গুলো কী? প্রথমত স্যাবাইনা পার্কের ইতিহাস মাথায় নিয়ে খেলা। এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১২ রান করে জেতাটাই রেকর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ২৮৭ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর তাই দলের মধ্যে এই বিশ্বাসটা চলে আসে যে ‘আমরাই জিতব।’ যেটিকে দারুণভাবে বাস্তবে রূপও দেওয়া গেছে।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ আর কোচ ফিল সিমন্সের যাতে বড় ভূমিকা ছিল। এক অর্থে দুজনই তো যাঁর যাঁর ভূমিকায় নতুন। খেলোয়াড়দের এখনো খুব বেশি চিনে ওঠেননি বলে টুকটাক কিছু পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকে কিছু চাপিয়ে দেননি কোচ। সবাইকে স্বাধীনতা দিয়েছেন যাঁর যাঁর মতো খেলার।
ওদিকে আপৎকালীন অধিনায়ক মিরাজের ওপর ছিল না জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারদের উপস্থিতির অদৃশ্য চাপ। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া থেকে শুরু করে দ্বিতীয় ইনিংসে জায়গামতো বল পেলেই মারার নীতি—এ রকম যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দ্বিধাহীনভাবে নিজের চিন্তার ওপর আস্থা রেখে দলকে এগিয়ে নিতে পেরেছেন মিরাজ। অধিনায়কের সমান্তরালে দলের মধ্যে প্রভাববিস্তারী আর কোনো চরিত্র না থাকায় মিরাজ সে কাজটাও করতে পেরেছেন শতভাগ দিয়ে।
এই সবকিছু মিলিয়েই আসলে কিংস্টন–কীর্তি। যেটার সাহস নিয়ে বাংলাদেশ দল এখন সেন্ট কিটসে, আরও বেশি সাহস নিয়ে ওয়ানডে খেলতে।