আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি
মাহমুদউল্লাহর ‘১০০’
বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে আজ ১০০তম ম্যাচ খেলবেন মাহমুদউল্লাহ।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর যত রেকর্ড
বাংলাদেশের আউটফিল্ড ফিল্ডার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ (৩৭)।
বাংলাদেশের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি ৫৪ ম্যাচ।
শূন্য ছাড়া টানা ৬৬ ম্যাচ। যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড, সব দেশ মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কিপটে বোলিং। ২০১৪ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয় (২৪ ম্যাচে ১২ জয়)।
২০০৭ সালের কথা। ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা কড়া নাড়ছে দরজায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় সেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে কেনিয়ায় চার জাতি টুর্নামেন্ট খেলতে গেল বাংলাদেশ। ১ সেপ্টেম্বর নাইরোবির জিমখানা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টুর্নামেন্টে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হাতেখড়ি হলো বাংলাদেশের ছয় ক্রিকেটারের।
১৪ বছর পর আরেক সেপ্টেম্বরে সেই ছয়ের একজন আজ বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে নামছেন ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। অলক কাপালি, মোহাম্মদ আশরাফুল, নাজিমউদ্দিন, তামিম ইকবাল, সৈয়দ রাসেল ও মাহমুদউল্লাহ—সেই ছয়ের মধ্যে নামের ভারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহই আজ ইতিহাস গড়ছেন।
হার না মানা মানসিকতা, দৃঢ় সংকল্প, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা—সব মিলিয়ে আজ ইতিহাসের অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবতম সংস্করণের ‘১০০ ক্লাবে’ প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। সেই মাহমুদউল্লাহ, শুরুর দিনগুলোতে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলে যাকে জায়গা পেতেই সংগ্রাম করতে হয়েছে।
দায়টা অবশ্য ২১ বছরের তরুণ মাহমুদউল্লাহরই। বাংলাদেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে শুরুর দিককার ম্যাচগুলোতে যে আশা জাগানোর মতো কিছু করতে পারেননি। অভিষেক ম্যাচে কেনিয়ার বিপক্ষে ৮ বলে ২ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ বলে ৯ রান—উগান্ডার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে দলে আর জায়গা পেলেন না মাহমুদউল্লাহ। ওই ম্যাচের অবশ্য আন্তর্জাতিক মর্যাদা নেই। ময়মনসিংহ থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার সুযোগ পেলেন না বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচেও। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে ফেরার পর থেকে অবশ্য মাহমুদউল্লাহকে দলে জায়গা নিয়ে ভাবতে হয়নি খুব বেশি। শুরুর দিকে কাজ চালানোর মতো অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করা সেই খেলোয়াড় সময়ের সঙ্গে অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ দলে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া সেই মাহমুদউল্লাহর নামটাই এখন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের টিম শিটে সবার আগে থাকে।
২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা ৬৫টি টি-টোয়েন্টির ৬৪টিই খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। এ বছরের নিউজিল্যান্ডের সফরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা খেলতে পারেননি চোটের কারণে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলা ১০৯ ম্যাচের মাত্র ১০টি ম্যাচই খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, যার একটি অবশ্য তাঁর অভিষেকের আগের।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২০.১৯ স্ট্রাইক রেট—এই পরিসংখ্যান অবশ্য বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর ভূমিকা খুব একটা বোঝাতে পারে না। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের দুটি ইনিংসই তাঁর—মাহমুদউল্লাহকে কিছুটা বোঝাতে পারে এই পরিসংখ্যান।
মাহমুদউল্লাহ কতটা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেন, সেটির বড় প্রমাণ ২০১৮ সালের নিধাহাস ট্রফির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি। ম্যাচ জিততে শেষ ছয় ওভারে ৫৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ দলকে যখন জেতালেন, তাঁর নামের পাশে ১৮ বলে ৪৩ রান! ওই বছরই মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১ বলে ৪৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
সেই মাহমুদউল্লাহ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দেখাচ্ছেন এমন উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়। পরশু দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ৩২ বলের অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংসটা না হলে হয়তো হেরেই যেত বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেও ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমিতে অপরাজিত ছিলেন তিনি, দলকে জিতিয়ে ফিরেছিলেন ১৪ রানে অপরাজিত থেকে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র পাঁচবার ৫০ ছুঁয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু কাঠখোট্টা সেই পরিসংখ্যানের কী সাধ্য বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে মাহমুদউল্লাহর অবদান বোঝানোর। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের মতো খেলোয়াড়দের আগে ১০০ ম্যাচের মাইলফলকে ঢুকে যাওয়াটাই অবশ্য প্রমাণ মাহমুদউল্লাহর।