কথায় বলে, শিক্ষা নিতে হয় অন্যের ভুল থেকে। নিজের ভুল থেকে শিখতে গেলে মাশুলটা চড়া হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের পর ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা। উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই যে ব্যাটিং করা উচিত, সেটা আমরা এ দুই ম্যাচে দেখেছি। ভারতের ভাবা উচিত ছিল, আগে ব্যাটিং করলে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেটা না করে শুধু শট খেলার দিকেই নজর দেওয়াটা শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিতের মতো কাজ করার মতো। শুধু সামর্থ্য থাকলেই হবে না, চারপাশের সবকিছু বিচার করতে হবে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তো পুনর্গঠনের সুযোগ কম।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের নির্ভারই থাকা উচিত। দুজন স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়েছে। নুরুলও খেলতে পারবে না আজ। আমাদের লড়াই করার সুযোগ কমে গেছে বেশ খানিকটা। এটা বোধ হয় একদিক দিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য ভালোই। খেলোয়াড়দের জন্যও দুটি সুযোগ বাকি, কিছু করে দেখানোর। কোচ বলেছে সাকিবের চোটের কারণে শামীমকে সুযোগ দেওয়ার কথা। আমার ধারণা, নিরুপায় হয়েই এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—দুই হাত তুলে আত্মসমর্পণ করার মতো। আরও আগেই শামীমকে সুযোগ দেওয়া দরকার ছিল।
দলের এমন অবস্থা, টপ অর্ডারের একজনের চোটে একজন ফিনিশারকে খেলাতে হচ্ছে। কী একটা কম্বিনেশন! সৌম্য ও আফিফের একজনকে বাদ পড়তে হতে পারে আজ। আমার মনে হয়, বিভিন্ন কারণ মিলিয়ে পেস আক্রমণে শরীফুল ও তাসকিন মোস্তাফিজের থেকে এগিয়ে আছে। মোস্তাফিজের জায়গায় রুবেলের আসা উচিত। সামনে পাকিস্তানের সিরিজ আছে। সাকিবের মতো মোস্তাফিজেরও আইপিএলের ধকল গেছে। এ বিশ্বকাপে তার শরীরের ওপর আর চাপ না দেওয়াই ভালো।
আমাদের দূরদর্শিতার কতটা অভাব ছিল এ টুর্নামেন্টে আসার সময়। রিজার্ভ হিসেবে তেমন বিকল্পই নেই। আমরা যে বলেছি, সেমিফাইনাল খেলতে চাই, সেটার প্রতিফলন কোথায়? আগে থেকেই সুপার টুয়েলভে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজও একাধিক রিজার্ভ হিসেবে আনে। আর আমরা তো প্রথম পর্বে অতিরিক্ত তিনটা ম্যাচ খেললাম, সেখানে তিনজনকে রাখতে পারলাম না। কত বড় নির্বোধের মতো কাজ, সেটা যাঁরা ক্রিকেট দেখেন, তাঁরা মাত্রই বুঝতে পারেন।
তবে আগেও বলেছি, এখন ব্যক্তিগত অর্জনের সময়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো যাবে না, এমন না। সাকিব না থাকায় হয়তো একটু ঘাটতি আছে, তবে ব্যাটসম্যানদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। সব সময় সব সংস্করণে সাকিব বাংলাদেশকে পার করাতে পারবে না। সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও নিকট ভবিষ্যতে সরে যেতে হবে। যারা নতুন সুযোগ পাচ্ছে, নিজের জায়গায় ঠিক রাখতে মেধার ছাপ রাখা উচিত।
অন্যান্য দলের মতো রাতের ম্যাচে মানিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি না আমরা। আজকের মাঠটা বড়, স্পিনাররা বাড়তি চাপে থাকবে না। দক্ষিণ আফ্রিকাও স্পিনে একটু দুর্বল। কেশব মহারাজ, তাব্রেইজ শামসিকে অবশ্য আমাদের শুরুর দিকের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের সামাল দিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার এ দলের অভিজ্ঞতাও তেমন না। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে ২০১১ সালে একাডেমির সঙ্গে খেলতে দেখেছিলাম, তখনই ভালো মনে হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে মাঠ এবং মাঠের বাইরের সবকিছু ভুলে যদি নামতে পারি, তাহলে হয়তো জয়ের জন্য লড়াই করার সামর্থ্যটা যে ফুরিয়ে যায়নি, সেটা প্রমাণ করতে পারব।