ফিরে আসা সাকিব আর অভিষিক্ত মাহমুদের হাতে শেষ উইন্ডিজ
ষষ্ঠ উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫৯ রান এসেছিল কাইল মেয়ার্স ও রোভম্যান পাওয়েলের জুটি। পাওয়েল তো একটু-আধটু হাত খোলারও চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হাসান মাহমুদ জুটিটাকে দাঁড়াতে দিলেন না!
বাংলাদেশের হয়ে আজই ওয়ানডেতে অভিষিক্ত মাহমুদ টানা দুই বলে নিলেন দুই উইকেট। প্রথমে পাওয়েল, পরের বলে রেমন রেইফার। হ্যাটট্রিক করে অভিষেক রাঙানোর সুযোগ এসেছিল তরুণ পেসারের সামনে। কিন্তু আলজারি জোসেফ ঠেকিয়ে দেন তাঁর স্টাম্প সোজা বল।
হ্যাটট্রিক না হোক, পরের ওভারে আরেক উইকেট নিয়ে দারুণ তিন উইকেটে অভিষেকটা এখন পর্যন্ত ভালোই কাটছে মাহমুদের। মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানের পর তাঁর জোড়া ধাক্কায় আবার পথ হারায় উইন্ডিজ। এরপর উইন্ডিজকে অলআউট করতে আর বেশি সময় লাগেনি বাংলাদেশের।
হাসান মাহমুদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান নেন শেষ তিন উইকেট। তাতে ১২২ রানেই অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে উইন্ডিজের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ইনিংস।
বৃষ্টি, তুমি সময় বোঝো না – বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হয়তো এমনই মনে হয়েছে মিরপুরে বৃষ্টি নামতে দেখে। ৩০০ দিন পর বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে দেখার স্বাদেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে অসময়ের বৃষ্টি। শীতে ঢাকায় যেখানে বৃষ্টির দেখাই মেলেনি অনেকদিন, সেই বৃষ্টি কিনা আজ একেবারে এসে ম্যাচই থামিয়ে দিয়েছে।
এখন অবশ্য আবার খেলা শুরু হয়েছে। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার পড়তে হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে। যেমনটা পড়তে হয়েছিল বৃষ্টির আগেও! কিন্তু বৃষ্টির পর সাকিব আল হাসান আরও ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছে।
বৃষ্টির আগে-পরে দুটি উইকেট মোস্তাফিজের, পরের তিনটিই নিয়েছেন এই ম্যাচ দিয়েই নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সাকিব আল হাসান। আর এর প্রথম উইকেটেই সাকিবের হয়েছে দারুণ মাইলফলক। নিজেদের মাটিতে এটি ওয়ানডেতে সাকিবের ১৫০তম উইকেট!
সাকিব উইকেটের দিক থেকে সর্বভুখ, আবার রান দেওয়ার বেলায় মহাকিপটে। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, সে জন্য ৭.২ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়েছেন, মেডেন নিয়েছেন ২টি। মোস্তাফিজ ২ উইকেট নিতে ৬ ওভারে খরচ করেছেন ২০ রান।
ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আজ উইকেটের আনন্দে মেতেছেন মোস্তাফিজ। বল উইকেটে পড়ার পর ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ভেতরের ঢোকানোর অনুশীলন অনেকদিন ধরেই করছিলেন মোস্তাফিজ, অনেকটা ভেতরে ঢোকা বলেই আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিসকে এলবিডব্লু করেছেন মোস্তাফিজ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি অ্যামব্রিস। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রুবেল হোসেনকে ছক্কা মেরে ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেওয়া অ্যামব্রিসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন মোস্তাফিজ।
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগের শেষ বল অর্থাৎ, নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে উইকেট পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল মোস্তাফিজের। ম্যাকার্থির ব্যাটে লেগে ক্যাচ উঠেছিল, যদিও পয়েন্টের ওপর দিয়ে ২ রান হয় সেটিতে। বৃষ্টি থামার পর খেলা শুরু হতেই আবার দ্বিতীয় বলেই উইকেটের সুযোগ মোস্তাফিজের। ওভারের পঞ্চম বলে সেই ম্যাকার্থিরই ব্যাটের ভেতরের দিকে লেগে বল চলে যায় উইকেটকিপারের পেছন দিয়ে সীমানার বাইরে।
পরের ওভারে এসেই উইকেট পেয়ে গেলেন মোস্তাফিজ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে তাঁকে মেরে খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে লিটন দাসের ক্যাচ হন জশুয়া ডা সিলভা।
এরপর সাকিবের পালা। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ও আন্দ্রে ম্যাকার্থি তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন, সাকিব এসে সেটি ভেঙে দেন ১৩তম ওভারে। চতুর্থ বলে তাঁর বলে বোল্ড ম্যাকার্থি। ১৭তম ওভারে সাকিবের বলে স্টাম্পড হন জেসন মোহাম্মদ। এরপর নিজের পরের ওভার, অর্থাৎ ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে এনক্রুমা বোনারকে এলবিডব্লু করেন সাকিব। ২০ ওভারের আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫ উইকেট হাওয়া, রান তখনো ছিল ৫৬!
তবে ষষ্ঠ উইকেটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে রোভম্যান পাওয়েল মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করছিলেন। জুটিতে হয়ে গিয়েছিল ৫৯ রান। কিন্তু ৩০ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ রান করা পাওয়েলকে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফেরান দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে আসা হাসান মাহমুদ। অফ স্টাম্পের ওপরে ডেলিভারিটা পাওয়েলের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে।
পরের বলে আবার উইকেট। এবার অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়া আছে তাতে! রেমন রেইফারকে আম্পায়ার এলবিডব্লু দিয়েছেন। রিভিউ বাকি না থাকায় রেইফারের কিছু করারও ছিল না। কিন্তু পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পের একটু ওপর দিয়েই যেত! হাসান মাহমুদের অবশ্য এ নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে!
উইন্ডিজের লড়াই সেখানেই শেষ! পরের ওভারে আরও বড় ধাক্কা, ৫৬ বলে উইন্ডিজের ইনিংস সর্বোচ্চ ৪০ রান করা মেয়ার্সকে স্লিপে লিটনের ক্যাচ বানান মিরাজ। তারপর তো উইন্ডিজ কত দ্রুত অলআউট হবে, সে হিসেব চলছিল। দশ বলের মধ্যেই শেষ হয়ে উইন্ডিজের ইনিংস।
পরের ওভারে ফিরেই আবার উইকেট হাসানের। এবার তাঁর বলে স্লিপে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আকিল হোসেন। আর ৩২তম ওভারে এসে আলজারি জোসেফকে বোল্ড করে দেন সাকিব।
অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের ৩ উইকেট, আর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিবের ৪, আর শুরুতে মোস্তাফিজের ২ – উইন্ডিজ দাঁড়াতেই পারল না!