বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের তৃতীয় স্পিনার কে হবেন

অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবএএফপি

টেস্টে ভারতের বোলিংয়ে মূল শক্তি কোন বিভাগ? পেস না স্পিন?

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভারতের স্কোয়াডে তাকানো যাক। দুই তারকা পেসার যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে ১টি টেস্ট খেলা পেস অলরাউন্ডার আকাশ দীপ ও আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা বাঁহাতি পেসার যশ দয়াল। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেলদের মতো তারকা স্পিনারদের সামনে এই পেস আক্রমণকে কি একটু মলিন লাগে না?

আরও পড়ুন

চোটের কারণে মোহাম্মদ শামির অনুপস্থিতিতে ভারতীয় পেস আক্রমণের ঔজ্জ্বল্য কিছুটা ভাটা পড়লেও গত কয়েক বছরে ভারতের পেস আক্রমণে উন্নতি অনেক দলের কাছেই ঈর্ষণীয়। তবু পরিসংখ্যান বলছে, গত চার বছরে টেস্টে উইকেট নেওয়ায় ভারতীয় পেস আক্রমণকে পেছনে ফেলেছেন স্পিনাররা।

এ সময় ৩৭ টেস্টে পেসারদের শিকার ৩০৭ উইকেট, স্পিনাররা নিয়েছেন ৩৩৭ উইকেট। চাইলে এই হিসাবের কলেবর আরেকটু কমিয়ে আনা যায়। সর্বশেষ দুই বছরের পরিসংখ্যানেও ভারতের পেসারদের চেয়ে এগিয়ে স্পিনাররা। এ সময় পেসারদের শিকার ১৬ ম্যাচে ১০৯ উইকেট, স্পিনাররা নিয়েছেন ১৬৯ উইকেট।

বাংলাদেশের বিপক্ষে অশ্বিন ও জাদেজার খেলা মোটামুটি নিশ্চিত
এএফপি

পরিসংখ্যানই বলে দেয়, ভারতীয় পেস আক্রমণের ছটা বেশি চোখে লাগলেও এ সময় উইকেট বেশি নিয়েছেন স্পিনাররা। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও এই ধারায় ভরসা রেখেই স্কোয়াড গড়েছে ভারত। আর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের ভেন্যু চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম ও কানপুরের গ্রিন পার্কও স্পিনবান্ধব। অশ্বিনকে দিয়ে গ্রিন পার্কের বাইশ গজের আচরণের একটি উদাহরণ দেওয়া যায়।

ভারতের এই অফ স্পিনার গ্রিন পার্কে ২ টেস্টে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। প্রাসঙ্গিক হিসেবে আরও একটি বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া যায়। ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজে খেলা হবে এসজি বলে। মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আজ এ নিয়ে কথা বলার সময় বাংলাদেশের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান লিটন দাস মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘এসজিতে নতুন বলে খেলা তুলনামূলক সহজ, পুরোনো বলে খেলাই কঠিন।’

আরও পড়ুন

অর্থাৎ চেন্নাই ও কানপুরে দুটি উইকেটেই খেলার সময় গড়ানোর সঙ্গে পিচও যেহেতু ভাঙবে আর স্পিনাররা তার ফায়দাও লুটবেন, সেখানে বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে এই এসজি বল। কারণ, টেস্টে পুরোনো বলেই স্পিনাররা এমনিতেই বেশি ভয়ংকর আর পুরোনো এসজি বল থেমে এসে বাঁকও পায় ভালো।

স্বাভাবিকভাবেই এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টের একাদশ গড়বে ভারত। এখন প্রশ্ন হলো, তৃতীয় স্পিনারটি হবেন কে?

অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবের মধ্য থেকে কাকে বেছে নেবে ভারত
বিসিসিআই

তৃতীয় স্পিনারের প্রসঙ্গ কেন আসছে, সেটাও ভেঙে বলা যাক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর বিশ্রামে থাকা যশপ্রীত বুমরা ফিট থাকলে চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে খেলবেন। কিন্তু বুমরাকে না পেলে পেস আক্রমণে সিরাজের সঙ্গে আকাশ কিংবা দয়ালের মধ্য থেকে কাউকে রাখা হবে। সব মিলিয়ে পিচের আচরণ মাথায় রেখে দুই পেসারের সঙ্গে তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলানোর সম্ভাবনাই বেশি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। এর মধ্যে দুজন স্পিনারের নাম এখনই আপনার জানা-অশ্বিন ও জাদেজা। প্রশ্নটি জাগে ঠিক এরপরই। তৃতীয় স্পিনারটি তাহলে কে—কুলদীপ যাদব না অক্ষর প্যাটেল?

এ প্রশ্নের উত্তর আসলে ভারতকে খুঁজতে হবে না, দুটি বিষয়ের মধ্যে স্রেফ যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্যে ভরপুর ডানহাতি অফ স্পিনার অশ্বিন যে ভারতের স্পিন আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন, তাতে সন্দেহ নেই। ব্যাটিং–শক্তি, ফিল্ডিং ও স্পিন অভিজ্ঞতা এবং দলীয় সমন্বয়ের কারণে জাদেজার খেলাও মোটামুটি নিশ্চিত। কুলদীপ ও অক্ষরের মধ্য থেকে একজনকে নিতে ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁরা আসলে কী চায়—কবজির স্পিন না বাঁহাতি স্পিনসহ জাদেজার মতোই অলরাউন্ড সক্ষমতা? এর মধ্যে থেকে ভারত যেটাই বেছে নেবে, সে অনুযায়ীই দলে থাকবেন হয় কুলদীপ, নয়তো অক্ষর।

আরও পড়ুন

এবার বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে তাকানো যাক। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের স্কোয়াড যেহেতু বাংলাদেশ এখনো ঘোষণা করেনি, তাই সর্বশেষ টেস্টের দলটিতে তাকানো যায়। রাওয়ালপিন্ডিতে ৩ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সেই সর্বশেষ টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই ছিলেন বাঁহাতি। আর এই পাঁচজনের (সাদমান, জাকির, নাজমুল, মুমিনুল, মুশফিকুর ও সাকিব) সবারই ভারতের বিপক্ষে খেলার সম্ভাবনা প্রবল।

বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের আধিক্য যেহেতু বেশি, তাই স্পিন ম্যাচ-আপের কারণে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে দলে অক্ষরের জায়গা না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, জাদেজা নিজেই বাঁহাতি স্পিনার। প্রতিপক্ষ দলের পাঁচ ব্যাটসম্যান বাঁহাতি মাথায় রেখে দলে আরও একজন বাঁহাতি স্পিনার নেওয়াটা বিলাসিতা মনে হতে পারে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। অক্ষর এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে ২টি টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৮ উইকেট।

আরও একটি বিষয় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সম্ভবত বিবেচনায় রাখতে পারেন। অক্ষর মূলত সংক্ষিপ্ত সংস্করণের স্পিনার, রান আটকানোই যাঁর কাজ। টেস্টে যেহেতু উইকেট নেওয়াই মূল লক্ষ্য, তাই এই বিচারেও বাদ পড়তে পারেন অক্ষর। অবশ্য ভারত ব্যাটিং অর্ডার আরও শক্তিশালী করতে চাইলে ভিন্ন কথা। কিন্তু টেস্ট জেতার লক্ষ্য থাকলে এবং ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যে তাকালে স্বাগতিকেরা নিশ্চয়ই এই বিলাসিতাটুকুও এড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন, তৃতীয় স্পিনার হিসেবে কুলদীপের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।

আরও পড়ুন

কারণ? ভারতের এই বাঁহাতি কবজির স্পিনার বল দুই দিকেই বাঁক খাওয়াতে পারেন। গুগলিও ভয়ংকর। যেকোনো সংস্করণেই ভারতের জেনুইন উইকেট শিকারি এই স্পিনার। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলেছিলেন কুলদীপ। ভারতের ১৮৮ রানে জয়ের ম্যাচে ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। কিংবা এই পরিসংখ্যানও বাদ দিতে পারেন। শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর দিন—টেস্ট ম্যাচে এক ডানহাতি ও এক বাঁহাতি স্পিনারের সঙ্গে আপনি আরও একজন বাঁহাতি স্পিনার নিতে চান, নাকি এক কবজির স্পিনারকে নেবেন?

স্পিন বিভাগে বৈচিত্র্যের সম্ভার মাথায় রাখলে এবং প্রতিপক্ষ দলে পাঁচজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে কুলদীপের কপালে শিঁকে ছেঁড়ার সম্ভাবনাই কিন্তু বেশি।

সেই সম্ভাবনাকে আরও ভারী করছে একটি পরিসংখ্যানও। ২০১৭ সালে কুলদীপের টেস্ট অভিষেকের পর থেকে এ সময় পর্যন্ত তাঁর চেয়ে অক্ষরই বেশি উইকেট নিয়েছেন। ১৪ টেস্টে ৫৫ উইকেট। আর কুলদীপ নিয়েছেন ১২ টেস্টে ৫৩ উইকেট। স্ট্রাইক রেট বিচারে কিন্তু অক্ষরের (৪৬.১) চেয়ে কুলদীপই (৩৭.০) এগিয়ে। অর্থাৎ কুলদীপ প্রতি ৩৭ বল পর একটি করে উইকেট নিয়েছেন, আর অক্ষর নিয়েছেন ৪৬.১ বল পরপর। স্বাভাবিকভাবেই উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা যাঁর বেশি, তাঁর খেলার পাল্লাই ভারী থাকবে।

১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৭ সেপ্টেম্বর।