বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পর
‘পাওয়ার হিটিং’ কোচ খুঁজছে বিসিবি
বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা নিয়ে গত দুই দিনে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর বিসিবির সিদ্ধান্ত—টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনতে নেওয়া হবে একজন ‘পাওয়ার হিটিং’ কোচ।
প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নিজেই ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ। গত জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে দলের সঙ্গে আছেন আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্সও। তাতেও যখন টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রোগটা সারছে না, বিসিবি এবার খুঁজতে শুরু করেছে একজন ‘পাওয়ার হিটিং’ কোচ।
বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা নিয়ে গত দু-তিন দিনে ঢাকায় বিসিবির নীতিনির্ধারণী মহলে একাধিক সভা হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন বোর্ড পরিচালককে নিয়ে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। পরদিন দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে। এসব আলোচনা থেকেই সিদ্ধান্ত—টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং দুর্বলতা দূর করতে নিতে হবে একজন ‘পাওয়ার হিটিং’ কোচ।
সেই কোচ কে হবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালক কাল এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেছেন, ‘টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে আমাদের বড় দুর্বলতা আছে। সে জন্যই পাওয়ার হিটিং কোচ নেওয়ার সিদ্ধান্ত। টি-টোয়েন্টিতে নিজে সে রকম ব্যাটিং করেছেন, এমন কাউকেই আমরা নেব।’ সম্ভব হলে পাকিস্তান সিরিজের আগেই ‘পাওয়ার হিটিং’ কোচ খুঁজে বের করতে চায় বিসিবি। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে সেটি একটু কঠিনই বলে মনে করেন ওই পরিচালক, ‘এত তাড়াতাড়ি হয়তো কাউকে পাওয়া যাবে না। আর কেউ এসেই সিরিজের আগে আমাদের ব্যাটিং বদলে ফেলতে পারবে, সেটাও তো নয়।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে দু-তিন সদস্যের একটা কমিটিও নাকি হবে। খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সূত্র খুঁজবেন তাঁরা, দেখাবেন সমাধানের পথ। তবে তার আগেই বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের যে কারণগুলো সামনে চলে এসেছে, তার অন্যতম কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর পরিকল্পনার অভাব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ক্রিকেটাররাও প্রশ্ন তুলেছেন এ নিয়ে। আর ডমিঙ্গো খেলোয়াড়দের পেছনে লেগে থাকেন না, শুধু পরামর্শ দিয়ে খালাস—সে অভিযোগ তো তাঁর বিরুদ্ধে আগে থেকেই আছে। এ নিয়ে আলোচনা আছে বিসিবিতেও। কিন্তু চাইলেই তো আর নতুন কোচ খুঁজে বের করা যায় না। বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর কারণে ভালো কোচরা এখন আর দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে চান না।
ওদিকে ডমিঙ্গোর নতুন চুক্তিতেও দেওয়া আছে কঠিন এক শর্ত। চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চাকরিচ্যুত করলে পরবর্তী ছয় মাসের বেতন হাতে তুলে দিয়েই বিদায় করতে হবে তাঁকে। জানা গেছে, অনেকটা বিপদে পড়েই কোচের সঙ্গে এ রকম চুক্তিতে যেতে হয়েছে বিসিবিকে। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ বিসিবিকে জানান, বাইরে থেকে তাঁর কাছে ভালো প্রস্তাব আছে। বিসিবি যদি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে, তাহলেই কেবল তাঁর পক্ষে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকা সম্ভব। হাতে অল্প সময়, সামনে ছিল বিশ্বকাপ আর পেছনে দু-দুটি সিরিজ জয়ের সাফল্য। সব মিলিয়ে ডমিঙ্গোর শর্ত মেনেই তাঁকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পরও তাই অন্য কিছু ভাবতে পারছে না বিসিবি। তবে এই দফা জাতীয় দলে ডমিঙ্গোর কর্তৃত্ব কিছুটা কমে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। পাকিস্তান সিরিজ সামনে রেখে দলের ‘টিম ডিরেক্টর’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিবির পরিচালক ও কোচ খালেদ মাহমুদকে। ডমিঙ্গোর সঙ্গে তিনি দলের অনুশীলনেও ভূমিকা রাখবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে কাজে লাগানোর দাবি ক্রিকেটারদের অনেক দিনের। এবার তাঁকেও কোনোভাবে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কথা ভাবছে বিসিবি।
পাকিস্তান সিরিজ সামনে রেখে নিতে যাওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম নতুন কিছু ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া। বিশ্বকাপের দলে ছিলেন না, এমন অন্তত পাঁচ-ছয়জন ক্রিকেটার থাকতে পারেন পাকিস্তান সিরিজের দলের সঙ্গে। বিশ্বকাপের দল থেকে কেউ কেউ বাদও পড়বেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে কাউকে কাউকে ‘স্থায়ীভাবে’ বাদ দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, সেভাবে নয়।
একটা টুর্নামেন্টে খারাপ খেললে পরের সিরিজে কেউ বাদ পড়তেই পারেন। পরে আবার ভালো খেলে তাঁর দলে ফেরার সুযোগ থাকে। এ ক্ষেত্রেও সে রকমই হবে। তবে বিশ্বকাপে থাকা কোনো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের আপাতত বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। পাকিস্তান সিরিজটাও বাংলাদেশ খেলবে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্বেই। চোটের কারণে সাকিব আল হাসান ১৯ নভেম্বর শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলবেন না, এটা অবশ্য নিশ্চিত। ২১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে টেস্টের আগে তাঁর দলে যোগ দেওয়ার কথা।