তিন মাস সময় পেল ‘টিম ম্যানেজমেন্ট’
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের পর ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। তার আগে সে রাতেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে ছোটখাটো একটা সভা বসেছিল রাসেল ডমিঙ্গোর। যত দূর জানা গেছে, সে সভার আবহ খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের জন্য।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পাকিস্তান সিরিজেও হতাশাই উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দল। খেলোয়াড়দের বাজে পারফরম্যান্সের সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে কোচের ভূমিকা নিয়েও। বিসিবির অন্দরমহল থেকে এমনও শোনা গেছে, নিউজিল্যান্ড সফরে ভালো কিছু না হলে হয়তো এটাই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে শেষ ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ হবে ডমিঙ্গোর।
আজ বিকেএসপিতে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বলা কথায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও অনেকটা সে রকম আভাসই দিয়েছেন। তাঁর কথায় পরিষ্কার, বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোসহ বর্তমান টিম ম্যানেজমেন্টকে আরও তিন মাস দেখবে বিসিবি। নাজমুল হাসান অবশ্য কথাটা বলার সময় এই সময়সীমা পুরো ‘টিম ম্যানেজমেন্টের’ জন্য বলেই উল্লেখ করেছেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তারা পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য তিন মাস সময় চেয়েছে। কেউ যদি তিন মাস সময় চায়, আমি না করতে পারি?’
বিসিবি সভাপতি মনে করেন, পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য এই সময় পাওয়া উচিত টিম ম্যানেজমেন্টের, ‘এত দিন তো সময় দিইনি। এখন একটু সময় পাবে না? গত দেড় বছরে তো এমন হয়নি। তামিম, সাকিব, রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) নেই। মূল তিন খেলোয়াড়ই নেই! এটার প্রভাব থাকবে না? এখানে তো নতুন তিনজনকে দিতে হবে। সেটা দিতে গিয়ে অনেক সময় অনেক পরিবর্তন করা হয় দলে। আমার মনে হয়, সেটা (টিম ম্যানেজমেন্ট) ভালো কারণেই করে।’
টিম ম্যানেজমেন্ট বলতে প্রধান কোচ, অধিনায়ক, ম্যানেজার, টিম ডিরেক্টরসহ পুরো কোচিং স্টাফকেই বোঝায়। তবে বাংলাদেশ দল ব্যতিক্রম। এখানে টিম ম্যানেজমেন্টের পরিধি কখনো কখনো নির্বাচকদেরও ছাড়িয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ পর্যন্ত চলে যায়।
বিসিবি সভাপতির বিশ্বাস, বাংলাদেশ দল সাম্প্রতিক যে খারাপ সময় পার করছে, সেটি সাময়িক, ‘টিম ম্যানেজমেন্টকে চেষ্টা করতে দিন। আমি একেবারেই চিন্তিত নই। আমাদের যে ছেলেরা আছে এবং পাইপলাইনে যে ছেলেরা আছে, এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। যারা পারফর্ম করছে না, তারা করবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ দলের বাজে পারফরম্যান্সের শুধু সমালোচনাই করে গেছেন বোর্ড সভাপতি। তবে আজ সেই তিনিই ছাতা ধরলেন ক্রিকেটারদের মাথার ওপর, ‘একটা দলের পারফরম্যান্স হঠাৎ করে খারাপ হতেই পারে। তাহলে কী করবেন আপনি? আপনি কি হাল ছেড়ে দেবেন, নাকি এটাকে ঠিক করবেন? ওদের কারও সামর্থ্য নেই, তা তো নয়। তারাই তো আগে পারফর্ম করে দেখিয়েছে! এই বিশ্বকাপে সৌম্য, লিটন, নাঈম পারফর্ম করেনি, এ নিয়ে এত হুলুস্থুল! কিন্তু ওরা তো এত দিন পারফর্ম করেছে। এখন মনে হচ্ছে, ওরা খেলাই জানে না!’
দলের মূল খেলোয়াড়দের একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না, এটাকেই ব্যর্থতার মূল কারণ মনে করেন নাজমুল। সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, আগামী দিনেও তাঁদের ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশ দলকে, ‘আসল সমস্যা হচ্ছে, মূল খেলোয়াড়দের অনেকে এখন নেই। এখন থাকলেও সামনে থাকবে না। এটা আমরা সবাই জানি। পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড় নেই যে সারা জীবন খেলেছে। আমাদের তাদের বিকল্প খুঁজতে হবে।’
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের মন্থর উইকেট নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির উইকেট আর খেলার মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। তবে বিসিবি সভাপতি এসব সমালোচনার সঙ্গে একমত নন, ‘আপনারা প্রথমেই নিয়ে আসেন পিচ। এর কোনো কারণ খুঁজে পাই না। তারপর বলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের কথা। ঘরোয়া ক্রিকেট মানে কী? এই যে স্কুল ক্রিকেট, ক্রিকেট কার্নিভ্যাল করছি, হাজার হাজার ছেলে নিয়ে! এত কিছু করে খেলোয়াড় আনছি। আগে মেয়েদের জাতীয় দলের খেলোয়াড় পাওয়া যেত না। এখন ইমার্জিং, অনূর্ধ্ব-১৯ দল আছে।’
এরপর বিসিবি সভাপতির পাল্টা প্রশ্ন, ‘এগুলো এমনি এমনি হচ্ছে? সারা দেশে খুঁজে এদের বের করা হয়। আপনারা বলেন, ঘরোয়া ঘরোয়া...। ঘরোয়া কী? এগুলো কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট? না এগুলো গোনায়ই ধরেন না, আপনা–আপনি চলে আসে?’