আইপিএলের মালিকদের যে পরিকল্পনা বদলে দিতে পারে ক্রিকেটকে
বিপ্লব? আইপিএলের দৃষ্টিকোণ থেকে তা বলাই যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি শঙ্কার। আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে দল কিনছে। আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী ভেঙ্কি মাইসোর এর পেছনের কারণটা জানিয়েছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে। শুধু মৌসুম এলেই নয়, ক্রিকেটারদের সারা বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ রাখতে চায় নাইট রাইডার্স। যে চিন্তা বাস্তবায়িত হলে ক্রিকেটের চিরায়ত মানচিত্র বদলে যেতে পারে।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে আইপিএলের ব্র্যান্ড মূল্য ছিল প্রায় ৫৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। করোনা মহামারির আঁচ কমে আসায় আইপিএলও ফিরে এসেছে ভারতে। দর্শকেরাও ফিরেছেন গ্যালারিতে। এতে আইপিএলের বাজারমূল্য যে আরও বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো এরই মধ্যে দেশের বাইরে বিস্তৃত করেছে তাদের ব্যবসা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র—যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ এখনো শুরুই হয়নি, সেখানেও দল কিনে ফেলেছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির যখন তিন-চারটি দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দল থাকবে, সব দলে খেলানোর জন্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি করাটাই সুবিধাজনক। সেই পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন ভেঙ্কি মাইসোর। বাস্তবে রূপ পেলে যা হবে অনেকটাই ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের মতো। তবে এতে নেতিবাচক প্রভাবটা পড়বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বছরজুড়ে যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলতে হয় ক্রিকেটারদের, স্বাভাবিকভাবেই ধকল কমাতে তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা কমিয়ে দেবেন। কারণ আর্থিকভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলাটাই হবে বেশি লাভজনক। সেটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেকেই তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক বা একাধিক সংস্করণ থেকে অবসরে চলে যাবেন। কমে যাবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একটা পর্যায়ে গিয়ে তাই হয়ে যেতে পারে শুধু আইসিসি ইভেন্ট কেন্দ্রিক।
বছরজুড়ে যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলতে হয় ক্রিকেটারদের, স্বাভাবিকভাবেই ধকল কমাতে তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা কমিয়ে দেবেন। কারণ আর্থিকভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলাটাই হবে বেশি লাভজনক। সেটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেকেই তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক বা একাধিক সংস্করণ থেকে অবসরে চলে যাবেন। কমে যাবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একটা পর্যায়ে গিয়ে তাই হয়ে যেতে পারে শুধু আইসিসি ইভেন্ট কেন্দ্রিক।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিকের অধীনে এখনই মোট চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি—আইপিএলের মূল দলের সঙ্গে অনেক আগেই যোগ হয়েছে সিপিএলে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ও যুক্তরাষ্ট্রের মেজর ক্রিকেট লিগেও দল কিনেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এ দুটি টুর্নামেন্ট আগামী বছর থেকে শুরু হবে। আইপিএলের অন্য দলগুলোও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দল কিনছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের ছয়টি দলই কিনে নিয়েছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
ভেঙ্কি মাইসোর কলকাতার উদাহরণ টেনে বিষয়টি বোঝালেন, নাইট রাইডার্স ১২ মাসের জন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তাদের যেসব দল আছে, সেসব দলে বছরজুড়েই খেলোয়াড়দের খেলাতে চায় কলকাতা। টেলিগ্রাফকে মাইসোর বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই চাই। ধরা যাক, আমরা “এক্স”সংখ্যক খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ করাতে পারলাম এবং তাদের সবাইকে বিভিন্ন লিগে খেলাতে পারলাম, তাহলে বিষয়টি হবে মোক্ষলাভের মতো। আশা করি, একদিন এটা হবে এবং তখন আমি আশ্চর্য হব না।’
ধরা যাক, আমরা “এক্স”সংখ্যক খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ করাতে পারলাম এবং তাদের সবাইকে বিভিন্ন লিগে খেলাতে পারলাম, তাহলে বিষয়টি হবে মোক্ষলাভের মতো। আশা করি, একদিন এটা হবে এবং তখন আমি আশ্চর্য হব নাভেঙ্কি মাইসোর, কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা তো আছেই। একেক লিগে খেলোয়াড় নিবন্ধন করার একেক নিয়ম, নিলামের নিয়মও আলাদা। এর বাইরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর দর-কষাকষির বিষয়ও আছে। মাইসোরের আশা, এসব বিষয় ভবিষ্যতে সংস্কার করে দলগুলোকে এক নিয়মের ছায়াতলে আনা হবে। আর একাধিক বছরের জন্যও চুক্তি করা হবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে।
মাইসোরের আশা, ‘এমন কিছু ঘটলে ভবিষ্যতের জন্য তা দুর্দান্ত হবে। সব খেলোয়াড়ের জন্য একই নিয়ম, একই সংস্কৃতি চালু করতে চাই আমরা, তাতে আমাদের ব্র্যান্ডের দাম যেমন বাড়বে, তেমনি সমর্থকসংখ্যাও বাড়বে। সুযোগ বাড়বে বিশ্বের নানা প্রান্তের ক্রিকেটারদের জন্যও। এভাবে একটি সফল ব্যবসায়িক মডেল দাঁড় করানো সম্ভব।’
মাইসোর এ-ও জানালেন, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রতিযোগিতা ‘দ্য হানড্রেড’-এ ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে সেখানেও টাকা ঢালতে চায় কলকাতা নাইট রাইডার্স, ‘হ্যাঁ, এমন প্রস্তাব পেলে আমরা সবার আগে “হ্যাঁ” বলতে চাই। কারণ, এটা আমাদের কৌশলেরই অংশ। সেটা হোক বিগ ব্যাশ কিংবা হানড্রেড।’
আরেকটা সমস্যাও কিন্তু আছে। এখন ভারতের ক্রিকেটারদের অন্য কোনো দেশের ফ্র্য্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনুমতিই দেয় না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। মাইসোর তাই আশা করছেন, ভারতের ক্রিকেটারদের আইপিএলের বাইরে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও খেলার অনুমতি দেওয়া হবে, ‘আশা করি, ভবিষ্যতে একদিন এমন কিছু হবে। তবে ক্রিকেটারদের কিসে সবচেয়ে ভালো হবে, ভারতের ক্রিকেটের জন্য কোনটা ভালো হবে, সেসব ভাবতে হয় (বোর্ডকে)। তাদের অনুমতি দেওয়া হলে, সেটি যদি সীমিত আকারেও দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত আইপিএলে যারা সুযোগ পাচ্ছে না, তারা যাত্রা শুরু করতে পারবে।’