ক্রিকেট দুনিয়াকে মেলবোর্ন দর্শকদের 'ঝাঁকুনি'

এমনিতেই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার মঞ্চ। শনিবার এই এমসিজি সাক্ষী হলো আরও এক ঐতিহাসিক ঘটনার। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশের ‘মেলবোর্ন ডাবি’ উপভোগ করতে কাল এমসিজিতে উপস্থিত ছিলেন ৮০ হাজার ৮শ ৮৩ জন দর্শক। যা যেকোনো দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড।
বিগ ব্যাশের আগের রেকর্ড মেলবোর্ন ছাড়িয়েছে বড় ব্যবধানেই। গত মৌসুমে অ্যাডিলেড ওভালে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকারস বনাম সিডনি সিক্সার্সের ম্যাচে দর্শক হয়েছিল ৫২ হাজার ৬শ ৩৩ জন। এর চেয়ে মেলবোর্নে দর্শক উপস্থিতি ছিল ২৮ হাজার ২৫০ জন বেশি। মানুষের এত ঢল দেখে মাঠ কর্তৃপক্ষকে গ্যালারি ব্যবস্থাপনাতেও আনতে হয়েছে পরিবর্তন। স্টেডিয়ামের যে বিশেষ গ্যালারির আসনগুলো সংরক্ষিত ছিল, বাধ্য হয়েই তা ছেড়ে দিতে হয়েছে সাধারণ দর্শকদের। সাধারণ দর্শকেরাই তো আসল ‘ভিআইপি’!
ম্যাচ শেষে মেলবোর্ন স্টারসের কোচ, নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিং ঘরোয়া ক্রিকেটে এত বিপুল দর্শক উপস্থিতিকে বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি ম্যাচে ৮০ হাজারেরও বেশি দর্শকের উপস্থিতি ক্রিকেট দুনিয়াকে বড় ধরনের একটা ঝাঁকুনিই দেবে।’
এমসিজির এই দর্শক সংখ্যা ‘ঝাঁকুনি’ দিয়েছে দর্শক উপস্থিতির অনেক রেকর্ডকেও। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটে নয়, শনিবারের দর্শক উপস্থিতির সংখ্যাটি ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো ম্যাচে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির সংখ্যার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল দেখতে এমসিজিতেই উপস্থিত ছিলেন ৯৩ হাজার ১৩ জন দর্শক। এটিই এখন পর্যন্ত ক্রিকেট মাঠে সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতির আনুষ্ঠানিক রেকর্ড। মেলবোর্ন ডার্বিতে হাজির হওয়ার দর্শক ছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে চেয়ে মাত্র ১২ হাজার ১৩০ জন কম।
ক্রিকেট মাঠে দর্শক উপস্থিতির রেকর্ডগুলোতে মেলবোর্নের নামটি ঘুরে ফিরে আসে এক বিপুল দর্শক ধারণক্ষমতার জন্যও। ২০১৫ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে, সেটিও হয়েছে মেলবোর্নেই। ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচটি দেখতে সেদিন মাঠে ছিলেন ৮৭ হাজার ৮শ ১২ জন দর্শক। আর মাত্র ৬ হাজার ৯২৯ জন দর্শক বেশি হলেই ’৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালের রেকর্ডটি ছাড়িয়ে যেত মেলবোর্ন রেনেগেডস ও মেলবোর্ন স্টারসের এই লিগ ম্যাচটিও!
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ইডেনের গ্যালারিতে কত দর্শক ছিল, সেটা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। অনেকেই দাবি করেন, সেদিন দর্শক সংখ্যা আশি হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৭ নেহরু কাপের ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল, ১৯৮৯ সালে ভারত-পাকিস্তানের টেস্ট, ইডেনের এই ম্যাচগুলোতে দর্শকসংখ্যা এক লাখের কাছে গিয়েছিল, এ বিষয়েও জোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু সেগুলোর লিখিত কোনো রেকর্ড নেই।
পৃথিবীতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতার ক্রিকেট মাঠ এমসিজিই। যে ইডেন গার্ডেন নিয়ে এত দিন ভারতীরা গর্ব করত, সেই ইডেনের ধারণক্ষমতা অনেক আগেই কমে নেমে এসেছে ৬৭-৭০ হাজারে। পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় ক্রিকেট মাঠ যেমন সিডনি, ব্রিসবেন, ওয়াকা, অ্যাডিলেড কিংবা মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই—কারওরই দর্শক ধারণক্ষমতা এমসিজির ধারেকাছেও নেই।
কিন্তু গ্যালারিতে আসন থাকলেই তো হলো না, সেগুলো না ভরলে রেকর্ডটাই বা হবে কী করে। আর তাই ধারণক্ষমতার হিসেবের কথা বাদ দিন, ক্রিকেট ভালোবাসার হিসেবেও বোধ হয় মেলবোর্ন বাসী এগিয়ে থাকবেন অনেকটা পথ! সিডনি মরনিং হেরাল্ড ও ফক্স স্পোর্টস।