বেশ আলোড়ন তুলেই ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পেস বোলিং কোচ হয়ে কোর্টনি ওয়ালশের বাংলাদেশে আসা। ড্রেসিংরুমে তাঁর মতো একজন কিংবদন্তিকে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরাও। টেস্টে একসময়ের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ওয়ালশের আগমন যতটা আলোড়ন তুলে, বিদায়টা সেভাবে হয়নি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর বিসিবির সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে অনেকটা নিভৃতেই বাংলাদেশ-অধ্যায় শেষ করেছেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। বাংলাদেশের চাকরি ছাড়ার পর আগের মতোই নিরিবিলি জীবনযাপন করছেন জ্যামাইকাতে। সেখান থেকেই পরশু রাতে প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ওয়ালশ ফিরে দেখলেন তাঁর তিন বছরের বাংলাদেশ-পর্ব—
প্রশ্ন: ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে। কেমন উপভোগ করছেন সিরিজটা?
কোর্টনি ওয়ালশ: খুবই ভালো লাগছে যে ক্রিকেট আবার ফিরেছে। প্রথম টেস্টের ফল দেখে আমি খুবই খুশি (সাউদাম্পটন টেস্টে ইংল্যান্ডকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে ৪ উইকেটে)।
প্রশ্ন: বর্তমান উইন্ডিজ ফাস্ট বোলিং আক্রমণকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? টেস্টে হোল্ডার-গ্যাব্রিয়েল-রোচদের দেখে কি মনে হচ্ছে ফাস্ট বোলিংয়ে ক্যারিবীয়রা পুরোনো সেই ধারটা ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে?
ওয়ালশ: খুবই ভালো লাগছে ওদের মান আর সম্ভাবনা দেখে। এ কারণেই ওরা এখানে। আরও ম্যাচ খেলার সঙ্গে সঙ্গে তারা আরও ভালো করবে। খুব ভালো আগ্রাসন তাঁরা এরই মধ্যে দেখিয়েছে।
প্রশ্ন: গত বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে আসার পর আপনাকে নিয়ে যেভাবে হইচই হয়েছিল, বিদায়টা ঠিক সেভাবে হয়নি। নীরবে-নিভৃতেই বিদায় নিয়েছেন। বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা মধুর নাকি তিক্ত বলবেন?
ওয়ালশ: বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। আমি দুঃখিত, ভক্ত-সমর্থকদের কাছ থেকে ভালোভাবে বিদায় নেওয়া হয়নি। একটাই তিক্ত অভিজ্ঞতা, বোর্ডের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের ঘাটতি ছিল।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে যে তিন বছর কাজ করেছেন, ওই সময় সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন কি?
ওয়ালশ: ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আমাদের পারফরম্যান্স এবং যতগুলো সিরিজ জিতেছি, প্রতিটি উপভোগ্য ছিল। বেশির ভাগ খেলোয়াড় আমাকে দারুণ সম্মান করেছে। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে (আগের) স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ মারিওর (ভিল্লাভারায়ন) সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, যাকে আমি নিজের ভাই মনে করি। কিছু খেলোয়াড় আমাকে যেভাবে দেখাশোনা করেছে তারা আজও আমার কাছে পরিবারের মতো। যত দিন ওখানে ছিলাম, উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী ছিল আপনার কাছে?
ওয়ালশ: যোগাযোগের ঘাটতি, যেটি আপনাকে আগেই বললাম। যা করতে চেয়েছিলাম সেসব কাজ আমি করতে পারিনি।
প্রশ্ন: শুনেছি খেলোয়াড়দের সঙ্গে আপনার ভাষাগত একটা দূরত্ব ছিল। আপনার কি মনে হয় কাজে এটা ভীষণ প্রভাব ফেলেছে?
ওয়ালশ: শুরুতে তো মনে করতাম তারা আমার কথা খুব ভালো বুঝতে পারে...(হাসি)! তবে পরে আমরা সমস্যাটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিলাম।
প্রশ্ন:তিন বছরে তো অনেক পেসারকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আপনার। খুব সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে, এমন কেউ আছেন?
ওয়ালশ: এটা বলতে পারব না। আমি নাম উল্লেখ করতে পছন্দ করি না।
প্রশ্ন: ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যদি নতুন বলে খুব ভালো করতে পারত, আপনি কি মনে করেন চাকরিটা এখনো চালিয়ে যেতে পারতেন? নাকি ভবিষ্যৎ নিয়ে আগেই ভেবে রেখেছিলেন?
ওয়ালশ: আমি তো ব্যাগ প্রস্তুত করে রেখেছিলাম সেই নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগ থেকেই (২০১৯ সালের জানুয়ারিতে)। আমাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাংলাদেশ সফরের সময় (২০১৮ সালের নভেম্বরে) পর্যন্ত পেসারদের নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের কেউ থাকা না–থাকা নিয়ে আমার সঙ্গে কথাই বলেনি। ফলে কাজ চালিয়ে গেছি। আর আমার মনে হয়েছে, বিশ্বকাপে ভালো করতে বোলারদের ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগই দেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। পেস বোলিং কোচ হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার কোনো কথা শোনা যায়নি...।
ওয়ালশ: আমরা সবাই জানি অধিনায়ক মাশরাফি বিশ্বকাপে ভালো করেনি। সে একজন যোদ্ধা এবং নিজেই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে স্বীকার করবে যে সে বিশ্বকাপে ভালো করেনি।
প্রশ্ন: এ বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং আক্রমণ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আরেক ক্যারিবীয় কোচ ওটিস গিবসনকে। তিনি কেমন করবেন বলে মনে হয় আপনার?
ওয়ালশ: ওটিস খুবই ভালো কোচ। যদি বোর্ড তাকে ভালো সুযোগ দেয়, আর বাংলাদেশে যে প্রতিভাবান ফাস্ট বোলার আছে, তাতে আমি নিশ্চিত সে ভালো করবে।