ফিফা ও আদালতে দেশের ফুটবল
করোনা সংকটের মধ্যেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ফুটবলাঙ্গন। অনিয়মের অভিযোগ তুলে বর্তমান দুই সহসভাপতি চিঠি পাঠান ফিফায়। এবার সে বিতর্ক গড়াল আদালতেও।
গত ২০ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষিত হয়নি। নির্বাচনে কাউন্সিলর (ভোটার) হবেন কারা, এই নিয়েই চলছে হুলুস্থুল কাণ্ড। কাউন্সিলরদের নাম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৭ জুন। কিন্তু চারটি ক্লাব সংবাদ সম্মেলন করে বাফুফের বিপক্ষে বৈধ কাউন্সিলরদের বাদ দেওয়া ও অবৈধ কাউন্সিলরদের বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তোলে। শুধু সংবাদ সম্মেলন করেই থামেননি ঢাকা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, কাউন্সিলর হতে না পেরে তিনি গেছেন হাইকোর্টে। বুধবার রায়ও পেয়েছেন নিজের পক্ষে।
নির্বাচন সামনে রেখে সদস্যদের কাছে নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলরের নাম চেয়ে চিঠি পাঠায় বাফুফে। কিন্তু শাহিনুলের অভিযোগ, অন্যদের কাগজপত্র দিলেও তাঁকে কাউন্সিলরের ফরম দেওয়া হয়নি। তাঁর কমিটিকে বাফুফে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল প্রথম আলোকে শাহিনুল বলেন, 'আমরা বৈধভাবে ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন করেছি। বৈধ কমিটি হওয়া সত্ত্বেও বাফুফে থেকে আমাকে কাউন্সিলরশিপ দেয়নি। আদালতের দ্বারস্থ হলে আমার পক্ষে রায় আসে। রায়টা হলো, যে চিঠির মাধ্যমে বাফুফের ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনকে অবৈধ বলেছিল এবং আমাদের কাউন্সিলরশিপ দেয়নি, আদালত বাফুফের সেই চিঠির কার্যকারিতার ওপর এক মাসের স্থিতি আদেশ দিয়েছেন।'
এর অর্থ শাহিনুলের কমিটি আপাতত বৈধ বলে বিবেচিত হবে। এবং বৈধ হওয়া মানে কাউন্সিলরশিপও তাঁরা পাবেন। মজার ব্যাপার, এরই মধ্যে বাফুফে আবদুর রহিমকে কাউন্সিলরশিপ দিয়েছে। এখন শাহিনুল বলছেন, তিনি রহিমের কাউন্সিলরশিপ বাতিল চাইবেন এবং নিজেদের পক্ষে কাউন্সিলরশিপ দাবি করবেন। তবে এটাই চূড়ান্ত নয়। বাফুফে আপিল করলে ব্যাপারটা অন্য দিকেও মোড় নিতে পারে।
বাফুফে কেন শাহিনুলের কমিটিকে অবৈধ বলছে? গতকাল সেটিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, 'গত ৯ মার্চ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৯ মার্চ আমাদের ঢাকা জেলা অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তফসিল ঘোষণার পরের দিন আগের সভাপতিকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায় বাফুফে। কিন্তু আইনগতভাবে তখন আর সে সুযোগ ছিল না। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমার কমিটি জয়ী হয়।' নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচন করাতেই নির্বাচিত কমিটিকে অবৈধ বলে বাফুফে।
কেন শাহিনুলকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, 'ঢাকা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনসংক্রান্ত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কিছু কাগজপত্র চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে সেসব দিতে ব্যর্থ হয়। এরপরও আমরা এক সপ্তাহ অপেক্ষা করি। পরে আমাদের অন্ধকারে রেখে তারা নির্বাচনী কার্যক্রম চালায়। আমরা নির্বাচন বন্ধ রাখতে বললেও তারা আমাদের না জানিয়ে নির্বাচন করেছে।'
এদিকে করোনার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করা এবং কাউন্সিলরশিপ জালিয়াতিসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ জানিয়ে ফিফায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাফুফের বর্তমান সহসভাপতি বাদল রায় ও মহিউদ্দিন মহি। জবাবে এসব বিষয়ে তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছে ফিফার নৈতিক কমিটি। প্রয়োজনে দুই সহসভাপতির সঙ্গে যোগাযোগও করা হবে বলেও পাল্টা চিঠিতে জানিয়েছে তারা।