পাকিস্তানের 'নির্বোধ'দের তালিকাটা ছোট নয়
ম্যাচ ফিক্সিং–সংক্রান্ত প্রস্তাব পেয়েও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অপরাধ করেছেন উমর আকমল। তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তিন বছরের জন্য। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজার মতে আকমল অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ‘নির্বোধ’দের তালিকায়। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ব্যাপার–স্যাপারে জড়িয়ে পড়া পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের জন্য নতুন কিছু নয়। অতীতে পাকিস্তানের বড় বড় বেশ কয়েকজন ক্রিকেট তারকাই এ কলঙ্কের ভাগীদার হয়েছেন। এ তালিকাটা নেহাতই ছোট নয়...
সেলিম মালিক
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। আশির দশকে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হতো তাঁকে। ১৯৯৫ সালে দলের অধিনায়ক তখন তাঁর বিরুদ্ধে আভিযোগ ওঠে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের। অস্ট্রেলীয় তারকা মার্ক ওয়াহ ও শেন ওয়ার্নকে ম্যাচ হেরে যাওয়ার জন্য ঘুষ সাধার অভিযোগটিই ছিল মূল। এরপর তদন্তে বেরিয়ে পড়ে অন্ধকার জগতে তাঁর বিচরণের তথ্য। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আজীবনের জন্য। তাঁকে জেলও খাটতে হয়। ২০০৮ সালে আদালতের নির্দেশে তাঁর আজীবন নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এখন পর্যন্ত তাঁকে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি থেকে দূরেই রেখেছে।
আতা–উর–রেহমান
নব্বইয়ের দশকে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, আকিব জাভেদদের সঙ্গে আতা–উর–রেহমানের নামও উচ্চারিত হতো। ২০০০ সালে ক্রিকেট–জুয়াড়িদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয় আজীবন। ২০০৬ সালে অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
সালমান বাট
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে তাঁরই নির্দেশে ইচ্ছা করে নো বল করেছিলেন মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফ। দুনিয়া তোলপাড় করা এই স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির হোতা ধরা হয় তাঁকে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইংল্যান্ডের আদালত তাঁকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ১০ বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও ৫ বছর ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। তিনি অবশ্য পরবর্তীকালে ক্রিকেটে ফিরেছেন। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও কখনোই আর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি।
মোহাম্মদ আসিফ
সালমান বাটের ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য তিনিও জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা খেয়েছিলেন। এই অপরাধে তাঁকেও ইংলিশ আদাল এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, নিষিদ্ধ করা হয় ৭ বছরের জন্য। তিনিও পরে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছেন।
মোহাম্মদ আমির
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ের অন্যতম হোতা। সালমান বাট ও মোহাম্মদ আফিসের সহকারী। তাঁরও একই মামলায় কারাদণ্ড হয়। যদিও বয়স ১৮ বছরের নিচে থাকায় তাঁকে কিশোর অপরাধী হিসেবে দেখা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের একটি কিশোর সংশোধনালয়ে তাঁকে কাটাতে হয় ৬ মাস। ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিনি পরবর্তীতে খুব ভালোভাবেই ফেরেন। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে দুটিই খেলেছেন। খেলেছেন বিশ্বকাপ। তিনিই খুব সম্ভবত ম্যাচ ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিংয়ের অপরাধে অপরাধী একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি খুব ভালোভাবেই নিষেধাজ্ঞা শেষ করে ক্রিকেটে ফিরতে পেরেছেন।