বাংলাদেশের সঙ্গে এত কম খেলেছে ভারত-পাকিস্তান
>কোন দলের সঙ্গে কতগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ ক্রিকেটে দুঃসময়ের বন্ধু? সে আর বলতে! হামা গুঁড়ি দিয়ে চলার সময়ে তাকালেই বোঝা যায়। তখন ফিরেও তাকায়নি অনেক দল। নাক উঁচু করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকেই। তখন পাশে দাঁড়িয়েছে জিম্বাবুয়ে। বারবার সফরে এসেছে বাংলাদেশে। এখন সেই জিম্বাবুয়েই বাংলাদেশ সফরে এলে নাক সিঁটকান অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রসিকতা চলে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী করতে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে!
দোষ দেওয়া যায় না। নিচু মাথা ধীরে ধীরে আকাশ দেখা শুরু করলে আর মাটিতে তাকাতে কার ভালো লাগে! দুঃখজনক সত্য হলো, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সেই দিন আর নেই। ১৯৯৭ সালের ১১ অক্টোবর নাইরোবিতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। সে ম্যাচে জিম্বাবুয়ে দলে ছিলেন অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, পল স্ট্রাং, ফ্লাওয়ার ভাইদের মতো ক্রিকেটাররা। আমিনুল ইসলাম, আকরাম খান, আতহার আলী ও মোহাম্মদ রফিকদের নিয়ে বাংলাদেশ। ২৩ বছর পর কী দেখা যাচ্ছে? শক্তির ব্যবধানটা উল্টো। এ কারণেই কারও কারও নাক সিটকানো। সময়ের কী আশ্চর্য পালাবাদল!
এই সময়ই দুই দলকে গেঁথেছে এক সূত্রে—যেখানে আর কোনো দলের সঙ্গে এতবার খেলেনি বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যত ম্যাচ খেলেছে। পরশু ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট এ দুটি দলের আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের ইতিহাসে শততম ম্যাচ। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার এই খেরোখাতায় জিম্বাবুয়ের পরের দল কোনটি?
শ্রীলঙ্কা। ৩৪ বছরের ইতিহাস। ১৯৮৬ সালে প্রথম শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। মাঝের এ সময়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৭৯টি ম্যাচ খেলেছে দুই দল।এর মধ্যে টেস্ট ২০টি, ওয়ানডে ৪৮টি ও টি-টোয়েন্টি ১১টি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের (৭২) পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৪৮)। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য জিম্বাবুয়ে ও ভারতের সমান ১১ ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এ দলটির বিপক্ষে তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১২টি—যা জিম্বাবুয়ে (৫৭) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (২৪) পর তৃতীয় সর্বোচ্চ।
জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাসহ মোট ছয়টি দল তিন সংস্করণ মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ১৯৯৯ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলেছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৬ ম্যাচ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ (৩৮) ম্যাচ খেলা দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে নিয়ে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচ খেলেছে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে। টেস্টে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ ম্যাচ খেলেছে ক্যারিবিয়ানরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরই উঠে আসবে ভারতের নাম। তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এ পর্যন্ত ৫৮টি ম্যাচ খেলেছে তারা। তবে সময়ের হিসেবে করলে প্রতিবেশী দেশটি তুলনামূলক কম ম্যাচই খেলেছে বাংলাদেশের সঙ্গে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তারা। এই ৩২ বছরে ৫৮ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার ৩৪ বছরে ৭৯ ম্যাচের তুলনায় বেশ কম বলেই মনে হবে। সে যাই হোক, ভারতের বিপক্ষে এ ৫৮ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৬টি জিতেছে বাংলাদেশ। গত দুই দশকে বাংলাদেশের সঙ্গে ১১টি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি খেলেছে ভারত। তাদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৩৬ ম্যাচে বাংলাদেশের ৫ জয় ও বাকি জয়টা টি-টোয়েন্টিতে।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্কও ৩৪ বছরের। কিন্তু তিন সংস্করণ মিলিয়ে এ সময়ে মাত্র ৬০ ম্যাচ খেলায় প্রশ্নটা থেকেই যায়—ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে আরেকটু বেশি বেশি কি খেলতে পারত না? প্রশ্নটা উঠছে শ্রীলঙ্কার ম্যাচসংখ্যা দেখে। ১১ টেস্ট, ৩৭ ওয়ানডে ও ১২ টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এ ৬০ ম্যাচে মাত্র ৭ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ড সে তুলনায় অন্তত উপমহাদেশের এ দুটি দলের চেয়ে সন্তোষজনক। ৩০ বছরের ক্রিকেটীয় সম্পর্কে তারা ৫৭ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের সঙ্গে। ১৫ টেস্ট, ৩৫ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
এবার আসা যাক, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা প্রসঙ্গে। গত দুই দশকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। ১৮ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে ৩৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আর অস্ট্রেলিয়া দুই দশকে খেলেছে ইংল্যান্ডের সমান ম্যাচ (৩১)। এ তিনটি দলের বিপক্ষে যথাক্রমে ৫, ৪ ও ২ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ও কেনিয়ার বিপক্ষে খেলেছে সমান ১৫টি করে ম্যাচ। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত লেগেছে কেনিয়ার সঙ্গে ১৫ ম্যাচ খেলতে। গত ৫ বছরে আফগানিস্তানের সঙ্গে এত ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় ৭টি, কেনিয়ার বিপক্ষে জয় ৯টি।
তখন খেলা কম থাকায় কেনিয়ার সঙ্গে ১৫ ম্যাচ খেলতে এত সময় লেগেছিল বাংলাদেশের। যদিও ‘নষ্টালজিক’ সমর্থকদের কেউ কেউ ভেবে থাকেন তখন কেনিয়া ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে নিয়মিত প্রতিপক্ষ। কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। কারণ তখন জিম্বাবুয়েও ছিল। ধীরে ধীরে কেনিয়া মিলিয়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানচিত্র থেকে। জিম্বাবুয়ে টিকে আছে কোনোমতে। আর বাংলাদেশ?
পায়ের তলে ভিতটা এখন শক্ত। তবে জিম্বাবুয়েকে দেখে শিক্ষা না নিলে বিপদ অবশ্য সম্ভাব্য!
বাংলাদেশের সঙ্গে যত ম্যাচ খেলেছে দলগুলো (টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি):
সময় | প্রতিপক্ষ | ম্যাচ | জয় | হার | ড্র | নো–রেজাল্ট | জয়/হার |
১৯৯৭–২০১৯ | জিম্বাবুয়ে | ৯৯ | ৫৭ | ৩৯ | ৩ | ০ | ১.৪৬১ |
১৯৮৬–২০১৯ | শ্রীলঙ্কা | ৭৯ | ১২ | ৬২ | ৩ | ২ | ০.১৯৩ |
১৯৯৯–২০১৯ | ও.ইন্ডিজ | ৬৬ | ২৪ | ৩৭ | ২ | ৩ | ০.৬৪৮ |
১৯৮৬–২০২০ | পাকিস্তান | ৬০ | ৭ | ৫২ | ১ | ০ | ০.১৩৪ |
১৯৮৮–২০১৯ | ভারত | ৫৮ | ৬ | ৪৯ | ২ | ১ | ০.১২২ |
১৯৯০–২০১৯ | নিউজিল্যান্ড | ৫৭ | ১০ | ৪৪ | ৩ | ০ | ০.২২৭ |
২০০২–২০১৯ | দ.আফ্রিকা | ৩৯ | ৪ | ৩৩ | ২ | ০ | ০.১২১ |
২০০০–২০১৯ | ইংল্যান্ড | ৩১ | ৫ | ২৬ | ০ | ০ | ০.১৯২ |
১৯৯০–২০১৯ | অস্ট্রেলিয়া | ৩১ | ২ | ২৮ | ০ | ১ | ০.০৭১ |
২০১৪–২০১৯ | আফগানিস্তান | ১৫ | ৭ | ৮ | ০ | ০ | ০.৮৭৫ |
১৯৯৭–২০০৭ | কেনিয়া | ১৫ | ৯ | ৬ | ০ | ০ | ১.৫০০ |
২০০৭–২০১৯ | আয়ারল্যান্ড | ১৫ | ১০ | ৩ | ০ | ২ | ৩.৩৩৩ |
* জয়, হার ও ড্র বাংলাদেশের।