ইনজামামের চোখে ক্রিকেট পাল্টে দেওয়া তিন খেলোয়াড়
>ক্রিকেট খেলার ধারা পাল্টে দেওয়া তিনজনকে স্মরণ করলেন পাকিস্তানি কিংবদন্তি ইনজামাম–উল হক
ক্রিকেটের ইতিহাস আজকের না। শুধু টেস্টের ইতিহাসই ১৪৩ বছরের। এই ক্রিকেটে কত খেলোয়াড়, কত কিংবদন্তি এলেন-গেলেন। খেলাটার ধারা পাল্টে দিতে পেরেছেন কজন? ইনজামাম-উল হক বেছে নিলেন এমন তিনজন ক্রিকেটারকে। নিজেদের সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনী ব্যাটিংয়ে আক্রমণাত্মক খেলায় ‘নতুন ধারা’র সৃষ্টি করেছেন এ তিন ক্রিকেটার, মনে করেন ইনজামাম।
পাকিস্তানি কিংবদন্তি এ কথা কোনো সংবাদমাধ্যমকে বলেননি। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা সংবাদমাধ্যমের চেয়ে নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলকেই বেশি সময় দিচ্ছেন। সেখানে ক্রিকেট নিয়ে বিশ্লেষণের পাশাপাশি নানা মন্তব্যও করছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা। তেমনি ইনজামামও নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন খেলার ধারা পাল্টে দেওয়া তিন ক্রিকেটার নিয়ে।
ইনজামাম বলেন, ‘তিনজন ক্রিকেটার ক্রিকেট খেলাটা পাল্টে দিয়েছে। খেলায় নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে।’ পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ও টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করা ইনজামামের মতে প্রথম ক্রিকেটারটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেক্সান্দার রিচার্ডস। তাঁকে নিয়ে ইনজামাম বলেন, ‘অনেক আগে ভিভ রিচার্ডস খেলাটা পাল্টে দেয়। তখন পেসারদের পেছনের পায়ে খেলত ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু তিনি দেখিয়ে দেন পেসারদের কীভাবে সামনের পায়ে খেলতে হয়। পেসারদের যে আক্রমণ করা যায়, সেটি তিনি শিখিয়েছেন সবাইকে। ভিভ চিরকালের কিংবদন্তি।’
১২১ টেস্টে ৫০.২৩ গড়ে ৮৫৪০ রান করেন ভিভ। ১৮৭ ওয়ানডেতে ৪৭ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৬৭২১ রান। ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ৯০-এর ওপরে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত বোলারদের স্রেফ কাঁপিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।
ইনজামামের দ্বিতীয় ক্রিকেটারটি শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার সনাথ জয়াসুরিয়া। ১৯৮৯ থেকে ২০১১—এ সময়ের মধ্যে তিন সংস্করণ মিলিয়ে স্পিনে মোট ৪৪০ উইকেট পেলেও জয়াসুরিয়া খ্যাত কুড়োন তাঁর ব্যাটিংয়ের জন্য। প্রথম ১৫ ওভারে ফিল্ডিংয়ে বাধ্যবাধকতা থাকতে বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানানোর কৌশলে শ্রীলঙ্কা সফলতা পেয়েছিল মূলত জয়াসুরিয়ার জন্যই। ইনজামাম তাঁকে নিয়ে বলেন, ‘দ্বিতীয় পরিবর্তনটা এনেছে সনাথ জয়াসুরিয়া। সে প্রথম ১৫ ওভারের মধ্যে পেসারদের আক্রমণ করত। তারা আগে যারা বোলারদের উড়িয়ে মারতেন তারা বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছিলেন না। কিন্তু সে ১৫ ওভারের ভেতর মাঠের মধ্যেই বোলারদের উড়িয়ে মারার ব্যাপারে ধারণাই পাল্টে দেয়।’ ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারণ ছিল ইনিংসের শুরুতে জয়াসুরিয়ার মারমুখী ব্যাটিং।
তৃতীয় পরিবর্তনটি ঘটেছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাত ধরে, মনে করেন ইনজামাম, ‘তৃতীয় যে খেলোয়াড়টি ক্রিকেটকে পাল্টে দিয়েছেন তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্স। এখন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে যে গতিময় ক্রিকেট দেখছেন তা মূলত ডি ভিলিয়ার্সের জন্যই। এর আগে ব্যাটসম্যানেরা সোজা ব্যাটে মারতেন। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স এসে প্যাডেল সুইপ, রিভার্স সুইপে মারতে শুরু করলেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১১৪ টেস্টে ৮৭৬৫ রান করেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ওয়ানডেতে ২২৮ ম্যাচে করেছেন ৯৫৭৭ রান। ইনজামাম মনে করেন এ তিন সাবেকের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তাঁরা সবাই জাত ব্যাটসম্যান। মানসিক শক্তি ও বিপদ থেকে ঘুরে দাঁড়াতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন তাঁরা।