বিপিএলের হতাশা মুশফিকদের স্ট্রাইকরেট
>টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপিএলে দেশি ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেটের কী অবস্থা?
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রচলনের পর ব্যাটিং-স্ট্রাইকরেটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। গতকাল রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে আন্দ্রে রাসেলের ম্যাচজয়ী ইনিংসটির কথাই ধরুন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৭৬ রান দরকার ছিল রাজশাহীর। ওভারপ্রতি গড়ে ১৫ রানের বেশি। টি-টোয়েন্টি আবির্ভাবের আগে এমন সমীকরণকে অসম্ভবই মনে করা হতো। কিন্তু এখন এই সমীকরণও মিলিয়ে দিতে পারেন ক্রিকেটাররা। রাজশাহীর হয়ে রাসেলের মেলালেন যেমন করে। ২২ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে রাসেলের স্ট্রাইকরেট ছিল ২৪৫.৪৫! ক্যারিবীয় তারকারটি অভাবনীয় হলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্ট্রাইকরেট যতটা সম্ভব বেশি রাখারই চেষ্টা থাকে ব্যাটসম্যানদের।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনোই খুব সুবিধা করতে পারে না। কেন পারে না, এ প্রশ্ন সবারই। মূল কারণটা বোঝা যায় বাংলাদেশের সেরা ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেট দেখলে। এবারের বিপিএলে ন্যূনতম ৩ ইনিংস ব্যাটিং করেছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষ পাঁচ স্ট্রাইকরেটের মালিক কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান নন!
এখানে তালিকায় শীর্ষ পাঁচজনের নামটা আগে জানিয়ে দেওয়া যাক—মোহাম্মদ নওয়াজ (পাকিস্তান; ৩ ইনিংস ২১৯.০৪), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান; ৫ ইনিংস, ২০৪.১৬), দাসুন শানাকা (শ্রীলঙ্কা; ৫ ইনিংস ১৮৭.৫০), মোহাম্মদ শাহজাদ (আফগানিস্তান; ৪ ইনিংস, ১৮৪.৩১), আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ; ১০ ইনিংস, ১৮১.৬৫)। ছয়ে আছেন বাংলাদেশের এক ক্রিকেটার। তবে তিনি ব্যাটসম্যান নন পেসার। আবু জায়েদ। ২ ইনিংসে ১২ রান করা জায়েদের স্ট্রাইকরেট ১৭১.৪২। তবে রান, ইনিংস-সংখ্যা এবং মাঠে মূল ভূমিকার বিচারে জায়েদকে এ তালিকায় না রাখাই যুক্তিযুক্ত।
সে ক্ষেত্রে এবার বিপিএলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা স্ট্রাইকরেট মাহমুদউল্লাহর। ৭ ইনিংসে ২০১ রান করা জাতীয় দলের এ ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকরেট ১৭০.৩৩। শীর্ষ দশ স্ট্রাইকরেটে বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রয়েছেন শুধু মাহমুদউল্লাহ। এরপর ১১তম স্থানে আরেক বাংলাদেশি, তিনিও স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নন পেসার—মাশরাফি বিন মুর্তজা, ৮ ইনিংসে ৮৫ রান করেছেন, ১৬৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে। শীর্ষ কুড়ির মধ্যে এক মাহমুদউল্লাহ ছাড়া জাতীয় দলের আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নেই। ১৪৭.৩৩ স্ট্রাইকরেট নিয়ে ২৩তম মুশফিকুর রহিম (১৩ ইনিংসে ৪৭০ রান)। শীর্ষ ত্রিশ বিবেচনায় নিলে যোগ হবে নাজমুল হোসেনের নাম (১০ ম্যাচে ১৪৫.২৮ স্ট্রাইকরেটে ৩০৮ রান)।
২০১২ সালে বিপিএল শুরু হওয়ার পর চলতি সংস্করণের এ পথ পর্যন্ত দেশি ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেট দেখলেও হতাশ হতে হবে। (ন্যূনতম ১২৫ বল খেলেছেন) শীর্ষ দশ তো দূরের কথা শীর্ষ ত্রিশের তালিকায়ও নেই কোনো বাংলাদেশি! ৮০ ইনিংসে ১৩৩.৮৬ স্ট্রাইকরেটে ২২৫৩ রান করা মুশফিক ৩১তম। শীর্ষ চল্লিশের মধ্যে মুশফিকই একমাত্র বাংলাদেশি। মাশরাফি ৪২তম ও সাকিব আল হাসান ৪৩তম (৭৫ ইনিংসে ১২৯.২৯ স্ট্রাইকরেটে ১৪৮৩ রান)।
বাংলাদেশ জাতীয় দলে ‘পাওয়ার হিটার’ না থাকার আক্ষেপটা এখনো কাটেনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির সেরা টুর্নামেন্ট হিসেবে স্বীকৃত বিপিএল থেকে এ খরা ঘোচানোর আশা করেন অনেকে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় তাহলে ‘পাওয়ার হিটারে’র জন্য আক্ষেপ বাড়বেই।