৪৬০ রানের পরও এটা শুধু মেহেদীর ম্যাচ
>
বিপিএলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নতুন করে গড়ল চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসই এর চেয়ে বেশি রান দেখেছে মাত্র ১১টি ম্যাচে
২৩৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সে লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে একটুর জন্য পারেনি কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। ৭ উইকেটে ২২২ রান তুলে থেমেছে। এমন রান বন্যার ম্যাচেও নায়ক এক পেসার। ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান রানাই কঠিন হয়ে ওঠা এক ম্যাচে চট্টগ্রামকে জয় এনে দিলেন।
১৫তম ওভারে যখন হাতে নিলেন মেহেদী হাসান রানা, পুরো ব্যাপারটিই অবিশ্বাস্য ঠেকছিল। একটি ম্যাচে ওভার প্রতি রান এসেছে সাড়ে এগারো করে। এক দল ২৩৮ রান তোলার পর অন্য দল ১৪ ওভারেই তুলেছে ১৫১ রান। আর সেখানে এই বাঁহাতি পেসারের নামের পাশে লেখা ২-১-১! দুই ওভারে ১ রান দেওয়া রানার স্পেলটি সরিয়ে রাখলে ম্যাচের ওভার প্রতি রান ১২.১২৫, আর রানার নিজের ০.৫!
এটুকুই যথেষ্ট এমন এক ম্যাচে এক বোলারকে সবার সেরা করে দেওয়ার। কিন্তু রানার বোলিং ফিগার তো পুরোপুরি দেওয়া হয়নি এখনো। দুই ওভার শেষে রানার নামের পাশের পুরো ফিগারটি হলো ২-১-১-৩! প্রথম স্পেলে প্রথম বলে এক রান দিয়েছিলেন রানা। এর পরের আট বলে তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন কোনো রান না দিয়ে, পরের তিন বলেও দেননি কোনো রান। ২৩৯ রানের লক্ষ্যে নামা একটি দল এরপরই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়তে পারত।
কিন্তু ডেভিড মালান ও দাসুন শানাকা সেটা হতে দিচ্ছিলেন না। পাল্টা আক্রমণে নেমে বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার পণ করেছিলেন তারা। নাসির হোসেন, কেশরিক উইলিয়ামস, মুকতার আলীদের মাঠের যেখানে ইচ্ছা সেখানে আছড়ে ফেলছিলেন। ফলে ১৪ ওভার শেষে ১৫১ রান তুলে ফেলেছিল। ৩৭ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৮৪ রান তুলে ফেলেছিলেন মালান। ৬ ওভারে ৮৮ রান দরকার কুমিল্লার। দাসুন শানাকা নিজেই তো এর আগে ৩ ওভারে ৭০ রান তুলেছিলেন বিপিএলের শুরুতে। আর আজ ৫ ওভারে ৯২ রান তোলার কীর্তি গড়েছে চট্টগ্রামও।
এমন অবস্থায় আবারও রানার হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। প্রথম বলে এক রান দিলেন শানাকা। দ্বিতীয় বলেই ম্যাচটা অধিনায়কের পকেটে এনে দিলেন রানা। তাঁকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে চ্যাডউইক ওয়ালটনের হাতে বল তুলে দিলেন মালান। ম্যাচটা আক্ষরিক অর্থেই শেষ হয়ে গেল তখন। সে ওভারে আরও গোটা চারেক রান দিলেন, তবু বোলিং ফিগারের পাশ থেকে বিস্ময়সূচক চিহ্ন তোলা গেল না, ৩-১-৬-৪!
দাসুন শানাকা এরপরও চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু মুকতারের বলে বোল্ড হয়ে শানাকাও (৩৭) আউট হয়ে গেলেন। শেষ ২ ওভারে ৪৭ রান দরকার ছিল কুমিল্লার। সে ওভারেই নাটক আগের তিন ওভারে ছয় রান দেওয়া রানা প্রথম বলে এক রান দিলেন। পরের বলে আবু হায়দার প্রথমবারের মতো আজ রানাকে সীমানা ছাড়া করলেন। সে বিস্ময় কাটিয়ে ওঠার আগেই পর পর দুই বলে বিশাল দুই ছয়! পঞ্চম বলে চার! শেষ বলে এক রান। ২২ রানের এক ওভারে নাটক জমে উঠল আবার। শেষ ওভারে দরকার ২৫ রান। নিজের বোলিংয়ে চট্টগ্রামের ইনিংসের শেষ ওভারে এ রানই দিয়েছেন আবু হায়দার।
শেষ ওভারে স্পিনার এল বোলিংয়ে। কিন্তু প্রথম দুই বলে ব্যাট লাগাতেই পারেননি আবু হায়দার। ৪ বলে দরকার ২৫ রান। পরের বলে চার মারলেন আবু হায়দার, গাণিতিকভাবেও ম্যাচের মীমাংসা শেষ হয়ে গেল। শেষ তিন বলে ৪ রান এল। ২৩৮ রান তাড়া করতে নেমে ১৬ রানে হারল কুমিল্লা।