মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ যখন ফেসবুক
>বাংলাদেশ দলের প্রায় সবাই ফেসবুকে সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবাচক দিক যেমন আছে, নেতিবাচক দিকও কম নয়। বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের সতর্ক থাকতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে, সতীর্থদের এ বার্তা দিচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি
বিশ্বকাপের আগেই কী একটা তর্ক-বিতর্ক হয়ে গেল জার্সি নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে রীতিমতো যুদ্ধই হয়ে গেল এ ইস্যুতে। মন্তব্য–পাল্টা মন্তব্য। কেউ প্রথম নকশার পক্ষে, কেউ বদলের পক্ষে। জার্সির পক্ষে-বিপক্ষে রুচিশীল, গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা যেমন ছিল, নিজের মতের সঙ্গে না মিললে ব্যক্তিগত আক্রমণ, গালাগাল, আইডি ‘হ্যাক’ করা—কত কিছু যে হলো! এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেক বিতর্কের জন্ম দিলেন সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির।
বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ গরমই ছিল তিন-চারটা দিন। জার্সি-ঝড় থামার পর এখন জায়গা নিয়েছে আসল ঝড় ‘ফণী’। ফণীর অবস্থান কোথায়, এটির গতিপথ কোন দিকে, নিয়মিত আপডেট মিলছে ফেসবুকে। সময়ের সঙ্গে ফণীও থেমে যাবে। তবে ইস্যু শেষ হবে না। সামনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯, ঘুরেফিরে হয়তো আবারও আলোচনায় চলে আসবে ক্রিকেট। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে পরীক্ষা নেবে প্রতিটি প্রতিপক্ষ। মাশরাফিদের পরীক্ষা নেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও।
দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই সক্রিয় থাকেন ফেসবুকে। দেশের ক্রিকেট নিয়ে কোনো বিতর্ক, সমালোচনা বা নেতিবাচক খবর প্রকাশ হলেই মুহূর্তেই পৌঁছে যায় তাঁদের কাছে। অনেক খেলোয়াড় সমালোচনা ভালোভাবে নিতে পারেন, অনেকে পারেন না। কখনো কখনো আলোচনা-সমালোচনা এতটাই বাজে পর্যায়ে চলে যায়, চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, প্রভাব পড়ে ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সেও। সবচেয়ে বড় উদাহরণ, তামিম ইকবাল। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা ব্যর্থ হচ্ছিলেন বলে ফেসবুকে তাঁকে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছিল, যেভাবে ‘ট্রল’ করা হচ্ছিল, এমনকি তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করা হচ্ছিল—ভীষণ বিপর্যস্তই হয়ে পড়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার।
তামিম পেরেছেন এই ধাক্কা সামলাতে। পেরেছেন দুর্দান্তভাবে ফিরে আসতে। কিন্তু সাব্বির রহমানের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, সেটিতে তাঁর দায় কম নয়! গত জুলাইয়ে ফেসবুকে দুই সমর্থককে অশ্লীল গালাগাল ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের আগে এ বিষয় নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল ফেসবুক। পরে তো বড় শাস্তিই পেলেন। তাঁকে ছয় মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করল বিসিবি। কদিন আগে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা সাংসদ হিসেবে গিয়েছিলেন নড়াইল সদর হাসপাতালে। চিকিৎসকদের না পেয়ে মাশরাফির প্রতিক্রিয়া ও তাঁদের ওএসডি করা নিয়ে কত আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া অন্য কোনো অধিনায়ককে এমন ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি, এটা নিশ্চিত।
ফেসবুকের ইতিবাচক দিক যেমন আছে, নেতিবাচক দিকও কম নয়। বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের যে সতর্ক থাকতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে, সতীর্থদের এ বার্তা দিচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি,
‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের ভালো কিংবা খারাপ খেলতে কখনো সহায়তা করবে না। আমার কাছে মনে হয় এটার দিকে নজর না রাখাই ভালো। আবার এটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো আমিও আছি। কিন্তু এটা আমার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। জানি সাকিবকেও করে না। অন্য কাউকে করতে পারে। যাকে করে সেটা তাকে বুঝতে হবে। এর জন্য টিম রুলস জারি করারও কিছু নেই। যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। যেহেতু অনেক সময় সমস্যা তৈরি করে, এটা থেকে দূরে থাকতে পারলে ভালো। দুটো মাস পুরো মনযোগ বিশ্বকাপে থাকাই ভালো।’