পুরোনো 'অপমান' আর তামিমের অনুপ্রেরণায় নতুন শামসুর
>৪৮,৩৬, ৩৪ *, ২৮ *—শামসুর রহমানের ইনিংসগুলো হয়তো আহমরি কিছু নয়। তবে কুমিল্লা যে শেষ চারে ওঠার দৌড়ে এখন সবচেয়ে এগিয়ে, তাতে শামসুরের মাঝারি ইনিংসগুলো কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। অথচ গত বিপিএলে তাঁকে দল নিয়েও ছেড়ে দিয়েছিল রংপুর রাইডার্স
'এক-দেড় সপ্তাহ পর ওরা আমাকে আর রাখেনি। এটা অবশ্যই অনেক বড় অপমান'—গত বিপিএলের সেই ঘটনাটা বড় ধাক্কাই দিয়েছিল শামসুর রহমানকে।
২০১৭ বিপিএল ড্রাফটে তাঁর প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে শামসুরকে নেয় রংপুর রাইডার্স। রংপুরে সুযোগ পেয়ে ভীষণ খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু সেই 'খুশি'টা মিলিয়ে যেতে সময়ও লাগেনি। কিছুদিন দলে রেখে রংপুর তাঁকে ছেড়ে দেয়। শেষ মুহূর্তে দলে ভিড়িয়েও ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা তাঁকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল, 'আমি বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণে খেলেছি (৬ টেস্ট, ১০ ওয়ানডে, ৯ টি-টোয়েন্টি। বা যদি নাও খেলতাম, ওরা যে কাজটা করেছে এটা অবশ্যই দুঃখজনক। যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আর ভাবি না।'
ভাবেন না, তবে মনে মনে একটা জেদ তো কাজ করেই। সেই জেদ থেকে শামসুর নিজেকে আবার প্রস্তুত করেছেন। সেটির ফলও পাচ্ছেন এই বিপিএলে। ইনিংসগুলো হয়তো বড় নয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস যে শেষ চারে ওঠার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে, তাতে শামসুরের মাঝারি ইনিংসগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শামসুর ভালো খেলেছেন, এমন ম্যাচ কুমিল্লা এখনো হারেনি। ৬ ম্যাচে ৪০.৫০ গড়ে করেছেন ১৬২ রান। স্ট্রাইকরেটটাও বলার মতো—১৩২.৭৮।
টুর্নামেন্টে ভালো করতে শামসুর যে প্রস্তুতির কথা বললেন, সেটি নেওয়া কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না তাঁর, 'নিজের ব্যাটিং টেকনিক, ফিটনেস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি। নিজের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের প্রস্তুত হতে কতটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় নিশ্চয়ই জানেন। জাতীয় দল, একাডেমি দল, যুব দল ব্যস্ত থাকলে বিসিবির মাঠ ব্যবহার করা যায় না। খুব ভোরে বা সবার শেষ হয়ে গেলে কাজ করেছি। সবার অনুশীলন শেষ হলে কিউরেটর গামিনি আমাকে যে ব্যাটিং করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, সে জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।'
শামসুর বেশি কৃতজ্ঞ তামিম ইকবালের প্রতি। বাংলাদেশ ওপেনারের আগ্রহেই ড্রাফট থেকে শামসুরকে নিয়েছে কুমিল্লা। টুর্নামেন্টে ভালো খেলে তামিমের আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন শামসুর, 'তামিম যদি আমার ওপর আস্থা না রাখত তাহলে হয়তো এ বিপিএল নাও খেলতে পারতাম। আস্থা আছে সবারই, কিন্তু সঠিক সময়ে আস্থা রাখাটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। তামিমের কাছে কৃতজ্ঞ যে সে এত বড় টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ করে দিয়েছে আমাকে। চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব তার আস্থার প্রতিদান দিতে।'
পুরোনো অপমানের ক্ষত আর তামিমের আস্থা নতুন করে চেনাচ্ছে শামসুরকে। ছন্দটা শুধু ধরে রাখলেই হয়।